প্রতীকী ছবি।
ভারতের ভোটেও ‘হাজির’ পাকিস্তান!
বালাকোট-পরবর্তী রাজনৈতিক চর্চায় নানা সময়েই আসছে পাকিস্তান প্রসঙ্গ। সোশ্যাল মিডিয়াতেও পাকিস্তান নিয়ে নানা ভুয়ো খবর ছড়িয়েছে গত কয়েক দিনে। একটি ঘরোয়া বৈঠকে কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিচ্ছেন বলে দাবি করে তার ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন শাসক বিজেপির সমর্থকেরা। গত কয়েক দিনে একাধিক বিজেপি সমর্থকের প্রোফাইল ও পেজ থেকে ভিডিয়োটি শেয়ার হয় ফেসবুক ও টুইটারে। এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে অপমান করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তাঁরা।
ভুয়ো খবর ধরার একটি সংবাদমাধ্যম ভিডিয়োটি পরীক্ষা করে জানায়, সেখানে বলা হচ্ছে, ‘ভাটিসাব জিন্দাবাদ’, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ নয়। পরীক্ষার পরে জানা যায়, ভিডিয়োটি ২০১৮-তে রাজস্থানের বিধানসভা ভোটের আগের। ওই ভোটে রাজসমন্দ কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন নারায়ণ সিংহ ভাটি। তাঁর সমর্থনেই কংগ্রেস সমর্থকেরা ওই স্লোগান দিয়েছিলেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কিন্তু ভারতের ভোট-প্রচারে পাকিস্তানের প্রসঙ্গ কেন? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক পার্থপ্রতিম বসু জানাচ্ছেন, এই সংস্কৃতি অবশ্য এ বারেই নতুন নয়। গুজরাতের বিধানসভা ভোটের আগেও মনমোহন সিংহের সঙ্গে পাকিস্তানের আঁতাতের অভিযোগ তুলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। পার্থপ্রতিমের কথায়, ‘‘শাসক দলের পক্ষে পাঁচ বছরে কাজের প্রতিশ্রুতি এবং যা হয়নি তার হিসেব-নিকেশ থেকে নজর ঘোরানোর পক্ষে এমন প্রসঙ্গ উপযুক্ত বলে তাঁরা মনে করছেন।’’
কেবল ভুয়ো স্লোগানই নয়, পতাকা ঘিরেও ছড়িয়েছে পাকিস্তানকে জড়িয়ে ভুয়ো খবর। কেরলের ওয়েনাড কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর ভোটে লড়ার কথা ঠিক হতেই কেরলে তাঁর সমর্থনে মিছিল বেরোয়। সেখানে একটি সবুজ পতাকাকে পাকিস্তানের পতাকা বলে দাবি করে কংগ্রেসকে আক্রমণ শুরু করেন বিজেপি সমর্থকেরা। হিন্দি, তেলুগুতে ফেসবুকে নানা পেজ, প্রোফাইলে ছড়ায় ভিডিয়োটি। ছড়িয়ে পড়ে হোয়াটসঅ্যাপেও। সেখানে ইংরেজিতে বলা হয়, ‘‘দেখুন ওয়েনাডে কারা পাকিস্তানের পতাকা হাতে উদযাপন করছে। এখন আপনারা বুঝতে পারছেন কেন কংগ্রেস এই কেন্দ্রটি বেছেছে।’’
তবে বাস্তবে ওই পতাকা আদৌ পাকিস্তানের ছিল না। ওই পতাকা ছিল কেরলে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী রাজনৈতিক দল, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ (আইইউএমএল) দলের। কেরল থেকে রাহুলের লড়ার খবর তখনও পাকা হয়নি। তার কিছুদিন আগেই তাঁরা রাহুলের সমর্থনে মিছিল করেছিলেন। সেই ভিডিয়োই ভুয়ো তথ্যের সঙ্গে জুড়ে ছড়ানো হয়। পার্থপ্রতিম বলছেন, ‘‘কাজের হিসেব নয়, জাতীয়তাবাদ ও দেশবিরোধিতার মতো বিষয়গুলি জুড়ে এ ভাবেই মানুষের কাছে পৌঁছনো যাবে বলে শাসক পক্ষ মনে করছেন। তাই এ ভাবে রাজনৈতিক প্রচার হচ্ছে।’’
এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি আসলে এখনকার সময়েই ফসল বলে মত পার্থপ্রতিমের। তিনি জানাচ্ছেন, দেড়-দু’দশক আগে ভোটের প্রচারে, এমনকি দেওয়াল লিখনেও যে তথ্য-পরিসংখ্যান আসত এখন তা অনুপস্থিত। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে গঠনমূলক সমালোচনা নয়, খুব কম পরিশ্রমে যে কোনও ভাবে বিরোধী মতকে আক্রমণ করা বা ট্রোল করাতেই মাতছেন সকলে। বিরোধীরাও এমন দোষ থেকে মুক্ত নয় বলে জানাচ্ছেন পার্থপ্রতিম। তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেসও অনেক দেরিতে ভোটের প্রচারে ভবিষ্যতের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মতো বিষয় এনেছে। তার আগে দীর্ঘদিন কেবল চৌকিদার চোর বলে প্রচার চলেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy