কিডনিকে সুস্থ রাখুন।
অতি আধুনিক জীবনযাপনের মোহে ভাল থাকার আবশ্যিক শর্ত ভুলে গেলে অন্য আরও অনেক সমস্যার মতো কিডনির সমস্যাও দেখা দিতে পারে যখন–তখন৷ কাজেই খাওয়া–দাওয়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন খুঁটিনাটি ব্যাপারের দিকে নজর দিন৷
কিডনির সমস্যাকে আমরা অনেক সময়ই প্রাথমিক অবস্থায় গুরুত্ব দিই না আর এতেই সমস্যা বাড়ে। শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী জল খাওয়া বা স্বাস্থ্যকর খাবার ডায়েটে রাখার কথা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু জানি না এমন কিছুও, যার জেরে শরীরে বাসা বাঁধথে পারে কিডনির নানা সমস্যা।
কী ভাবে কিডনিকে সুস্থ রাখবেন তা নিয়ে কিছু জরুরি কৌশলের কথা জানাচ্ছেন কিডনি বিশেষজ্ঞ পিনাকি মুখোপাধ্যায়৷
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমানোর নেশায় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেবেন না৷ খাবারের মোট ক্যালোরির ৬০–৬৫ শতাংশ যেন কার্বোহাইড্রেট থেকে আসে৷ সারা দিনে ছোট এক বাটি ভাত, ৩–৪টে রুটি বা চিড়ে–মুড়ি–খই এবং দু’–তিন রকম শাকসব্জি–ফল খান৷ এখন যতটা নুন খান তার চেয়ে ২ গ্রাম কম খান৷ দিনে এক চা–চামচের বেশি নয়৷ খাবার বানান কম নুনে৷ প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান৷ কিডনির রোগের আশঙ্কা প্রায় ২০ শতাংশ কমবে৷ বয়স ৪০–এর কাছে এলে ওজনের ১০ শতাংশ–র বেশি প্রোটিন খাওয়া ঠিক নয়৷ অর্থাৎ ওজন ৬০ কেজি হলে প্রোটিন খাবেন ৬০ গ্রামের মতো৷ তার জন্য কী খেতে হবে দেখুন৷
১০০ গ্রাম মাছ–মাংস–ডালে ২০ গ্রামের মতো প্রোটিন থাকে৷ ৫০ গ্রাম ওজনের ডিমে থাকে ৬–৬.৫ গ্রাম৷ ১০০ মিলি দই বা দুধে ৪ গ্রাম৷ অর্থাৎ সকালে ডিম বা দুধ/দই/ছানা/চিজ খেতে পারেন৷ ডাল না খেলে দুপুরে ৫০ গ্রামের দু–টুকরো মাছ বা মাংস আর ডাল–পনির বা দই খেলে এক টুকরো খান৷ রাতেও একই নিয়ম৷ সকালে অল্প ছোলা বা মুগ ভেজানো খেতে পারেন৷ বিকেলেও ছোলা–বাদাম চলতে পারে৷ হ্যাম, সসেজ, বেকন, রাজমা, সয়াবিন, টোফু সবই প্রোটিন৷ কাজেই একটা খেতে গেলে আরেকটা একটু কমিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে৷
ছবি: শাটারস্টক।
জাঙ্ক ফুড না খাওয়াই ভাল৷ নিতান্ত খেতে হলে সপ্তাহে এক–আধ দিনের বেশি নয়৷ কারণ এতে বেশি প্রোটিন, ফ্যাট, প্রিজারভেটিভ ও নুন থাকে, যার প্রতিটিই কিডনির জন্য ক্ষতিকারক৷ ওজন বাড়তে দেবেন না৷ যত বেশি ওজন তত কিডনির ক্ষতি৷ ৬০ কেজি ওজনের একজন মানুষের তুলনায় ১২০ কেজি ওজনের মানুষের কিডনি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ৷ কিডনি ভাল থাকে পরিমাণ মতো জল খেলে৷ কী ধরনের কাজ করেন, শরীরের অবস্থা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে দিনে আড়াই–তিন লিটার থেকে ৪ লিটার জল খান৷ এর কম খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে, বেশি খেলে অতিরিক্ত খাটুনি পড়ে কিডনির উপর৷
ছবি: শাটারস্টক।
ব্যায়াম ও অন্যান্য নিয়ম
মডেলিং বা অভিনয় জগতে না থাকলে দিনে ৩০–৪৫ মিনিট জোর কদমে হাঁটা, সাঁতার বা সাইকেল চালানোই যথেষ্ট৷ সঙ্গে ১৫–২০ মিনিট ওজন নিয়ে ব্যায়াম৷ খেলাধুলা করতে পারলে আরও ভাল৷ এতে শরীর–মন দুই–ই ভাল থাকে৷ সঙ্গে মিনিট ২০ যোগা করুন৷
তবে শরীরের অবস্থা যাচাই না করে বেশি ওজন নিয়ে ব্যায়াম করলে, পেশি ফোলালে রক্তচাপ বেড়ে কিডনির ক্ষতি হতে পারে৷ কাজেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া বেশি কসরত করবেন না৷
বয়স বাড়লে ওষুধের ব্যাপারে সতর্ক হোন৷ কিছু ওষুধ আছে যা থেকে কিডনি খারাপ হতে পারে৷ যেমন, নন–স্টেরয়ডাল অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি গ্রুপের ব্যথার ওষুধ, অ্যাঞ্জিওগ্রাফি–আইভিপি বা সিটি স্ক্যানে ব্যবহৃত রঞ্জক, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, মৃগি বা টিবির ওষুধ, স্টেরয়েড ইত্যাদি৷ প্যারাসিটামল তুলনায় নিরাপদ৷ তবে নিয়মিত খেলে ক্ষতি হতে পারে৷ অ্যাম্ফিটামিন, হেরোইন, কোকেন, গাঁজা, ভাং, এমনকী দীর্ঘ দিন ধরে প্রচুর মদ খেলেও বিপদ হতে পারে৷ আবার দেশি মদে, যেখানে মিথাইল অ্যালকোহল ভেজাল মেশানো হয়, তা খেলে সঙ্গে সঙ্গে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে৷ বিপদ হয় অতিরিক্ত ধূমপান থেকেও৷
রাত জাগা, কাজের চাপ, বিশ্রামের অভাব— সবে মিলে টেনশন বাড়ে, বাড়ে হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ৷ সেই চাপ এসে পড়ে কিডনিতে৷ টেনশনের সঙ্গে নেশা, ব্যথার ওষুধ, জাঙ্কফুড ও শুয়ে–বসে থাকার ঘনিষ্ঠ যোগ আছে৷ সবের মিলিত ফলে কিডনি খারাপ হতে পারে যখন–তখন৷
বিপদঘণ্টা
কোনও কষ্ট নেই, ইউরিয়া–ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিক৷ আনন্দে আছেন৷ হঠাৎ সামান্য বেচালে সে সামনে এল এমন ভাবে, যে ডায়ালিসিস ছাড়া গতি রইল না৷ অর্থাৎ সব ঠিক আছে মানেই আপনি সুস্থ, এমন নাও হতে পারে৷ কাজেই অনিয়ম করবেন না৷ ডায়াবেটিস–হাইপ্রেশার বশে রাখুন৷ পা–মুখ ফুললে, অরুচি বা রক্তাল্পতা হলে, গা–হাত–পায়ে ব্যথা হলে ডাক্তার দেখান৷ ইউরিন কমে গেলে বা লাল ইউরিন হলে দ্রুত কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy