ভোট দিলেই ডিসকাউন্ট। ছাড় পাওয়ার ছাড়পত্র তর্জনীতে কালি।
কোথাও সিনেমার টিকিটে ছাড়, তো কোথাও শপিং মলে। রেস্তোরাঁয়, ফ্রিজ-টিভির দোকানে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে যত বেশি সম্ভব ভোটারকে বুথমুখো করতে জায়গায়-জায়গায় এমনই পন্থা নিচ্ছে প্রশাসন।
পুজো-পার্বণে কেনাবেচা কোথায় না বাড়ে? তা হলে ভোটপুজোতেই বা বাড়বে না কেন? এই দুয়ে-দুয়ে চারের অঙ্কে এক কথায় রাজি হয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়িক সংস্থাগুলি। বর্ধমানে তাই ইতিমধ্যেই আসরে নেমে পড়েছে বিগ বাজার বা রিলায়্যান্সের মতো সংস্থা। ঝাড়খণ্ডের রামগড়ে আবার লাফিয়ে পড়েছেন সিনেমা হল মালিকেরা।
বর্ধমান আবার এক পা এগিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, শুধু ভোটের পরেই নয়, সচিত্র পরিচয়পত্র দেখালে আগেও ছাড় মিলবে। জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচন আধিকারিক সৌমিত্র মোহন জানান, ২৬ মার্চ দুর্গাপুরে পরিচয়পত্র দেখে ছাড় দেওয়া শুরু হবে। পরে তা জেলার অন্য নানা জায়গা, বিশেষত শহরাঞ্চলে মিলবে। ভোটের আগে দু’বার এবং পরে দু’বার এই ছাড় নেওয়া যাবে।
রামগড়ে অবশ্য ১০ শতাংশ ছাড় মিলবে শুধু ভোটের দিনে। হাজারিবাগ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই শহরে প্রায় ৬ লক্ষ ভোটার। নতুন প্রজন্মের ভোটার ৩০ হাজারেরও বেশি। তাঁদের বুথে টানাটাই অন্যতম প্রধান লক্ষ্য জানিয়ে রামগড়ের ডেপুটি কমিশনার আবু ইমরান বলে, “দিল্লি বা অমৃতসরেও এ ভাবেই কমিশনকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে ব্যবসায়িক সংস্থাগুলি। এখানে সিনেমা হল, রেস্তোরাঁগুলিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সকলেই রাজি হয়েছে।” তিনি জানান, কোনও রাজনৈতিক দল এই নিয়ে আপত্তি তো তোলেইনি, বরং কেউ-কেউ ছাড়ের মাত্রা বাড়াতে বলছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
বর্ধমানের বড় সংস্থাগুলি ব্যবসার মুখ চেয়ে ২ থেকে ১০ শতাংশ ছাড় দিতে রাজি হয়ে গেলেও, মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীরা এখনও দ্বিধাগ্রস্ত। তাদের বক্তব্য, লাভের পরিমাণ এত বেশি নয় যে ঢালাও ছাড় দেওয়া যাবে। জেলা ব্যবসা সুরক্ষা সমিতির সভাপতি মহেন্দ্র সিংহ বলেন, “কিছু সদস্য এই প্রস্তাবে রাজি হতে পারেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে জেলা প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত জানাব।” জেলাশাসক বলেন, “রিলায়্যান্স বা বিগ বাজারের মতো প্রতিষ্ঠান সাগ্রহে ছাড় দিতে রাজি হয়েছে। মহকুমা ও ব্লকস্তরে ছোট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা চলছে। যাঁরা স্বেচ্ছায় ছাড় দিতে রাজি হবেন, তাঁদের পরে সম্মান জানাব।”
বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক অমিত দত্ত বলেন, “মহকুমাশাসক এবং বিডিও-দের আমরা ছাড় দিতে আগ্রহী ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছি। ওই তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে এলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে ছাড় দেওয়ার দিন ঠিক করব।” ভোটের পরে ছাড় দেওয়ার দিনক্ষণ নিয়ে অবশ্য কোনও অস্পষ্টতা নেই। বর্ধমানে দু’দফায়, ৩০ এপ্রিল ও ৭ মে ভোট। সে ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১ ও ২ মে এবং ৭ ও ৮ মে ভোট দিয়ে আসা ক্রেতাদের তর্জনীতে কালির মিলিয়ে দেখে ছাড় দেওয়া হবে। সৌমিত্র মোহন বলেন, “ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে ছাড় দিয়ে ভোট বাড়ানোর চেষ্টার কথা জানিয়েছি। কমিশন এতে বেশ খুশি।”
রামগড়ে ভোট ১০ মে। সেখানকার বিজলিয়া এলাকার একটি সিনেমা হলের ম্যানেজার পণ্ডিতজির মতে, গণতন্ত্রের স্বার্থেই ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসা উচিত। তাঁর কথায়, “শিক্ষিত নাগরিকেরাও অনেক সময় গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে অনীহা দেখান। গনগনে গরমে ভোটকেন্দ্রে যেতে চান না। তাঁদের বুথমুখী করার তাগিদেই সিনেমা হল বা হোটেল ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এসেছেন।”
খবর ছড়াতেই খুশি রামগড়বাসী। সকাল-সকাল ভোট দিয়ে সিনেমা হল বা রেস্তোরাঁ বা দু’টোতেই ঢুঁ দেওয়ার কথা ভাবছেন অনেকে। মাস কয়েক আগেই বিয়ে হয়েছে পত্রাতুর বাসিন্দা উমেশ ও মঞ্জরী সিংহের। তাঁরা ঠিক করে ফেলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইভিএমের বোতাম টিপেই তাঁরা চলে যাবেন সিনেমা দেখতে। দুপুরে ‘লাঞ্চ’ সারবেন কোনও ধাবায়।
বর্ধমানের সুভাষপল্লির স্বর্ণলতা নিয়োগী হাসছেন “কাকে ভোট দেব এখনও ঠিক করিনি। তবে দেব আলবত। তার পরেই তো মলে...!”
চৈত্র সেল সামনেই। ভোটের সেলও চলে এল বলে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy