অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি যে কোনও রকম আপস করবেন না, আজ গোয়ায় এক দলীয় বৈঠকে সে কথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কথায়, “অর্থনীতির উন্নতি ঘটাতে আমাদের কড়া ব্যবস্থা নিতেই হবে। এ জন্য দেশের মানুষ হয়তো আমাকে অপছন্দ করবেন। কিন্তু এ ছাড়া কোনও উপায় নেই।”
সেই ৯০-এর দশকে অর্থমন্ত্রী হওয়ার পরে অর্থনীতির প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন মনমোহন সিংহ। ভারতে আর্থিক উদারনীতির প্রবক্তা দেশবাসীকে বলেছিলেন তাঁর উপরে আস্থা রাখতে। কিন্তু তার পর থেকেই মূলত জোট রাজনীতির চাপে আর কেউই তেতো দাওয়াই দেওয়ার সাহস দেখাননি।
এমনকী, মনমোহন নিজেও প্রধানমন্ত্রী হয়ে নিজের ঘোষিত পথ থেকে সরে এসেছিলেন। সনিয়া গাঁধীর নির্দেশে হেঁটেছেন সামাজিক ক্ষেত্রে বিপুল ভর্তুকি দেওয়ার জনমোহিনী পথে। যার জেরে আখেরে অর্থনীতির চরম ক্ষতি হয়েছে বলেই অর্থনীতিবিদদের মত।
মোদী নিজেও আজ বলেছেন, “আমি এমন একটা সময় দেশের রাশ হাতে নিয়েছি, যখন আগের সরকার কিছুই রেখে যায়নি। তারা সব শূন্য করে দিয়ে গিয়েছে। দেশের অর্থনীতি তলানিতে এসে ঠেকেছে।” এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে বহু বছর পরে আবার কেউ কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলার সাহস দেখাতে পারলেন। মোদী বলেন, “আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরাতে আগামী এক দু’বছরে কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। আমি জানি, এর ফলে মানুষ আমার প্রতি যে বিপুল ভালবাসা দেখিয়েছেন তাতে কিছুটা ভাটা পড়বে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন তাঁরা দেখবেন দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হয়েছে, তখন সেই ভালবাসা আমি ফিরে পাব।”
দলের এই বৈঠকের কিছু পরেই মোদী টুইট করেন: ‘দেশের স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। আমরা যা-ই করি না কেন, দেশের প্রয়োজনের দিকে তাকিয়েই করব।’
আর মাসখানেকের মধ্যেই সংসদে তাদের প্রথম বাজেট পেশ করবে মোদী সরকার। সেই বাজেট ঘিরে নানা মহলের নানা প্রত্যাশা। কিন্তু জনগণের আব্দারের থেকে অর্থনীতির দাবিদাওয়াকেই যে তিনি অগ্রাধিকার দেবেন, সে কথা আজ স্পষ্ট ভাবেই জানিয়ে দিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।
কিছু দিন আগে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও এমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে তিনি বলেছিলেন, বাজেট কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে বিজেপির অন্দরেই দু’টি মত রয়েছে। এক পক্ষ মনে করেন, এই বিপুল জনাদেশ নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের দিকেই গোড়ায় নজর দেওয়া উচিত। কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সময় পরে অনেক পাওয়া যাবে। “কিন্তু আমি মনে করি, কড়া ব্যবস্থা নিতে হলে গোড়াতেই তা নিয়ে নেওয়া ভাল। ভোটের মুখে কিছু জনমোহিনী ব্যবস্থা তো এমনিতেই নিতে হবে।” বলেছেন জেটলি।
বস্তুত, মোদীর অর্থনীতির মূল দর্শন এটাই। আর্থিক বৃদ্ধির পথ ধরেই গরিব মানুষদের উন্নয়ন করা সম্ভব জগদীশ ভগবতীদের এই অর্থনৈতিক দর্শনে ভরসা রেখেই গুজরাতের হাল ফিরিয়েছেন তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “বৃদ্ধির হার এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। সেই হার বাড়াতে হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। গুজরাতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েই আমি সফল হয়েছিলাম। দেশের ক্ষেত্রেও হব বলে বিশ্বাস করি।” মোদী-ঘনিষ্ঠদের মতে, ‘আমার উপর আস্থা রাখুন। আর আমাকে আমার মতো করে অর্থনীতি সামলাতে দিন’ মোদ্দা এই বার্তাটাই আজ দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সেই লক্ষ্যে রীতিমতো চাঁচাছোলা ভাষায় মোদী আজ বিজেপি নেতা-কর্মীদের বলেছেন, “আমার বা দলের প্রশংসা করে দেশের কোনও লাভ হবে না। আমাদের কড়া ব্যবস্থা নিয়ে অর্থনীতির হাল ফেরাতে হবে।” প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণার পরে আয়কর ছাড়-সহ মধ্যবিত্ত জনতার নানা প্রত্যাশা আসন্ন বাজেটে কতটা পূরণ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। উল্টো দিকে, খুশির হাওয়া বওয়ার সম্ভাবনা শিল্প মহলে। বেহাল অর্থনীতি আর মন্দার এই আবহে যারা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে সরকারের দিকে।
মোদী সরকারের দিকে তাকিয়ে রয়েছে রাজ্যগুলিও। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সব রাজ্যকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি-নিরপেক্ষ প্রশাসন চালানোর কথা প্রধানন্ত্রী ইতিমধ্যেই বলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়ললিতা, চন্দ্রবাবু নায়ডুর মতো মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলার জন্য এক এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। আগামী মাসের গোড়াতেই মমতার সঙ্গে বৈঠক করতে কলকাতায় যাবেন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।
আজ আরও এক বার রাজ্যগুলির প্রতি নিরপেক্ষতার বার্তা দিতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যগুলিকে আর আগের মতো টাকা চেয়ে কেন্দ্রের কাছে লাগাতার দরবার করতে হবে না। মোদীর কথায়, “আগে কেন্দ্রীয় প্রকল্প আর টাকার জন্য রাজ্যগুলিকে কাকুতিমিনতি করতে হতো। এখন থেকে সেটা আর করতে হবে না। কারণ, রাজ্যগুলির উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy