অত্যাচারিত ও বিতাড়িত হয়ে ভারতে আসা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাগরিকদের শরণার্থী মর্যাদায় ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করল অসম কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্তের মতে, অত্যাচারিত হয়ে পালিয়ে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ভিত্তিবর্ষের প্রয়োজন নেই। কিন্তু আসু ও নেসো সাফ জানিয়ে দিল, অসম চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১-এর পরে আসা কোনও বিদেশির ভারই অসম বা উত্তর-পূর্ব আর নিতে পারবে না। স্রেফ ভোটের স্বার্থে বিদেশিদের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিভাজন চলবে না।
২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির পালের হাওয়া কাড়তে একই ভাবে হিন্দু বাঙালিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। হিন্দু বাঙালিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পক্ষে শিলচর ও গুয়াহাটিতে প্রকাশ্যেই সওয়াল করেছিলেন তিনি। গত বারের বিধানসভা নির্বাচনে বরাকে ১৫টির মধ্যে ১৩টি আসন পায় কংগ্রেস। এ বার, আগামী বছরের নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে এখন থেকেই কংগ্রেস মাঠে নামল।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত জানান, গত ২৫ মে দলের যে কার্যনির্বাহী বৈঠক হয়, সেখানেই অত্যাচারিত হয়ে ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এ ক্ষেত্রে কোনও ভিত্তিবর্ষ যে থাকতে পারে না, থাকা উচিত নয়—সে বিষয়েও সকলেই একমত। স্বাধীনতার পর থেকে যখনই এমন মানুষরা অসমে এসেছেন, তাঁরা মানবিকতার স্বার্থে নাগরিকত্ব পাওয়ার দাবিদার বলে অঞ্জনবাবু জানান। এ নিয়ে রাজ্য কংগ্রেস দিল্লিতে দলের হাইকম্যান্ডের কাছেও প্রস্তাব পাঠাবে। অর্থাত্ বিজেপি রাজ্যে যে তাস খেলে হিন্দু ভোট ব্যাঙ্ককে দখলে আনতে চাইছিল, কংগ্রেস আগেভাগেই সেই তাসটি খেলে দিল। ইতিমধ্যে, বরাকের চার কংগ্রেস বিধায়ক গৌতম রায়, কৃপানাথ মালাহ, জামালুদ্দিন আহমেদ ও মণিলাল গোয়ালা দাবি তুলেছেন, নাগরিক পঞ্জির ভিত্তিবর্ষ ২০১৪ সাল করতে হবে। ২০১৪ সালের ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নতুন এনআরসি তৈরি না হলে তাঁরা বরাকে ভোট বয়কটেরও হুমকি দিয়েছেন। অঞ্জনবাবু বলেন, এ নিয়ে দলের কোনও বক্তব্য নেই। এটা বিধায়কদের নিজস্ব দাবি।
দিল্লিতে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিজেপি হিন্দু বাঙালিদের তরফে লড়াই শুরু করেছে। রাজ্য বিজেপি মহলে শোনা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ভারতে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু বাঙালিদের ‘শরণার্থী’র মর্যাদা দেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরকে ভিত্তিবর্ষ ধরে একটি আইন প্রণয়ন করছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস আরও একটু এগিয়ে গিয়ে জানাল, শুধু হিন্দু নয়, এ দেশে আশ্রয় নেওয়া বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদেরও ভারতের নাগরিকত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনও ধরণের ভিত্তিবর্ষ রাখা চলবে না। অঞ্জনবাবু মোদী সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘ ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ২০১৪ সালের ১৬ মের পরে রাজ্যে থাকা সব বাংলাদেশিকে পালাতে হবে। কিন্তু গত এক বছরে তিনি একজনও বাংলাদেশিকে তাড়াতে পারেননি। উল্টে ৬০ বছরের উপরে ও ১৩ বছরের নীচে থাকা বাংলাদেশিদের জন্য ভিসার নিয়ম শিথিল করে, মাল্টিপল্ ভিসা প্রবর্তন করে বাংলাদশকে তোষণ করছেন।’’
অসম চুক্তি রূপায়ণ নিয়ে রাজ্যে যখন বিতর্ক চলছে, তখনই হিন্দু বাঙালিদের ক্ষেত্রে ভিত্তিবর্ষ তুলে দেওয়া কী অসম চুক্তিকে অগ্রাহ্য করার সামিল নয়? আসুর পরামর্শদাতা তথা উত্তর-পূর্ব ছাত্র সংগঠন নেসোর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে বিদেশিদের ক্ষেত্রে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগাভাগি চলবে না। ছ’বছর আন্দোলনের পরে অসম চুক্তি হয়। তাতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ১৯৭১-এর পরে অসমে আসা হিন্দু-মুসিলম সকলকেই রাজ্য ছাড়তে হবে। আমরা চুক্তির স্বার্থে ১৯৭১ অবধি আসা এতজন অতিরিক্ত মানুষের ভার নিয়েছি। কিন্তু আর সম্ভব নয়।’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘উত্তর-পূর্ব ভারতকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের স্থায়ী চারণভূমি বানাবার চক্রান্ত চলছে। কিন্তু অন্য কোনও রাজ্য তো অনুপ্রবেশকারীদের ভার বহন করছে না। ভারত সরকারের যদি মানবিকতা দেখাতে হয় তবে পড়শি দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের সব রাজ্যে করে আশ্রয় দেওয়া হোক।’’
এ দিকে মুখ্যমন্ত্রী গত কালই বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সফর কালে অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দিষ্ট আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।’’ তাঁর দাবি, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের বিষয়টিকে যেন প্রধানমন্ত্রীর আলোচ্য সূচিতে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি, অসমে বিদেশি চিহ্নিতকরণ আদালত যাদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করছে, তাঁদের যাতে বাংলাদেশ সরকার ফেরত নেয়, সেই বিষয়টিও বাংলাদেশ সফর কালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশ্চিত করতে হবে বলেও তিনি দাবি করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy