Advertisement
০৩ জানুয়ারি ২০২৫
Natasha Narwal

লড়াই চলতেই থাকবে, বললেন মুক্ত নাতাশারা

এক বছরেরও বেশি সময় পরে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে কিছুটা অবিশ্বাস্যই লাগছে, জেলের বাইরে এসে বলছিলেন নাতাশা ও দেবাঙ্গনা।

তিহাড় জেলের বাইরে আসিফ ইকবাল, দেবাঙ্গনা কলিতা, নাতাশা নারওয়াল। বৃহস্পতিবার। পিটিআই

তিহাড় জেলের বাইরে আসিফ ইকবাল, দেবাঙ্গনা কলিতা, নাতাশা নারওয়াল। বৃহস্পতিবার। পিটিআই

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২১ ০৮:০৬
Share: Save:

সন্ধে সাড়ে সাতটা। তিহাড় জেলের বাইরে জড়ো হওয়া ভিড়টা স্লোগান তুলছে, ‘‘দম হ্যায় কিতনা দমন মে তেরে, দেখ লিয়া হ্যায়, দেখেঙ্গে।’’ বন্ধু, পরিজন আর সতীর্থ সমাজকর্মীদের সেই ভিড়ের মাঝখানে ওঁরা তিন জন— নাতাশা নারওয়াল, দেবাঙ্গনা কলিতা এবং আসিফ ইকবাল তানহা। দিল্লি হাই কোর্ট জামিন মঞ্জুর করার প্রায় ৪৮ ঘণ্টারও পরে জেল থেকে বেরিয়ে ওঁরা বললেন, লড়াই চলবে। আমরা এখন আরও দৃঢ়সংকল্প।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠিত করে নাতাশারা দিল্লির হিংসায় ইন্ধন দিয়েছেন, এই অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করেছিল দিল্লি পুলিশ। অভিযুক্ত করা হয়েছিল বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ)-তে। আজ জেল থেকে বেরোনোর পরেও আসিফের মুখে ছিল ‘নো সিএএ, নো এনআরসি’ লেখা মাস্ক। বললেন, ‘‘গ্রেফতারির দিন থেকেই বলা হচ্ছিল, আমরা জঙ্গি। জেলে মার খেয়ে উঠতে-বসতে পারতাম না। মানবতার জন্য লড়ছি। সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। ভয় পাচ্ছি না।’’

গ্রেফতার হয়েছিলেন গত বছরের মে মাসে। এক বছরেরও বেশি সময় পরে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে কিছুটা অবিশ্বাস্যই লাগছে, জেলের বাইরে এসে বলছিলেন নাতাশা ও দেবাঙ্গনা। বাবার শেষকৃত্যের জন্য গত মাসে তিন সপ্তাহের জন্য প্যারোলে ছাড়া পেয়েছিলেন নাতাশা। ভাই আকাশ আজ এসেছিলেন তাঁকে নিতে। আকাশ বলেছিলেন, ‘‘আজ বাবারই তো ওকে নিতে আসার কথা ছিল।’’ বাবার কথা বলছিলেন নাতাশাও। আর সেই সঙ্গেই বললেন, ‘‘মনে রাখা উচিত, এখনও অনেকে জেলে বন্দি আছে। ভাবা উচিত, আমরা কোথায় পৌঁছেছি, যেখানে প্রতিবাদ আর সন্ত্রাসবাদের ভেদরেখাটা আবছা হয়ে যায়।’’ দিল্লি হাই কোর্ট তাঁদের জামিন দিতে গিয়ে যে এই কথাই বলেছিল, ‘পিঁজরা তোড়’ আন্দোলনের দুই সতীর্থ সেই খবর পেয়েছেন। তার জন্য হাই কোর্টকে ধন্যবাদও দিয়েছেন।

কিন্তু তাঁদের জামিনের বিরোধিতা করে দিল্লি পুলিশ তো সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। আগামিকাল বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত এবং বিচারপতি ভি রামসুব্রহ্মনিয়নের অবকাশকালীন বেঞ্চে তার শুনানি। চিন্তা হচ্ছে? দেবাঙ্গনা বললেন, ‘‘চিন্তা তো আছে। কিন্তু ভয় পাচ্ছি না। জেলে গিয়েও বেঁচে থাকা যায়। এই সব কিছুই মানুষকে শক্তি দেয়। আশা করি সুপ্রিম কোর্ট যথাযোগ্য রায়ই দেবে।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে অবশ্য মুখ খুলেছেন দু’জনেই। নিজেদের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে দেবাঙ্গনা বললেন, ‘‘এতেই বোঝা যাচ্ছে, সরকার কতটা মরিয়া।’’ আর নাতাশা বললেন, ‘‘ওরা শুধু আমাদের বন্দি করার ভয় দেখাতেই পারে। কিন্তু তা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সংকল্পকেই আরও দৃঢ় করবে।’’

আজ সকালেই দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি সিদ্ধার্থ মৃদুল এবং বিচারপতি অনুপ জয়রাম ভম্ভানির বেঞ্চ দায়রা আদালতকে তিন ছাত্রছাত্রীর কারামুক্তির বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলে। তার পরে করকরডুমার দায়রা আদালত নাতাশাদের অবিলম্বে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তিন ছাত্রছাত্রীর ঠিকানা ও জামিনদার সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করার জন্য আদালতের কাছে আরও সময় চেয়েছিল দিল্লি পুলিশ। অতিরিক্ত দায়রা বিচারক রবীন্দ্র বেদী তাঁর নির্দেশে বলেন, ‘‘জামিনদারেরা সকলেই দিল্লির বাসিন্দা। আমার পর্যবেক্ষণ হল, যাচাইয়ের প্রক্রিয়া গত কাল দুপুর ১টার মধ্যে হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। তদন্তকারী অফিসার বলেছেন, অভিযুক্তদের স্থায়ী ঠিকানা যাচাই করতে সময় লাগবে। কিন্তু সেটা ওই রিপোর্ট জমা না-পড়া পর্যন্ত তিন জনকে জেলে আটকে রাখার যুক্তিগ্রাহ্য কারণ হতে পারে না।’’ আদালত থেকে মুক্তির নির্দেশ বৈদ্যুতিন মাধ্যমে জেলে পৌঁছে যায়। দিল্লি হাই কোর্টের দুই বিচারপতিকে তা জানানো হয়। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘চমৎকার।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Natasha Narwal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy