বেঙ্গালুরুর অনুশীলনে একাগ্র সুনীল ছেত্রী। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
বৃষ্টি পড়েই চলেছে অবিরাম। অঝোরে। অন্ধকার নেমে আসা এ রকম বিকেলে তিনিও করে চলেছেন বিরামহীন অনুশীলন। গোলে বল মেরেই চলেছেন। আলো জ্বলে উঠল যুবভারতীর প্র্যাক্টিস মাঠে। সতীর্থরা সবাই ঢুকে গিয়েছেন ড্রেসিংরুমে। তাতে কী, শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর নানা কসরত করেই চলেছেন দেশের সেরা স্ট্রাইকার। কঠোর অনুশীলন শেষে সুনীল ছেত্রী বলে দিলেন, ‘‘গতবার ফাইনালে উঠেও আমরা এই ট্রফিটা পাইনি। সেই আক্ষেপটা রয়েছেই। এ বার তার চেয়ে ভাল কিছু করতেই হবে। বেঙ্গালুরু খেলতে নামে ট্রফি জিততে। ট্রফিটা এ বার পেতে চাই।’’
চৌত্রিশে পৌঁছেও ক্লাব ও দেশীয় ফুটবলে সুনীল কেন এত সফল, এ দিন তাঁর দু’ঘণ্টার অনুশীলন এর হাতে-গরম উদাহরণ হতে পারে। ভাইচুং ভুটিয়াকে পিছনে ফেলে জাতীয় দলের জার্সিতে দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা সেই সুনীল খেলবেন উল্টো দিকে। তাঁর সঙ্গী আবার ভেনেজ়ুয়েলার হয়ে বিশ্বকাপ এবং কোপা আমেরিকায় খেলা নিকোলাস ফেদোর ফ্লেরেস (মিকু)।
তবুও রাতের ঘুম নষ্ট করতে নারাজ স্টিভ কপেল। বেঙ্গালুরু এফ সি-র সেরা দুই অস্ত্র সুনীল এবং মিকু সম্পর্কে এটিকে কোচ বলে দিলেন, ‘‘সুনীল এবং মিকু দু’জনেই বেঙ্গালুরুর প্রধান অস্ত্র। ওরা ভাল খেলছে। আমাদের প্রধান অস্ত্র যারা তারাও কিন্তু ভাল খেলতে শুরু করেছে। আমরা ঘরের মাঠে দ্বিতীয় জয় পাওয়ার জন্যই নামব।’’ যুবভারতীতে চেন্নাইয়িন এফ সি-কে হারিয়ে এটিকে কোচের যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, কথা বললেই বোঝা যায়। এ বারের আই এস এলে তিন ম্যাচে তিন গোল করে ফেলেছেন সুনীল। মিকুর সমসংখ্যক ম্যাচে দু’গোল। গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু, উদান্ত সিংহ, কেন লুইসের মতো জাতীয় দলের জনা ছয়েক ফুটবলার আজ খেলবেন ‘ব্লুজ’-এর হয়ে। তা সত্ত্বেও কপেলের মুখ থেকে বেরিয়েছে, ‘‘পুরো বেঙ্গালুরু দলকেই আমরা সমীহ করছি। ধারাবাহিক ভাবে ওরা সফল। কিন্তু তা বলে রাতের ঘুম নষ্ট করতে রাজি নই। ওদের আটকানোর শক্তি আমাদের আছে। সে রকম রণনীতিই তৈরি করছি আমরা।’’
আরও পড়ুন
শর্ত না মানায় জরিমানা ইস্টবেঙ্গলের
দ্বৈরথ: ঘরের মাঠে আইএসএলের লড়াইয়ে নামার আগে প্রস্তুতিতে এটিকের দুই অস্ত্র কালু উচে ও লানজারোতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
বেঙ্গালুরু এবং এটিকে— দু’দল আজ মুখোমুখি হওয়ার আগে কিন্তু কার্যত এক বিন্দুতে দাঁড়িয়ে। বেঙ্গালুরু তিন ম্যাচে সাত পয়েন্ট পেয়েছে। আর শেষ তিন ম্যাচে কালু উচেরাও পেয়েছেন সমসংখ্যক পয়েন্ট। সেটা ভাবাচ্ছে গত বারের রানার্স বেঙ্গালুরুকে। ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক সুনীল এবং কোচ কার্লোস কুদরতের কথায় তা পরিষ্কার। সুনীল যেমন বলে দিলেন, ‘‘এটিকে ক্রমশ উন্নতি করছে। জানি, ওরা আমাদের চ্যালেঞ্জ জানাতে তৈরি।’’ আর বেঙ্গালুরুর প্রাক্তন কোচ আলবার্তো রোকার দীর্ঘ দিনের সহকারী ও বর্তমানে সুনীলদের কোচ কার্লোসের মন্তব্য, ‘‘মাঝখানে জাতীয় দলের খেলা থাকায় প্রতিযোগিতা বন্ধ ছিল। সেই সুযোগে অনুশীলন করে এটিকে দারুণ উন্নতি করেছে। ওদের মধ্যে জেতার একটা খিদে তৈরি হয়েছে।’’
আরও পড়ুন
সনির মুখে এখন এনরিকের প্রশংসা
খাতায়-কলমে বেঙ্গালুরু যথেষ্ট শক্তিশালী। এই ম্যাচে তারা ফেভারিটও। দু’তিন বছর টানা একই দল ধরে রেখেছে দক্ষিণ ভারতের চূড়ান্ত সফল এই ক্লাব। এটাই তাদের আসল শক্তি এবং সাফল্যের রসায়ন। তবে তাদের গত চার বছরের অন্যতম প্রধান অস্ত্রকে এ বার ধরে রাখতে পারেনি বেঙ্গালুরু। তাদের বিভিন্ন ট্রফি জেতানো স্টপার জন জনসন এটিকেতে চলে এসেছেন। এবং আজ পুরনো দলের গোল আটকাতে এটিকের প্রধান অস্ত্র কিন্তু জনসনই। সেটা ভাবাচ্ছে ‘সুনীল অ্যান্ড কোম্পানি’কে। সত্যিই তো সুনীল, মিকুদের তাঁর চেয়ে বেশি কে-ই বা চেনে? চূড়ান্ত পেশাদার কপেল বিপক্ষের উপর চাপ তৈরি করতেই তাই বলে দিয়েছেন, ‘‘জনসন বেঙ্গালুরু সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছে। সুনীলদের লকার রুমের খবর, কী ভাবে খেলতে খেলতে ওরা বদলায়, সব ওর থেকে শুনেছি, সেটা কাজে লাগাব কাল।’’ বলতে বলতেই স্মিত হাসি খেলে যায় এটিকে কোচের মুখে। যা সম্ভবত পৌঁছে গিয়েছে বেঙ্গালুরু শিবিরে। সে জন্যই বাংলার জামাই হয়েও সুনীল বলে দিয়েছেন, ‘‘বাংলা বা দেশের যেখানেই খেলি, লক্ষ্য একটাই। নব্বই মিনিট পর তিন পয়েন্ট নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরা। সেই কাজটা কালও করতে হবে।’’
আইএসএলে এ বার নানা অঘটন ঘটছে। গতবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়িন সবার শেষে চলে গিয়েছে, আর প্রতিবারই লিগ টেবলের শেষে থাকা দল নর্থ ইস্ট হয়ে উঠছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদার। ফলে শেষ চারে যাওয়ার লড়াইয়ে টিঁকে থাকতে চলছে ধুন্ধুমার যুদ্ধ। বুধবারের ম্যাচ তা আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে বাংলার জামাই বনাম কলকাতার লড়াইয়ের আবহে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy