স্রষ্টা: ফ্রেডরিক ব্যান্টিং ও চার্লস বেস্ট (ডান দিকে)। ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স
ইনসুলিন আমাদের শরীরেরই এক হরমোন। প্রাণিদেহের অগ্ন্যাশয় থেকে ক্ষরিত হয়ে রক্তে গ্লুকোজ়ের মাপ ঠিক রাখে। রক্তে গ্লুকোজ় নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি হয়ে গেলে, তাকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তরিত করে পাঠিয়ে দেয় যকৃৎ আর পেশিতে। আর এই বছরেই আমরা পেরিয়ে এসেছি ‘ইনসুলিন’-এর শতবর্ষ। পাঠকবন্ধুরা হয়তো ভাবছেন, সে কী কথা! শতবর্ষ ব্যক্তির হতে পারে, প্রতিষ্ঠানের হতে পারে, কোনও যুগান্তকারী ঘটনা বা আবিষ্কারের হতে পারে, প্রাণিদেহের কোনও একটি হরমোনের আবার শতবর্ষ হয় কী করে? সে কাহিনি শোনাতে গেলে শুরু করতে হবে ইনসুলিনের সঙ্গে যে অসুখটির নাম অঙ্গাঙ্গি জড়িত, সেই অসুখ, অর্থাৎ ডায়াবিটিসের ইতিহাস থেকে।
‘ডায়াবিটিস’— এই কঠিন রোগটির নামকরণ হয়েছিল খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় বা তৃতীয় শতকে। এই গ্রিক শব্দটির অর্থ ‘সাইফন’। কেন এমন নাম? ‘বহুমূত্র’-এর কারণে এই রোগ বারবার মানুষের শরীর থেকে জল টেনে বার করে দিচ্ছে, তাই এই নাম। আবার এই মূত্রে অত্যধিক মিষ্টত্ব থাকায় কয়েক শতক পর আয়ুর্বেদাচার্য চরক এবং সুশ্রুত এই রোগের নাম দিলেন ‘মধুমেহ’, অর্থাৎ মূত্রে মধু। আর এরও বহু আগে, খ্রিস্টের জন্মের প্রায় দেড় হাজার বছর আগেকার মিশরীয় প্যাপিরাস পুঁথিতে রয়েছে এই রোগের নিখুঁত লক্ষণ-বর্ণনা।
কিন্তু দীর্ঘ কাল ধরে চেনা-পরিচিত হলেও রোগটির চিকিৎসা সম্পর্কে কোনও দিশা ছিল না কারও কাছে। আজ থেকে একশো বছর আগেও ডায়াবিটিস ধরা পড়লে ডাক্তারবাবুরা গম্ভীর মুখে বলতেন, “ওষুধ তো তেমন কিছু নেই, শুধু কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।” কেমন সে সব নিয়ম? না, রক্তে যে হেতু শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, তাই খাবার থেকে তাকে ছেঁটে ফেলতে হবে। মানে, চিনি, গুড়, মিষ্টান্ন তো নয়ই, চাল-গমের মতো শস্য, আলু-কুমড়োর মতো আনাজপাতি, ফল সবেতেই নিষেধ। বলা হত, দৈনিক ৪৫০ ক্যালোরির বেশি গলাধঃকরণ করা চলবে না। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই ভয়ানক অপুষ্টি। তার পর রোগ অনিবার্য থাবা বসাত কিডনিতে, যার উপর ন্যস্ত শরীরে রক্ত শোধনের দায়িত্ব। এই বার তার উপর চাপ কমাতে তখন কোপ পড়ত পানীয়ে। যাঁদের অল্প বয়স থেকে ডায়াবিটিস (টাইপ-১), তাঁরা এই নির্মম চিকিৎসা সামলে বাঁচতে পারতেন না বেশি দিন। মধ্যবয়সে শুরু হওয়া ডায়াবিটিস রোগীরও (টাইপ-২) আয়ু দ্রুত কমে আসত।
অবশেষে সামান্য আশার আলো দেখা গেল ১৮৮৯ সালে। ঘটনাটি অনেকটা কাকতালীয়। জার্মানির দুই গবেষক, অস্কার মিংকফুস্কি এবং জোসেফ ভন মেরিং অগ্ন্যাশয় নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছিলেন। তাঁরা একটি সুস্থ কুকুরের অগ্ন্যাশয় কেটে বাদ দিয়ে দেখলেন, তার তেষ্টা এবং প্রস্রাব দুই-ই অস্বাভাবিক রকম বেড়ে গিয়েছে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সে অনবরত মেঝে ভাসিয়ে চলেছে। অগ্ন্যাশয়ের সঙ্গে রেচনতন্ত্রের কী সম্পর্ক বুঝতে না পেরে দুই বিজ্ঞানী যখন ধাঁধায়, তখন তাঁদের এক সহকারী বিরক্ত হয়ে খবর দিলেন, গবেষণাগারের মেঝেতে থইথই প্রস্রাব শুকিয়ে চ্যাটচেটে হয়ে যাচ্ছে আর তাতে মাছি ভনভন করছে। মিংকফুস্কি আর মেরিং কালবিলম্ব না করে কুকুরটির প্রথমে মূত্র এবং তার পর রক্ত পরীক্ষা করলেন। দু’টিতেই গ্লুকোজ়ের মাত্রা অস্বাভাবিক বেশি। বোঝা গেল, যাকে এত দিন নিছকই হজমে সাহায্যকারী উৎসেচকের উৎস বলে মনে করা হত, সেই অগ্ন্যাশয়ের আরও গুণ আছে। সে রক্তে দ্রব গ্লুকোজ়কে কোষের ভিতরে ঢুকতে সাহায্য করে, কোষ তার থেকে শক্তি তৈরি করে; ফলে রক্তে শর্করার মাত্রায় সাম্য থাকে, শরীরের প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ় বেরিয়ে যাওয়া আটকায়। কিন্তু প্রশ্ন উঠল, সেই জাদু-রাসায়নিকটি তা হলে অগ্ন্যাশয়ের কোথায় তৈরি হচ্ছে?
বিজ্ঞানীদের মনে পড়ল সে দিন থেকে আরও দুই দশক আগের কথা। সে সময় এক তরুণ জার্মান গবেষক, পল ল্যাঙ্গারহ্যান্স অগ্ন্যাশয়ের আণুবীক্ষণিক গঠন নিয়ে এক গবেষণাপত্রে জানিয়েছিলেন, এতে পরিচিত অগ্ন্যাশয়-কোষের বাইরে আরও এক ধরনের কোষের ঝাঁক রয়েছে। সেই কোষের কী কাজ, সে সম্পর্কে কোনও ধারণা না থাকায় বাইশ বছর বয়সি সেই বিজ্ঞানীর পর্যবেক্ষণ নিয়ে তখন কেউ তেমন মাথা ঘামাননি। পরিচিত অগ্ন্যাশয়-কোষ পাচক রস, অর্থাৎ হজম-সহায়ক উৎসেচক তৈরি করে সে কথা জানাই ছিল, এখন মিংকফুস্কিদের পরীক্ষণের পর বিজ্ঞানীরা বুঝলেন, তা হলে ল্যাঙ্গারহ্যান্স যে কোষের সন্ধান দিয়েছিলেন, সেখানেই নিশ্চয়ই রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখা রাসায়নিকটি তৈরি হয় এবং হরমোন হিসেবে রক্তে মেশে। রাতারাতি সেই বিশেষ কোষগুচ্ছের নাম দেওয়া হল ‘ল্যাঙ্গারহ্যান্সের দ্বীপপুঞ্জ’ বা ‘আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স’। আর সেই হরমোনটির নাম দেওয়া হল ‘ইনসুলিন’, অর্থাৎ বাংলায় যাকে বলা যেতে পারে, দ্বীপ-প্রোটিন (কারণ ল্যাটিন ‘ইনসুলা’ শব্দের অর্থ দ্বীপ)।
কিন্তু ইনসুলিনের উৎস জানার পরেও এই রাসায়নিকটিকে আলাদা করা যাচ্ছিল না কিছুতেই। যখনই কুকুর বা গবাদি পশুর দেহ থেকে অগ্ন্যাশয় কেটে বার করা হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে, তার থেকে নিঃসৃত পাচকরস নিজেরাই অগ্ন্যাশয় কোষের অনেকটা হজম করে ফেলছে; ইনসুলিনের অস্তিত্ব আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষ ভাগে স্প্যানিশ ফ্লু পৃথিবীতে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে কমবেশি পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণ। এবং বিজ্ঞানীরা স্বীকার করছেন, এই মহামারি রোখা গিয়েছে ভাইরাসের বিরুদ্ধে স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠায়; এতে তাঁদের কৃতিত্ব প্রায় শূন্য। এখন যদি ইনসুলিন চিনে নেওয়ার পরেও তাকে বহু যুগের পুরনো এক মারণ রোগে প্রয়োগ করা না যায়, তা হলে তো চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের আর মুখ দেখানোর জায়গা থাকবে না!
এমন সময় টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিভাগের প্রধান, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী জন জেমস রিকার্ড ম্যাকলিওডের কাছে এলেন কানাডার এক তরুণ চিকিৎসক, ফ্রেডরিক ব্যান্টিং। মাত্র বছর পাঁচেক হল তিনি মেডিক্যাল কলেজ থেকে বেরিয়েছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় দেশের সেনাবাহিনীতে কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করে ব্রিটিশ সরকারের মিলিটারি ক্রস অর্জন করেছেন। তার পর তেমন ভাবে পসার জমাতে না পেরে টরন্টোর এক মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষকতা করছেন আর ইনসুলিন নিয়ে লেখাপড়া করছেন। ৩১ অক্টোবর ১৯২০, রাত দুটো নাগাদ তিনি এমন এক স্বপ্ন দেখেন যাতে তাঁর মনে হয়, তিনি স্তন্যপায়ী প্রাণীর অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন পৃথক করতে পারবেন!
কী করে? ব্যান্টিং এক আপাতসরল পরিকল্পনার কথা জানালেন অধ্যাপক ম্যাকলিওডকে। তিনি ভেবেছেন, প্রাণীটিকে না মেরে যদি তার অগ্ন্যাশয়ের পাচক রস পরিবহণকারী সব নালি বেঁধে দেওয়া যায়, তা হলে কিছু সপ্তাহের মধ্যেই বিপরীত প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় অগ্ন্যাশয়ের উৎসেচক উৎপাদনকারী কোষগুলি কাজ না করে করে অকেজো হয়ে যাবে, কিন্তু হরমোন ক্ষরণে কোনও নালির প্রয়োজন না থাকায়, ইনসুলিনের উৎস ল্যাঙ্গারহ্যান্স দ্বীপপুঞ্জের কোষগুলি সতেজ থাকবে। এ বার কুকুরের অপারেশন করে অগ্ন্যাশয় বার করে নিলে তার থেকে ইনসুলিন পাওয়া যাবে, অন্য পাচক রস এসে আর গুলিয়ে দেবে না। সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ এক গবেষকের কথা শুনে পোড়খাওয়া শারীরবিজ্ঞানী ম্যাকলিওডের প্রত্যয় জন্মাল। তিনি ব্যান্টিংকে গবেষণাগারে যথেষ্ট জায়গা দিলেন, দশটি কুকুর দিলেন আর সহকারী হিসেবে এক ছাত্রকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। দুই সহপাঠী এডওয়ার্ড ক্লার্ক নোবল এবং চার্লস বেস্ট নিজেদের মধ্যে টস করে ঠিক করলেন, ব্যান্টিং-এর সহকারী হবেন বেস্ট। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ১৯২১-এর গ্রীষ্মে ব্যান্টিং কাজ শুরু করলেন। দেখা গেল, ব্যান্টিং-এর পরিকল্পনা একেবারে নিখুঁত। কয়েক মাসের মধ্যেই কুকুরের কর্তিত অগ্ন্যাশয় থেকে তাঁরা ইনসুলিন পৃথক করে ফেললেন।
বিভাগের অন্যেরা যতই সেই নির্যাস দেখে ‘ঘন খয়েরি বিষ্ঠা’ বলে নাক সিঁটকোন, সেটি প্রয়োগ করেই ব্যান্টিং এবং বেস্ট একটি ডায়াবিটিসে মুমূর্ষু কুকুরকে সুস্থ করে তুললেন। তার রক্তে গ্লুকোজ়ের মাত্রা স্বাভাবিক হল। ৭০ দিন পর নির্যাসের ভাঁড়ার শেষ হল আর কুকুরটিও মারা গেল।
চার দিকে সাড়া পড়ে গেল। এই সময়ে স্কটল্যান্ড গিয়েছিলেন ম্যাকলিওড। ফিরে সব শুনে তিনি নিজে গবেষণার হাল ধরলেন। সহকারী হিসেবে নিয়ে এলেন তাঁর সহকর্মী রসায়নবিদ জে বি কলিপকে। কলিপ কুকুর ও গবাদি পশুর অগ্ন্যাশয় থেকে সংগ্রহ করে আনা ইনসুলিন পরিশোধিত করলেন। বাছা হল লিয়োনার্ড টমসন নামে টাইপ-১ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত কানাডার এক ১৪ বছরের বালককে, খাওয়ার নিয়মকানুন মেনে তখন তার ওজন কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৯ কেজি। ১৯২২ সালের ১১ জানুয়ারি তার উপর পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করা হল কুকুরের ইনসুলিন। টমসনের সামান্য অ্যালার্জি দেখা গেল, ছুঁচ বেঁধানোর জায়গায় একটু পুঁজ জমল। কিন্তু আসল খবর হল, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তার রক্তের অসম্ভব বেশি মাত্রার গ্লুকোজ় বশ মেনে চলে এল প্রায় স্বাভাবিক মাত্রায়। এর কিছু দিনের মধ্যে তার কিডনিও ফিরল সুস্থতার পথে।
সামাজিক প্রতিপত্তির কারণে টমসনের চেয়েও বেশি প্রচার পেল এলিজ়াবেথ ইভান্স হিউজ নামে এক ১৪ বছরের বালিকা। তার বাবা নিউ ইয়র্কের গভর্নর, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক প্রার্থী। ১৯১৯ সালে এলিজাবেথের টাইপ-১ ডায়াবিটিস নির্ণীত হয়। ১৯২২ সালে যখন তাকে ইনসুলিনের প্রথম ডোজ় দেওয়া হচ্ছে তখন খাবারের সুকঠোর বিধিনিষেধ মানতে মানতে তার ওজন দাঁড়িয়েছিল ২০ কিলো ৪০০ গ্রামের কাছাকাছি। তার পরের পরিবর্তন শুধু স্বপ্ন। আমেরিকার প্রথিতযশা চিকিৎসক ফ্রেডরিক অ্যালেন এই পরিবর্তন প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “যেন প্রাচীন বেলজিয়াম অঞ্চলের চিত্রকলা, যেখানে মন্বন্তরের পর নবজন্ম দেখানো হচ্ছে।”
ইনসুলিন আবিষ্কার সারা বিশ্বে এমন এক স্বস্তির বাতাবরণ তৈরি করে যে, মাত্র এক বছরের মাথায় সুইডিশ আকাডেমি ব্যান্টিং এবং ম্যাকলিওডকে ১৯২৩ সালের নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করেন। ব্যান্টিং খোলাখুলি জানান, তাঁর সহকারী বেস্টকেও এই পুরস্কারের শরিক করা উচিত ছিল এবং তিনি তাঁর পুরস্কার বাবদ প্রাপ্ত অর্থমূল্যের অর্ধেক বেস্টের সঙ্গে ভাগ করে নেন। এই সৌজন্যের পথে ম্যাকলিওডও পিছিয়ে থাকেননি। তিনিও তাঁর প্রাপ্য সহকর্মী কলিপের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন।
তার পরবর্তী এই একশো বছর ধরে ইনসুলিনের দীর্ঘ যাত্রাপথ— মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্রিয়াশীল ইনসুলিন, প্রায় ব্যথাহীন ছুঁচের ইনসুলিন পেন, শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণকারী মুখে খাওয়ার ওষুধ, অন্য প্রাণীর উপর নির্ভর না করে জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম মানব ইনসুলিন, ইনসুলিন ইনহেলার, স্বয়ংক্রিয় ইনসুলিন পাম্প। সে সবের বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়েই বলা যায়, আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে ডায়াবিটিস চিকিৎসায় ইনসুলিনের উপযোগিতা ক্রমবর্ধমান। নিত্য পরিবর্তনশীল ওষুধ-দুনিয়ায় একশো বছর ধরে কোনও ওষুধের একই রকম প্রাসঙ্গিক থেকে যাওয়ার বিরল কৃতিত্ব ইনসুলিনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy