দুমড়ে গিয়েছে গোরক্ষধাম এক্সপ্রেস। উদ্ধারকাজে ব্যস্ত কর্মীরা। উত্তরপ্রদেশে। ছবি: পিটিআই
মুম্বইয়ে কঙ্কন রেলে দুর্ঘটনার এক মাসের মধ্যে ফের দুর্ঘটনার কবলে রেল। এ বার উত্তরপ্রদেশে। সোমবার সকালে চুরেব স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়ে একটি মালগাড়ির পিছনে ধাক্কা মারে গোরক্ষধাম এক্সপ্রেস। এখনও পর্যন্ত ১১ জন যাত্রীর মৃত্যুর খবর মিলেছে। বেসরকারি সূত্রে খবর, মৃতের সংখ্যা চল্লিশ ছাড়িয়েছে। জখম অন্তত ৯৫। আহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, এ বারও রেলের রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটিই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
গত ৪ মে মুম্বইয়ে কঙ্কন রেলের দিবা-সাবন্তওয়াড়ি এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে ১৮ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে ওই ঘটনায় রেলেরই লাইন দেখভালের ত্রুটি ধরা পড়েছিল। রেলের বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রচণ্ড গরমে ওই জায়গার লাইন বেঁকে গিয়েছিল। আর তাতেই দুর্ঘটনা।
উত্তর-পূর্ব রেল সূত্রের খবর, এ দিন সকাল দশটা নাগাদ দিল্লি থেকে গোরক্ষপুরগামী গোরক্ষধাম এক্সপ্রেস খালিলাবাদের চুরেব স্টেশনের কাছে সজোরে ধাক্কা মারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়ির গায়ে। ছিটকে পড়ে ট্রেনের ছ’টি কামরা। ট্রেনটির গতি বেশি থাকায় সম্পূর্ণ উল্টে গিয়েছে দু’-একটি কামরা। ক্ষতিগ্রস্ত বগিগুলির মধ্যে ৪টি সাধারণ, একটি বাতানুকূল প্রথম শ্রেণি ও একটি বাতানুকূল দ্বিতীয় শ্রেণির কামরা রয়েছে।
দুর্ঘটনার বিকট শব্দ এবং আটকে পড়া যাত্রীদের আর্তনাদ শুনে প্রথমে ছুটে আসেন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রেল ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্ধারকারী দল। ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়া দলা পাকানো দেহগুলি উদ্ধার করতে সাহায্য চাওয়া হয়েছে আধা-সামরিক বাহিনীরও। এ দিন গভীর রাত পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চলেছে বলে রেল সূত্রে খবর। কামরাগুলি এমন ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে যে দেহ বার করতে সময় লাগছে অনেক বেশি। রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান অরুণেন্দ্র কুমার জানিয়েছেন, উত্তর পূর্ব রেলের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিশনার পি কে বাজপেয়ীকে দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর রিপোর্ট পেলেই প্রকৃত কারণ জানা যাবে। সকালবেলাতেই এমন কাণ্ড ঘটে যাওয়ায় ব্যাহত হয় দিল্লি ও গোরক্ষপুরের মাঝে ট্রেন চলাচল। বাতিল করা হয় বেশ কিছু ট্রেন। গতিপথ বদল করা হয়েছে আরও কয়েকটি ট্রেনের।
আজ সন্ধে বেলা দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ ঘিরে যখন দেশ জুড়ে টানটান উত্তেজনা, সে দিনই সকালে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর আসে। খবর পাওয়া মাত্র ক্যাবিনেট সচিব অজিত শেঠের সঙ্গে কথা বলেন ভাবী প্রধানমন্ত্রী মোদী। পরে মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে টুইট করেন তিনি। মৃতদের পরিবার পিছু এক লক্ষ টাকা এবং গুরুতর আহতদের পঞ্চাশ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। যাঁদের আঘাত অতটাও গুরুতর নয়, তাঁদের দেওয়া হবে দশ হাজার টাকা।
রেল কর্তাদের একাংশ কিন্তু আজকের ঘটনার সঙ্গে জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনার মিল খুঁজে পাচ্ছেন। জ্ঞানেশ্বরীর ক্ষেত্রে মাওবাদীরা লাইনের ফিশপ্লেট খুলে দেওয়ায় ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। কয়েকটি কামরা গিয়ে পড়ে পাশের লাইনে। ওই লাইন দিয়ে তখন ছুটে আসছিল মালগাড়ি। তার ধাক্কাতেই প্রাণ হারান শতাধিক যাত্রী। উত্তর পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার এ দিন ঘটনাস্থল ঘুরে এসে রাতে জানান, গোরক্ষধাম এক্সপ্রেসও লাইন ভেঙে যাওয়াতেই বেলাইন হয়। কয়েকটি কামরা ছিটকে গিয়ে ধাক্কা মারে পাশের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির গায়ে। এর ফলে মৃত্যু হয় যাত্রীদের। এর পিছনে সিগন্যাল ব্যবস্থার কোনও ত্রুটি ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তা-ও।
গোরক্ষধাম এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে আগেও। ২০১০ এর ২ জুন পাঙ্কি স্টেশনের কাছে এ ভাবেই প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেসের পিছনে ধাক্কা মেরেছিল গোরক্ষধাম এক্সপ্রেস। সে বারও প্রাণ হারিয়েছিলেন বেশ কয়েক জন যাত্রী। তার পরও একই কায়দায় আবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ল ট্রেনটি। রেলের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর এ প্রসঙ্গে বলেন, “পর পর দুর্ঘটনা ঘটলেও রেল শিক্ষা নিচ্ছে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy