বাজার থেকে স্কুলের পথে পড়ুয়ারা। ছবি: সানি গুপ্ত
স্কুলে মধ্যাহ্নভোজন তৈরি হবে, চাল-ডাল আনবে কে! শিশুদের কাঁধেই সেই দায়িত্ব চাপে। ছাতা মাথায় দিদিমণি সঙ্গে থাকেন বটে। কিন্তু রান্নার সামগ্রী বয়ে নিয়ে যেতে হয় ছাত্রদেরই!
ঘটনা শিলচর শহরতলির। ৯৮৭ নম্বর রংপুর নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা দোষ চাপান প্রধানশিক্ষক চন্দন কৈরির উপর। তাঁদের অভিযোগ, প্রধানশিক্ষক স্কুলে যান না বললেই চলে। তাঁরাই কোনওক্রমে শিশুদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। প্রতিদিন অল্প-স্বল্প চাল-ডাল কিনে নিয়ে রান্না করা হয়। স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নেই বলে ছাত্রদেরই সঙ্গে নিয়ে যান তাঁরা।
সরকারি বরাদ্দের চাল-ডাল কোথায় যায়, সে সব জানেন না তাঁরা। স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবাই বলেন— ‘‘আমরা শুধু নির্দেশ পালন করি। যে ভাবে বলা হয়, সে ভাবে দোকান থেকে জিনিস নিয়ে আসি।’’
চন্দনবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক। তাও কি শখে দায়িত্ব নিয়েছি! ওই স্কুলে কেউ দায়িত্ব নিতে চাইছেন না বলেই কর্তৃপক্ষ বাড়তি বোঝা হিসেবে তা আমার কাঁধে চাপিয়েছেন।’’
চন্দনবাবু আসলে দুধপাতিলের ৯৩৯ নম্বর শাস্ত্রীনগর নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের স্কুল ফেলে নিয়মিত এ দিকের দেখভাল করা সম্ভব নয়। তাই মধ্যাহ্নভোজনের ব্যাপারটা স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি জালাল আহমেদ লস্করই দেখেন। তিনিই বাজার করেন।’’
শিশুদের দিয়ে মধ্যাহ্নভোজন প্রকল্পের চাল-ডাল বাজার থেকে কেনার প্রশ্নই নেই বলে মন্তব্য করেন চন্দনবাবু। স্কুলশিক্ষকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর সাফাই, ‘‘এ কোনও ষড়যন্ত্র হতে পারে।’’ কিন্তু ছাত্রদের হাতে বাজারের প্যাকেট দেখা যায় কেন? চন্দনবাবুর জবাব, ‘‘সেগুলি ছাত্ররা বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যেতে পারে।’’
কাছাড় জেলা প্রাথমিক অফিসার হরেন্দ্রকুমার হাজরিকা বলেন, ‘‘বাজার থেকে জিনিস কিনে তা শিশুদের দিয়ে বহন করানো অপরাধ। মধ্যাহ্নভোজনের সামগ্রীর নির্দিষ্ট সরবরাহকারী রয়েছেন। এ ভাবে অল্প অল্প করে প্রতিদিন কেনার কথা নয়।’’ আগামী কাল তিনি স্কুলে সরেজমিনে যাবেন বলে হাজরিকা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত করা হবে। দোষী বলে যাঁরা চিহ্নিত হবেন, তাঁদের শাস্তি হবে।’’
তবে চন্দনবাবুর প্রতি কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা নিয়েও অভিযোগ অনেকের। কয়েক দিন আগেও তিনি একসঙ্গে চারটি স্কুলের প্রধানশিক্ষক ছিলেন। এ ব্যাপারে হাজরিকার বক্তব্য, ‘‘আমি গত বছরের ডিসেম্বরে এখানে কাজে যোগ দেওয়ার পর ওই পর্ব ফুরিয়ে যায়। আমি তাঁকে ৭২৪ নম্বর মধুরামুখ নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪০২ নম্বর দুধপাতিল নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। চেষ্টা চলছে, রংপুর নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়েও অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার।’’
প্রয়োজনে পরিচালন সমিতির সভাপতিদের বিরুদ্ধেও যে তিনি খড়্গহস্ত হতে পারেন, এই ইঙ্গিত দিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানান, অনিয়মের জন্য জেলার ১৭টি বিদ্যালয় পরিচালন সমিতি তিনি ভেঙে দিয়েছেন। সব ক’টির সভাপতির দায়িত্ব এখন তিনিই সামলাচ্ছেন। শীঘ্র সে গুলি পুনর্গঠিত হবে বলেও হাজরিকা জানিয়েছেন।
রংপুরের ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি জালাল আহমেদ লস্কর অবশ্য দাবি করেছেন, তিনিই মিড ডে মিল পর্ব দেখাশোনা করেন। বাজার নিজেই সামলান। ছাত্রদের দিয়ে তা করানো হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy