জি.. জি.. (একটু থেমে আর এক বার).. জি!
বারো সেকেন্ডের ফোন। তিনটে ‘জি’-তেই শেষ।
ওপারে কোন ‘জি’ ছিলেন তখনও জানি না, এ পারের মুখটি নিমেষে পানসে হল।
এত ক্ষণ খোশগল্পে মশগুল ছিলেন। ফোন রাখতেই থম মারা মুখে ড্রাইভারকে বললেন, ‘‘গাড়ি ভাগাও।”
দু’দিন আগের কথা। বিজেপির এই নেতাটিকে দিল্লি থেকে উড়িয়ে এনে বারামতীতে ঘাঁটি গাড়তে বলেছিলেন অমিত শাহ। মুম্বই থেকে বারামতী পৌঁছতে সেদিন একটু বেলা গড়িয়েছে। অমনি ফোন বিজেপি সভাপতির। ভর দুপুরে ধমক খেলেন অমিত‘জি’ ভাইয়ের। কিন্তু অমিত শাহ জানলেন কী করে? কে দিল খবর?
“আরে সব গাড়িতে জিপিএস লাগানো আছে যে! কোন নেতা কখন কোন দিকে যাচ্ছেন, সব খবর আছে কন্ট্রোল রুমের কাছে। রাজনীতি মোটেও সহজ নয় বুঝলেন। তা-ও নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহের পাল্লায় পড়লে,” বেজার মুখে ধুলো উড়িয়ে গাড়ি ছোটালেন নেতাটি।
আজ রাত পোহালেই কাল ভোট। মহারাষ্ট্র আর হরিয়ানায়। দুটোতেই এখন ইজ্জতের লড়াই নরেন্দ্র মোদীর। আর তাঁর সেনাপতি অমিত শাহের।
লোকসভার পর থেকেই একের পর এক উপনির্বাচনে ধাক্কা। লোকসভায় যে উত্তরপ্রদেশে বাজিমাত করে মোদীর কাছ থেকে হাসিমুখে ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’-এর শিরোপা কবুল করেছেন অমিত শাহ, পরের উপনির্বাচনে সেখানেও মুখ থুবড়ে পড়েছেন। কিন্তু লোকসভার পর এ বারেই প্রথম পূর্ণ নির্বাচন দুই রাজ্যে। দুই রাজ্যেই দলের কোনও মুখ নেই। কোনও মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী নেই। লোকসভার মতো নিজের মুখকেই ফের সামনে নিয়ে এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। ফের বাজি ধরেছেন। ফের ফিরিয়ে আনতে চাইছেন মোদী-জাদু। কালকের ভোট সেই জাদুর পরীক্ষা।
মোদীর ভাগ্য যেখানে বন্দি, সেখানে সেনাপতি অমিত শাহও কোনও ঝুঁকি নিচ্ছেন না। ফিরেছেন স্বমহিমায়। ভোট পরিচালনার মাইক্রো-ম্যানেজমেন্টের রসায়নাগার তৈরি করেছেন দু’রাজ্যে। যেটির এক ঝলক দেখে এসেছি মুম্বইয়ে বিজেপি দফতরে। রাজ্যের কোথায় ছোট-বড় সব নেতা কখন কী করছেন, কোথায় যাচ্ছেন, সব খুঁটিনাটি কন্ট্রোল রুমের দখলে। সেখান থেকে খবর যাচ্ছে অমিত শাহের কাছে। বিজেপি নেতারা বলছেন, “শুনেছিলাম, নজর রাখা হয় বিরোধীদের উপর। এখানে তো আমরাই নজরে।” কাণ্ড দেখে চোখ তাঁদের চোখ ছানাবড়া। এক জন বলছেন, “আর বলবেন না, দম ফেলার ফুরসত দিচ্ছে না। কে ছোট, কে বড়- কিচ্ছু মানছে না। সবাই শুধু ছুটতে থাকো। মাঠে নেমে কাজ করো।”
অমিত শাহ জমি তৈরি করছেন, আর হাওয়ার মোড় ঘোরাতে চাইছেন মোদী। গত তিন দিন ধরা গলাতেই প্রচার করছেন। প্রচারের ভঙ্গিও আগের মতো। সাফ বলছেন, বিরোধীরা যাই বলুক, বিজেপির স্থায়ী সরকার গড়ার রায় দিন। লোকসভাতেও পণ্ডিতরা বলেছিলেন, ত্রিশঙ্কু হবে। এ বারেও বলছে। তখনও অঙ্ক মেলেনি। এ বারেও মিলবে না।
আত্মবিশ্বাস আছে মোদীর গলায়। কিন্তু লোকসভার মতো এখনও দলের অনেকের তা হজম হচ্ছে না। বিশেষ করে ভোটের আগে জোট ভাঙার খেসারত দিতে হতে পারে মনে করছেন অনেকে। দলের সমীক্ষাও বলেছিল, জোট নিয়ে চললে সরকার নিশ্চিত ছিল। দুই রাজ্যই হতো কংগ্রেস-মুক্ত। তবু ঝুঁকি নিলেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ।
কেন? এ বারের ভোটে জোড়া লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন মোদী-শাহ জুটি। শুধু সরকার গড়া নয়, আঞ্চলিক রাজনীতির ভারসাম্য বদলানোও তাঁদের পাখির চোখ। হরিয়ানায় কুলদীপ বিশনোই মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। বিজেপি জোট ভাঙল। মহারাষ্ট্রে চেয়েছিলেন উদ্ধব। ভোটের ঠিক মুখে সে জোটও আর থাকল না। কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে-রাজ্যে এ বার ‘জুনিয়র’ দল থেকে ‘সিনিয়র’ দল হওয়ার কাজও শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। যাতে কেন্দ্রের পর রাজ্যগুলিতেও বিজেপির দখল থাকে। বিজেপি একার শক্তিতে বিধানসভার যত আসন বাড়াতে পারবে, অদূর ভবিষ্যতে রাজ্যসভায় বিল পাশ করাতে ততই সুবিধে। আর যে সব রাজ্যে দল ক্ষমতায় থাকবে, দিল্লি থেকে সেখানে সহজে পৌঁছবে মোদীর উন্নয়নের সিঁড়ি। পাঁচ বছর পরে ফের লোকসভার আগে যা দরকার মোদীর। জনতার সামনে রিপোর্ট কার্ড পেশের জন্য।
কিন্তু কেন্দ্রে মোদী-বিরোধীরা লোকসভায় অপদস্থ হয়েছে, রাজ্যে হবে কেন? হারের একটা আঁচ পেয়ে রাহুল গাঁধী মহারাষ্ট্রে একলা চলেই পাঁচমুখী লড়াইয়ে নিজেদের শক্তি বাড়াতে চেয়েছেন। উদ্ধব এখনও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুলুক সন্ধান করছেন। বেগতিক বুঝে শেষ মুহূর্তে মরাঠা স্ট্রংম্যান শরদ পওয়ারও মোদী-বিরোধী জোট গড়ার জন্য শিবসেনাকে বার্তা পাঠিয়েছেন। উদ্ধব পাঠিয়েছেন রাজ ঠাকরেকে। যে ওম প্রকাশ চৌটালা ফের জেলে যাওয়ার আগে মোদীকে নিশানা করে গেলেন, ক’মাস আগে তাঁর সঙ্গেও গোপন বৈঠক হয়েছে অরুণ জেটলির। নিছক দুর্নীতির আঁচ গায়ে মাখবে না বলেই তাঁর সঙ্গে এ বারে জোটে গেল না বিজেপি। কিন্তু জনমত সমীক্ষা বলছে, হরিয়ানাতেও চৌটালা বিনে গতি নাই। অতএব? অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “লক্ষ্য একটাই। আসন এমন বাড়াও, বাকিদের যেন আর কোনও বিরোধী জোট গড়ার সুযোগই না থাকে। সুড়সুড় করে আসতে হবে বিজেপির ছাতার তলায়। আর একান্ত সরকার না হলে রাষ্ট্রপতি শাসন। সেটিও মন্দ কী? রাশ কেন্দ্রের হাতে।”
এ এক বিরাট জুয়ার খেলা। হয় হিট, নয় মিস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy