Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ঠান্ডা-গরমেই পোয়া বারো সোয়াইন ফ্লু-র

সংখ্যাটা বৃহস্পতিবার ছিল ১০। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অর্থাৎ শুক্রবার সেটা হয়ে গেল ১৭। ‘অনুকূল’ আবহাওয়ায় কলকাতা-সহ রাজ্যে সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। জ্বর আর অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে আতঙ্কিত মানুষের ভিড় বাড়ছে বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসকের চেম্বারে। আবহাওয়ার আনুকূল্য মানে কখনও ঠান্ডা তো কখনও গরম। শীত-বিদায় আর বসন্ত সমাগমের সন্ধিক্ষণে মেঘলা আকাশ। জীবাণুর পৌষমাস!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৩
Share: Save:

সংখ্যাটা বৃহস্পতিবার ছিল ১০। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অর্থাৎ শুক্রবার সেটা হয়ে গেল ১৭। ‘অনুকূল’ আবহাওয়ায় কলকাতা-সহ রাজ্যে সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। জ্বর আর অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে আতঙ্কিত মানুষের ভিড় বাড়ছে বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসকের চেম্বারে। আবহাওয়ার আনুকূল্য মানে কখনও ঠান্ডা তো কখনও গরম। শীত-বিদায় আর বসন্ত সমাগমের সন্ধিক্ষণে মেঘলা আকাশ। জীবাণুর পৌষমাস!

নতুন করে আক্রান্ত সাত জনই কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আক্রান্তদের মধ্যে আছে দু’টি শিশুও। একটি শিশু বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্যটি বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে। আইডি সূত্রের খবর, শুক্রবার দুপুরে ঐশী রায় নামে বারাসতের ন’বছরের একটি মেয়ে তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি বছরে ঐশীই আইডি-তে সোয়াইন ফ্লু-র প্রথম রোগী। মেয়েটির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানান।

বাকি পাঁচ জন কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মঞ্জুলিকা ঘোষ নামে দুবরাজপুর শহর সংলগ্ন গড়গড়া গ্রামের এক বৃদ্ধাও রয়েছেন। তাঁকে কলকাতার ইএম বাইপাসের লাগোয়া এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে জানান, আক্রান্তদের প্রত্যেকের বাড়ি গিয়ে পরিবারের অন্যদেরও শারীরিক পরীক্ষা শুরু করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আগে যে-১০ জনের শরীরে সোয়াইন ফ্লু-র ভাইরাস মিলেছিল, তাঁদের মধ্যে তিন জন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে স্বেচ্ছায় বাড়ি চলে গিয়েছেন। বাড়িতেই তাঁদের চিকিৎসা হচ্ছে।

কিন্তু সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্তের সংখ্যা এত দ্রুত বাড়ছে কেন?

জীবাণু-বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, রাজ্য জুড়ে এখন যে-আবহাওয়া চলছে, তা এই রোগের সংক্রমণে সাহায্য করছে। মেঘে ঢাকা আকাশ, কখনও গরম আর কখনও ঠান্ডায় সব সময়েই জীবাণুরা অতিরিক্ত মাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষত বাতাস ভারী থাকায় বায়ুবাহিত সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস থেকে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। তাপমাত্রার ওঠানামায় অনেকেই সর্দি-জ্বরে ভুগছেন। যে-কোনও রোগের জীবাণু সহজেই তাঁদের কাহিল করে ফেলতে পারে। সোয়াইন ফ্লু-র ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটছে। শিশু এবং বয়স্কদের তাই অতি সাবধানে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

জেলা কিংবা শরহতলিতে রোগ নির্ণয়ের তেমন ব্যবস্থা না-থাকায় সমস্যায় পড়ছেন অনেকে। ওই সব এলাকা থেকে একেবারে শেষ মুহূর্তে যে-সব রোগী কলকাতায় আসছেন, তাঁদের অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়ছে। যেমন বিসি রায় শিশু হাসপাতালের সুপার দিলীপ পাল জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাধীন বাগুইআটির হেলাবটতলার বাসিন্দা আট বছরের আবু রাহানের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এর উপরে আছে সোয়াইন ফ্লু-র পরীক্ষা এবং চিকিৎসা নিয়ে নানা বিভ্রান্তি। রাজ্যে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস (নাইসেড) ছাড়া অন্য কোথাও এই রোগের ভাইরাস নির্ণয়ের ব্যবস্থাই নেই। তাই বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে জ্বরাক্রান্তদের থুতুর নমুনা নিয়ে নাইসেডেই পাঠানো হচ্ছে। সমস্যা ওষুধ নিয়েও। বিসি রায়ে ভর্তি রাহানের জন্য সোয়াইন ফ্লু-র প্রধান ওষুধ ট্যামি ফ্লু সংগ্রহ করতে পরিবারকে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে বলে অভিযোগ। পরে স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওষুধের ব্যবস্থা করে হাসপাতালই।

স্বাস্থ্যসচিব মলয়বাবু অবশ্য জানাচ্ছেন, ওষুধের কোনও ঘাটতি নেই। তিনি বলেন, “সব সময় এই ওষুধের প্রয়োজন হয় না। তাই সর্বত্র তা সরবরাহ করার দরকারও নেই। নাইসেড থেকে যে-সব হাসপাতালের রোগীদের রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেই সব জায়গায় দ্রুত ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।” মলয়বাবু জানান, এই মুহূর্তে তাঁদের কাছে সাত হাজার ট্যামি ফ্লু ট্যাবলেট এবং ১০০ বোতল পেডিয়াট্রিক ট্যামি ফ্লু সিরাপ রয়েছে। আরও সাত হাজার ট্যাবলেট আসছে। এই রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণ ভাবে বড়দের ২০টি এবং বাচ্চাদের ১০টি ট্যাবলেট প্রয়োজন হয়।

সোয়াইন ফ্লু-র রোগীর জন্য অনেক সময় ভেন্টিলেটর লাগে। আইডি হাসপাতালে ভেন্টিলেটর, বিশেষত পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটরের অভাব রয়েছে। স্বাস্থ্যসচিবের আশ্বাস, “দু’-এক দিনের মধ্যেই যাতে ভেন্টিলেটরের সমস্যা মিটে যায়, সেই রকম নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

সোয়াইন ফ্লু-র সংক্রমণ ধরা পড়ার পরেই সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে এ ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু বহু হাসপাতালই তা মানছে না বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, আগামী সপ্তাহেই এ ব্যাপারে জরুরি বৈঠক ডাকা হচ্ছে।

এই রোগ সম্পর্কে কোনও তথ্য তাঁদের কাছেও জমা পড়ছে না বলে জানান কলকাতা পুরসভার মেয়র-পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। নিয়ম অনুযায়ী এই ধরনের অসুখ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পুরসভাকে জানানোর কথা সব হাসপাতালেরই। তথ্য না-দিলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে পারে পুরসভা। অতীনবাবু বলেন, “সোয়াইন ফ্লু-র ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে হাসপাতালগুলি এখনও পর্যন্ত যোগাযোগ করেনি। আমরা প্রধানত মশামাছি বাহিত রোগের বিষয়টা দেখি বলে হয়তো ওরা জানাচ্ছে না। নতুন করে সকলকেই নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য আমরা দফায় দফায় বৈঠক করছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

swine flu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy