অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
গুজরাত থেকে উড়ে এসে সোজা উত্তরপ্রদেশ। আর প্রথম খেলাতেই বাজিমাত। গোবলয়ের বৃহত্তম রাজ্যে আশিটির মধ্যে সত্তরটির বেশি আসন জিতিয়ে রেকর্ড গড়লেন নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তখনও তাঁর নাম ঘোষণা হয়নি। তার আগেই মোদী তাঁর এই সেনাপতিকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশে। গুজরাতে মোদী যখন ২৬টির মধ্যে ২৬টি আসনই বিজেপি-র ঝুলিতে পুরেছেন, তাঁর শিষ্যও উত্তরপ্রদেশে গিয়ে একশো শতাংশ না হোক, আশি শতাংশের বেশি আসন এনে ভরে দিয়েছেন মোদীর ঝুলি।
কিন্তু কী ভাবে করলেন এই অসাধ্য সাধন?
১৯৯৮ সালে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র রেকর্ড ছিল ৫৭টি আসন। যদিও সেই সময় উত্তরপ্রদেশ থেকে উত্তরাখণ্ড আলাদা হয়নি। বরাবরই জাত-পাত, ধর্মের ভিত্তিতে ভোট হয়েছে এ রাজ্যে। কিন্তু এ বারে সেই অঙ্কই ভেঙে দেওয়া ছিল অমিত শাহের লক্ষ্য।
আজ এই অভূতপূর্ব ফলের পর বিজেপি-র সদর দফতরে বসে অমিত শাহ আজ বলেন, “আমার প্রথম কাজ ছিল উত্তরপ্রদেশের বুথ কমিটিগুলি তৈরি করা। সেটি সুনিশ্চিত করেই জেলা ও রাজ্য স্তরে কমিটি গঠন করা। আমরা ৭৬% পর্যন্ত বুথ কমিটি তৈরি করেছি। আমি নিজে প্রায় সব কেন্দ্রে ঘুরেছি। উত্তরপ্রদেশকে ২১টি ভাগে ভাগ করে দায়িত্ব বেঁধে দিয়েছিলাম।”
অমিত শাহের দাবি, উত্তরপ্রদেশে প্রত্যন্ত গ্রামেও ঘরে-ঘরে গিয়ে নেতারা বলেছেন, কেন মোদীকে ভোট দেওয়া দরকার। সাড়ে চারশোটি ভ্যানে বড় স্ক্রিনে মোদীর বক্তৃতা লাগাতার প্রচার করা হয়েছে। এ ভাবেই জাত-পাতের সমীকরণ তাঁরা ভাঙতে পেরেছেন বলে মত অমিত শাহের।
তাঁর কথায়, “১২ বছর ধরে আমরা এখানে পঞ্চায়েত নির্বাচন লড়িনি। ১৯৯৮ সাল থেকে আসন ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় সংগঠনকে মজবুত করার পাশাপাশি একটি মোক্ষম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বয়ং মোদীর বারাণসী থেকে নির্বাচন লড়া। হিন্দি বলয়ে এর প্রভাব অপরিসীম। কারণ, উত্তরপ্রদেশে মানুষ জাত-পাতের ভিত্তিতে ভোট দিতেন। এই অবস্থায় মোদীর নাম আশা জাগিয়েছে।”
অমিত শাহ মুখে যা-ই বলুন, সুকৌশলে বিজেপি-ও জাতপাতের তাস খেলেছে। ধর্মের মেরুকরণের চেষ্টাও করেছে। খোদ অমিত শাহই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখে নির্বাচন কমিশনের কোপে পড়েছিলেন।
বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার মতে, সংঘর্ষ মামলায় অভিযুক্ত হলেও অমিত শাহের প্রতি মোদীর আস্থার কোথাও ভাটা পড়েনি। কারণ, মোদী জানেন, কী ভাবে সংগঠন পরিচালনা করতে হয়, কী করে সংগঠনের ফাঁক বোজাতে হয়, তা বোঝেন অমিত শাহ। সে কারণেই চোখ বন্ধ করে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব তাঁকে সঁপে দিয়েছিলেন মোদী। সে কারণে মোদীর মনে এ বারে ভাবনাও এসেছিল, যদি রাজনাথ সিংহ ও নীতিন গডকড়ী দুজনেই মন্ত্রিসভায় সামিল হন, তা হলে অমিত শাহকেই দলের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হোক। তা না হলে অমিত শাহের জন্য মন্ত্রিসভাতেও বড় কিছু দায়িত্বের কথা ভাবছেন মোদী।
এই বছরই মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। সেখানেও অমিত শাহকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
বিজেপি নেতারা জানেন, আজও যদি বিধানসভা নির্বাচন হয় উত্তরপ্রদেশে, বিজেপির এত ভাল ফল হবে না। কারণ, সেখানে নেতৃত্বের কোন্দল, যোগ্য নেতার অভাব রয়েছে। অথচ অমিত শাহ গিয়ে এই কোন্দলই শুধু সামলাননি। দলের সব ছোট-বড় নেতাকে দৌড় করিয়েছেন গোটা নির্বাচনে। অমিত শাহ অবশ্য আশাবাদী, “বিধানসভা নির্বাচনের জন্য আমাদের জমি এ বারে তৈরি। সরকার গড়ার পরেও সেখানে প্রভাব পড়বে। যার ফলে আমরা সেখানে এ বারে সরকারও গড়তে পারি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy