মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, নিহত ছাত্রনেতার পরিবার ওই অভিযোগ আগেই তুলেছিলেন। এ বার একই কথা বলল আলফা স্বাধীন। জঙ্গি সংগঠনের তরফে দাবি করা হল— ডিব্রুগড়ে ছাত্রনেতা সৌরভ বরার খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন অসম বিজেপির সভাপতি, তথা মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী সর্বানন্দ সোনোয়াল। তারা আঙুল তুলেছে হিমন্তবিশ্ব শর্মার দিকেও। কংগ্রেসের বক্তব্য, আলফার ওই বিবৃতি বিজেপির কফিনে শেষ পেরেক। বিজেপি পাল্টা জানিয়েছে, ভোটের আগে কংগ্রেসের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এই কাজ করেছে আলফা।
১৯৮৬ সালের ২৭ মে ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র নেতা সৌরভ বরাকে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন তৎকালীন আসু নেতা সর্বানন্দ সোনোয়াল, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার দিব্যহাস গোস্বামী, কুশেশ্বর শইকিয়া, মৃদুল দত্ত, রমেশ দত্ত ও বীরেন বরুয়া। সৌরভ নকশালপন্থী হিসেবে পরিচিত ইউনাইটেড রেভেলিউশনারি মুভমেন্ট কাউন্সিলের নেতা ছিলেন। ১৯৮৮ সালে সিবিআই ওই তদন্তের ভার নেয়। কিন্তু তারা ৫৮ জনের সাক্ষ্য নিয়ে যে চার্জশিট দেয় সেখানে হত্যাকারী হিসেবে কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি। খুনের কোনও প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না। তাই ২০১২ সালে গৌহাটি হাইকোর্ট সর্বানন্দকে হত্যার অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়। দিব্যবাবু, কুশেশ্বরবাবু ও মৃদুলবাবুও গত বছর ওই অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ২০১১ সালে রমেশ দত্ত মারা গিয়েছেন। ডিব্রুগড় জেলা আদালত বীরেনবাবুকে ২০০৯ সালে অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে।
আলফার তরফে আজ ই-মেল করে জানানো হয়, রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সুগম করতেই প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রনেতা সৌরভকে হত্যা করিয়েছিলেন সর্বানন্দ। শুধু তাই নয়, রাজ্য কাঁপানো ওই হত্যাকাণ্ডের দায় এত বছর পরে নিজের ঘাড়ে নিয়ে আলফা দাবি করে, গোটা হত্যাকাণ্ডের সময় সর্বানন্দ আলফা সদস্যদের সঙ্গেই ছিলেন। শুধু সৌরভ হত্যাকাণ্ড নয়, তিনসুকিয়া কলেজের ছাত্র ডিম্বেশ্বর গগৈ, আর্মকার নেতা অমিতাভ রাভা, মানবেন্দ্র শর্মা, কমলা শইকিয়া, শবনম কলিতার হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে আলফা বলেছেন, সে সবের সঙ্গেও সর্বানন্দ ও আসু নেতা হিমন্তবিশ্ব শর্মা জড়িত ছিলেন। আলফার সহকারী তথ্য ও প্রচার সম্পাদক ক্যাপ্টেন অরুণোদয় অসম ওই ই-মেলে আরও অভিযোগ করেছেন, মাজুলি থেকে অপহৃত সমাজকর্মী সঞ্জয় ঘোষের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও ওই দুই নেতা যুক্ত ছিলেন। অরুণোদয় আরও দাবি করেন, আলফাই সর্বানন্দকে আসুর সভাপতি করেছিল।
আলফার বক্তব্য, সেনাধ্যক্ষ পরেশ বরুয়াকে অন্ধকারে রেখেই আলফার কিছু সদস্যকে কাজে লাগিয়ে সর্বারা হত্যাকাণ্ডগুলি ঘটান। পরবর্তী কালে পরেশ তদন্ত করে প্রকৃত সত্য জানতে পারেন। অরুণোদয় বলেন, ‘‘এ ভাবে বিপ্লবী সংগঠনকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির কাজে লাগানো সর্বানন্দ, হিমন্তরা এখন গুপ্তহত্যার নায়ক প্রফুল্ল মহন্ত, চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি, পদ্ম হাজরিকাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে চাইছে।’’
কংগ্রেসের বক্তব্য, সর্বানন্দের অন্ধকার অতীত নিয়ে সকলেই অবগত। আলফার ই-মেল তাতেই স্বীকৃতি দিল। এর পর সর্বানন্দের মুখ্যমন্ত্রী হতে চাওয়ার নৈতিক অধিকার নেই। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, ‘‘হত্যাকাণ্ডে সোনোয়ালের যোগ নিয়ে অভিযোগ ছিল। কিন্তু প্রমাণের অভাবে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু ওই ঘটনার কারণেই তিনি জন্মস্থান ডিব্রুগড় থেকে কখনও লড়তে চান না।’’
সৌরভ বরার পরিবার এবং ইউনাইটেড রেভেলিউশনারি মুভমেন্ট কাউন্সিলের সদস্যরাও সম্প্রতি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছিলেন, সৌরভ খুনের বিচার চাই। ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সর্বানন্দের নির্বাচনে লড়ার প্রতিবাদও জানান তাঁরা।
নির্বাচনের মুখে প্রথমে গগৈ, তারপর সৌরভের পরিবার এবং আলফা ওই ঘটনা নিয়ে মুখ খোলার পিছনে রাজনীতির ছায়া দেখছে বিজেপি। ২৬ মার্চ মাজুলিতে সভা
করতে আসছেন নরেন্দ্র মোদী। মাজুলি থেকেই অপহৃত হয়েছিলেন সঞ্জয় ঘোষ। সর্বানন্দ, হিমন্তরা আলফার তোলা অভিযোগ উড়িয়ে দেন। দলের মুখপাত্র রূপম গোস্বামী বলেন, ‘‘সিবিআই ঘটনার তদন্ত করে সর্বানন্দের দোষ পায়নি। হাইকোর্টও তাঁকে সব অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে। এত দিন পরে হঠাৎ
আলফা সর্বানন্দকে কাঠগড়ায় তুলে নিজেদের দায় স্বীকার করছে কেন? গোটা ঘটনাক্রম থেকে পরিষ্কার, কংগ্রেসের সঙ্গে আলফার সম্পর্ক আছে। সেই আঁতাঁতকেই এ বার আমরা তুলে ধরব।’’
অবিভক্ত আলফার সহ-সভাপতি প্রদীপ গগৈ, আলোচনাপন্থী আলফার মুখপাত্র মৃণাল হাজরিকারাও আলফা স্বাধীনের বিবৃতিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন। মৃণাল বলেন, ‘‘ছাত্রনেতাদের হত্যার ঘটনায় এত দিন পরে দায় স্বীকারের কথা মনে হল আলফার? সৌরভ
বরা বা সঞ্জয় ঘোষদের হত্যা নিয়ে এত দীর্ঘ তদন্ত চলাকালীন কেন আলফা তাদের ভূমিকা মেনে নেয়নি? বিবৃতিতে বিশেষ ভাবে কংগ্রেস বিরোধী নেতাদের নাম নেওয়া হয়েছে। এবং কৌশলে বলা হয়েছে পরেশ বরুয়া কিছুই জানতেন না। এমন বিবৃতি খুবই হাস্যকর।’’ তাঁর মতে, আসুর সভাপতি কে হবেন তা ঠিক করে দেওয়াও আলফার কাজ নয়। বিবৃতির বয়ান থেকে স্পষ্ট কংগ্রেসের মদতেই আলফা এই কাজ করছে। এমন ঘটনা আলফার নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy