উল্লাস: আলিঙ্গন দুই গোলদাতার। হেনরির গোলের পরে ইউতার অভিনন্দন। রবিবার যুবভারতীতে আই লিগের ম্যাচে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মোহনবাগান ২ • লাজং এফসি ০
বিপর্যয়ের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অবশেষে শাপমুক্তি!
ঠিক আট দিন আগে আই লিগের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ২-৩ হারের যন্ত্রণা নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন দিপান্দা ডিকারা। রবিবার লাজং এফসিকে হারিয়ে যুবভারতীতে এই মরসুমে আই লিগের প্রথম ম্যাচ শুধু জিতল না মোহনবাগান, পয়েন্ট টেবলে পঞ্চম স্থানেও উঠে এল। ছুঁয়ে ফেলল ইস্টবেঙ্গলকে। এই মুহূর্তে ৮ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট লাল-হলুদের। এক ম্যাচ বেশি খেলা মোহনবাগানের পয়েন্টও ১৫। তবে মুখোমুখি সাক্ষাতে এগিয়ে থাকায় চতুর্থ স্থানে ইস্টবেঙ্গল।
আই লিগ টেবলে লাজং সবার শেষে। দলে কোনও বিদেশি নেই। প্রথম একাদশের আট জনই অনূর্ধ্ব-২২ ফুটবলার। অথচ সেই ‘লাস্ট বয়’-দের বিরুদ্ধে গোল পেতে মোহনবাগানকে অপেক্ষা করতে হল ম্যাচের ৪৮ মিনিট পর্যন্ত। নেপথ্যে ডিকা-হেনরি কিসেক্কা যুগলবন্দির ব্যর্থতা।
চব্বিশ ঘণ্টা আগেই লাজং কোচ অ্যালিসন ক্যারাডিন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, মোহনবাগানকে আটকাতে রক্ষণাত্মক ফুটবলকেই অস্ত্র করবেন। এ দিন ম্যাচ শুরু হওয়ার পর থেকেই দেখা গেল, লাজংয়ের নয় জন ফুটবলার নেমে এসেছেন রক্ষণে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ১৬ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান। কিন্তু সামনে একা লাজং গোলরক্ষক ফুরবা লাচেনপাকে পেয়েও গোল করতে পারেননি ডিকা। চার মিনিট পরে ওমর এলহুসেইনির শট বাঁচান লাজং গোলরক্ষক। ৩৯ মিনিটে অবিশ্বাস্য ভাবে গোল নষ্ট করেন হেনরি। এই পরিস্থিতিতে চোট পেয়ে বেরিয়ে গেলেন সৌরভ দাস। দীর্ঘ দিন পরে পরিবর্ত হিসেবে নামা মেহতাব হোসেন যেন বিনা প্রস্তুতিতে পরীক্ষা দিতে বসা ছাত্রের মতো। কী করবেন বুঝতেই পারছিলেন না। আত্মবিশ্বাসের অভাবে একের পর এক মিস পাস করে গেলেন মেহতাব। মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা, ‘‘দীর্ঘ দিন না খেললে মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হয়। মেহতাবকে আরও পরিশ্রম করতে হবে।’’
ছবিটা বদলাতে শুরু করল দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার পরে। লাজং ফুটবলারদের চক্রব্যূহে বন্দি হয়ে থাকা আজহারউদ্দিন মল্লিককে তুলে শেখ ফৈয়জকে নামালেন মোহনবাগান কোচ। বদলে গেল মোহনবাগানও। প্রথমার্ধে ডান দিক থেকে কোনও আক্রমণই করতে পারছিল না মোহনবাগান। ফৈয়জ নামতেই সচল হল ডান প্রান্ত।
ডান দিক থেকে ডানা মেলতে শুরু করলেন ফৈয়জ। বাঁ দিক থেকে ওমর। লাজং ফুটবলারদের কড়া পাহারায় মাঝমাঠে হাসফাঁস করতে থাকা ইউতা কিনোয়াকি যেন মুক্তি পেলেন। মেহতাবও ফিরে পেলেন ছন্দ। ফলশ্রুতি— ৪৮ মিনিটে ইউতার দুরন্ত গোল। পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে তাঁর ডান পায়ের বাঁক খাওয়ানো শট জালে জড়িয়ে যায়।
জাপানি মিডফিল্ডার গত মরসুমে লাজং থেকেই মোহনবাগানে সই করেছিলেন। কিন্তু চোটের জন্য খুব বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি। এই মরসুমেও শুরু দিকে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। সবুজ-মেরুনের অন্দরমহলের কেউ কেউ বলেছিলেন, চোট প্রবণ ইউতাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনও মিডফিল্ডার সই করানো হোক। কিন্তু মোহনবাগান কোচ রাজি হননি। তিনি আস্থা রেখেছিলেন জাপানি মিডফিল্ডারের উপরেই। বলেছিলেন, ‘‘ইউতা প্রচণ্ড লড়াকু। ওর হার না মানা মানসিকতা দলের সম্পদ। ইউতা ঠিক ফিরে আসবে।’’ রবিবাসরীয় শীতের সন্ধ্যায় ইউতার প্রত্যাবর্তনে সব চেয়ে তৃপ্ত শঙ্করলাল-ই।
২৭ বছর বয়সি ইউতার লড়াইয়ের কাহিনি একটা নয়। চলতি বছরের জুন মাসে বিধ্বংসী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল জাপান। ইউতার বাড়িও সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছিল। তিনি তখন বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে রাশিয়ায়। দেশে ফিরে নতুন ভাবে সব গড়ে তুলেছেন ইউতা। রবিবার মোহনবাগানেরও আই লিগ জয়ের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখলেন।
ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে মোহনবাগান কোচ বললেন, ‘‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল এই মরসুমে আই লিগে যুবভারতীতে প্রথম ম্যাচ জেতা। সেটা আমরা করতে পেরেছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মিনার্ভার বিরুদ্ধে জয়টা ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করেছিল।’’
লাজংয়ের মতো লিগ টেবলে সবার শেষে থাকা দলের বিরুদ্ধে কেন ৪৮ মিনিট পর্যন্ত আটকে থাকতে হল? শঙ্করলাল বলছেন, ‘‘লাজংয়ের নয় জন ফুটবলার রক্ষণে নেমে এসেছিল। তা ছাড়া ওদের গোলরক্ষকও দারুণ খেলেছে।’’ ডিকা-হেনরির গোলনষ্টের প্রতিযোগিতা? মোহনবাগান কোচের জবাব, ‘‘গোল নষ্ট করার প্রবণতা খুব খারাপ। তবে সব সুযোগ কাজে লাগানো যায় না।’’
ইউতার মতোই এ দিন ঘুরে দাঁড়ালেন আর এক জন। তিনি, হেনরি। ৬০ মিনিটে গোল করে ব্যর্থতা ঢাকলেন তিনি। ম্যাচের সেরাও হলেন।
আট দিন পরে যুবভারতীতে ফের উৎসবের রং সবুজ-মেরুন!
মোহনবাগান: শঙ্কর রায়, অরিজিৎ বাগুই, এজে কিংসলে, লালচুয়ান কিমা, অভিষেক আম্বেকর, আজহারউদ্দিন মল্লিক (শেখ ফৈয়জ), সৌরভ দাস (মেহতাব হোসেন), ইউতা কিনোয়াকি (ড্যারেন ক্যালডেইরা), ওমর এলহুসেইনি, হেনরি কিসেক্কা ও দিপান্দা ডিকা।
লাজং এফসি: ফুরবা লাচেনপা, রাকেশ প্রধান (অ্যালেন লিংডো), খাংসিলাং খোংসিট, আইবানভা ধোলিং, লালরোহুলা, কিটবোংলাং পালে, হার্ডি নংব্রি (নাওরেম সিংহ), স্যামুয়েল লিংডো (সিন স্টিভনসন), ফিরাংকি ভুয়াম ও স্যামুয়েল লালমুনপুইয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy