সনিয়া গাঁধীর বাবা ছিলেন ফ্যাসিস্ত সৈনিক। জওহরলাল নেহরুর ভ্রান্ত বিদেশনীতির ফলেই তৈরি হয়েছে কাশ্মীর সমস্যা। চিন ও তিব্বত নিয়ে সঙ্কটও নেহরু-নীতির ফল। বিজেপি নয়, এই মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে কংগ্রেসের মুখপত্রে। আর তার জেরে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।
‘কংগ্রেস দর্শন’ নামে বহু বছর যাবৎ মুম্বই কংগ্রেসের একটি মুখপত্র প্রকাশ হয়। তারই ডিসেম্বর সংখ্যায় দু’টি প্রতিবেদন নিয়ে হঠাৎই তোলপাড় পড়ে গিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। আজ আবার ছিল ১৩১ বছরের রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবস। দলীয় সদর দফতরে সকালে সনিয়া গাঁধী যখন পতাকা তুলছেন, ঠিক তখনই খবরের চ্যানেলগুলিতে হই হই করে চলেছে ওই মুখপত্রের দু’টি প্রবন্ধকে ঘিরে বিতর্কের খবর।
কী রয়েছে মুখপত্রে?
মুখপত্রের দু’টি বিতর্কিত প্রতিবেদনের একটি সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে। সেখানে বলা হয়েছে, সনিয়া গাঁধীর বাবা স্তেফানো মাইনো ইতালির ফ্যাসিস্ত সৈনিক ছিলেন। প্রথমে জীবনে বিমান সেবিকা হওয়ার ইচ্ছা ছিল সনিয়ার। ১৯৯৭ সালে তিনি কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্য হন। আর তার ৬২ দিন পরেই দলের সভানেত্রী পদের দায়িত্ব নেন। সেই সময়ে এক বার সরকার গঠনের ব্যর্থ চেষ্টাও তিনি করেছিলেন।
মুখপত্রের অন্য প্রতিবেদনটি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নীতি সংক্রান্ত। সেখানে কার্যত এটাই বলা হয়েছে যে, বহু বিষয়ে নেহরুর নীতি ছিল ভ্রান্ত। তা সে চিন হোক বা কাশ্মীর। ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছে, কাশ্মীর নিয়ে নেহরু যদি সর্দার পটেলের কথা শুনতেন তা হলে এই ঐতিহাসিক ভুল এড়ানো যেত। উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পটেল। তাঁর সঙ্গে নেহরুর মতান্তর লেগেই ছিল। এমনকী বহু বার ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন পটেল। প্রতিবেদকের নাম অবশ্য প্রতিবেদনগুলিতে লেখা নেই।
প্রতিষ্ঠা দিবসে দিল্লির কংগ্রেস দফতরে
মিষ্টিমুখ চলছে। ছবি: পিটিআই
স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেসের মুখপত্রে এই দুই প্রতিবেদন নিয়ে আজ ঘোর অস্বস্তিতে পড়ে যান কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান শেষে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সনিয়া বা রাহুল অবশ্য কোনও জবাব দেননি। তবে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘যারা এই প্রতিবেদনগুলি লিখেছে, তাদের হোমওয়ার্ক ঠিক নেই। নেহরুর নীতি খুবই সফল ছিল। ভারতীয় গণতন্ত্রকে মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে তাঁর অবদান ছিল অনবদ্য।’’ ঘরোয়া আলোচনায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা মুম্বই নেতৃত্বের মুণ্ডপাত শুরু করে দেন। মুম্বই কংগ্রেসের সভাপতি ও প্রাক্তন শিবসেনা নেতা সঞ্জয় নিরুপম পদাধিকার বলে ‘কংগ্রেস দর্শন’-এর সম্পাদক। বিতর্কের বিষয়টি প্রকাশ হতেই নিরুপম গোড়ায় দায় ঝেড়ে ফেলে বলেন,‘‘আমি নামে সম্পাদক। কী প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে তার তদারকি করি না।’’ তবে পরে বিতর্কের দায় নেন সঞ্জয়। সেই সঙ্গে ‘কংগ্রেস দর্শন’-এর কার্যনির্বাহী সম্পাদকের পদ থেকে সুধীর জোশীকে বরখাস্ত করে দল।
সন্দেহ নেই গোটা ঘটনায় মজা পেয়েছে বিজেপি। কারণ, নেহরু বা সনিয়াকে নিয়ে বিজেপি নেতারা মূলত যে সব সমালোচনা করেন সেগুলিই লেখা হয়েছে ‘কংগ্রেস দর্শন’-এ। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘আসলে সঞ্জয় নিরুপম তো আগে শিবসেনায় ছিলেন। তখন শিবসেনার মুখপত্র সামনা-র সম্পাদক ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই মনের কথাগুলো হয়তো কাট অ্যান্ড পেস্ট করেছেন তিনি। কংগ্রেস দর্শনের এত দিনে সত্য দর্শন হল।’’
তবে রাজনীতিকদের মতে, বিজেপি বা কংগ্রেসের মুখপত্রের এখন আর বিশেষ গুরুত্ব নেই। দলের শীর্ষ নেতারা এই সব মুখপত্রের পাতা উল্টেও দেখেন না। দলীয় ব্যবস্থায় কিছু লোককে খুশি রাখার জন্য এই সব মুখপত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেগুলি নিয়ম করে প্রকাশও হয়। তাই এই ধরনের বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়াটা বিচিত্র কিছু নয়। সাময়িক ভাবে দলের তাতে অস্বস্তি হয় ঠিকই। কিন্তু তাতে ব্যবস্থার পরিবর্তন হয় না। এ ক্ষেত্রেও সুধীর জোশীকে বরখাস্ত করা হল। কিন্তু এমন ভাবার কোনও কারণ নেই যে এ বার থেকে ‘কংগ্রেস দর্শন’ খুব খুঁটিয়ে দেখে প্রকাশ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy