প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করে নোট–বাতিলের জেরে নিজের দেশের দুর্দশা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড। পুরনো নোট বদলে দিতে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রককে চিঠিও লেখে সে দেশের সরকার। কিন্তু দেড় মাস কেটে গেলেও এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না কেন্দ্রের। এর কারণ হিসেবে সরকারি একটা ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে এ দেশের ভোটের রাজনীতিও!
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, নোট বাতিলের ফলে দেশে যে নগদের অভাব তৈরি হয়েছে, সেটাকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘ঘরের ধাক্কা সামলে তার পরে প্রতিবেশী দেশের সমস্যার কথা ভাবা যাবে।’’
কিন্তু এহ বাহ্য। সূত্রের খবর, এই সিদ্ধান্তের পিছনে আসল কারণটি রাজনৈতিক। তা হল, মোদী বা বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বই চান না, উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগে নেপালের জনতার কাছে নতুন ভারতীয় ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোট আসুক। এ ব্যাপারে ‘ধীরে চলো’ নীতি নেওয়ারই নির্দেশ পেয়েছে অর্থ মন্ত্রক। কারণ, নেপালের ব্যবসা-বাণিজ্যে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির শীর্ষ নেতাদের বিপুল টাকা খাটে। অভিযোগটি অতীতে বারবার তুলেছে বিজেপি। বর্তমান সরকারের অর্থ মন্ত্রকের গোয়েন্দাদের রিপোর্টেও রয়েছে সেই তথ্য।
নেপালের সঙ্গে খোলা সীমান্তের কারণে উত্তরপ্রদেশের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে কাঠমান্ডুর একটি সমান্তরাল যোগাযোগ রয়েছেই। ব্যক্তিগত ভাবে সপা নেতা মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গে নেপালের রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের যোগাযোগও দীর্ঘদিনের। জরুরি অবস্থার সময়, মুলায়মের অনেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন নেপালে গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। অন্য দিকে, নেপালে সঙ্কট তৈরি হলে নেপালি কংগ্রেসের অনেক নেতাকেও বহু বার গোপনে আশ্রয় দিয়েছে মায়াবতী এবং মুলায়মের দল।
বিজেপি শীর্ষ নেতাদের মতে, ভোটের ঠিক আগে নেপালে জমা হওয়া ভারতের অচল নোট নতুন টাকায় বদলে দিলে তাতে মায়াবতী-মুলায়মদেরই হাত শক্ত হবে। নোট বাতিল করে এই নেতাদের প্রচারে ব্যবহৃত কালো টাকাকে অকেজো করে দিতে চেয়েছেন মোদী। এখন নেপালকে নতুন নোট দিলে, তারই একটি অংশ ফের হাত ঘুরে আসবে উত্তরপ্রদেশের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির কাছে।
সপা-বসপা অবশ্য একে মিথ্যা প্রচার বলে দাবি করছে। সপা-র এক শীর্ষ স্তরের নেতা আজ বলেন, ‘‘এই প্রচার একটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। এর কোনও ভিত্তিই নেই।’’ একই সুর মায়াবতীর দলেরও।
প্রশ্ন হল, কত অচল নোট রয়েছে নেপালে? তার কতটা উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিকদের?
অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, সাদা চোখে এর হিসেব পাওয়া কার্যত অসম্ভব। প্রধানমন্ত্রীকে ফোনে প্রচণ্ড জানিয়েছিলেন পরিমাণটা ‘বিপুল’। নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এনআরবি-র হিসেবে, সে দেশের আর্থিক ক্ষেত্রে ভারতের বাতিল নোটে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে। যদিও বাস্তবে অঙ্কটা অনেক বেশি বলেই অনুমান ভারতের। ভারত-নেপাল সীমান্তে মূলত ভারতীয় মুদ্রায় কেনাবেচা চলে। নেপাল থেকে ভারতে দিনমজুরি করতে আসেন অনেকে। চিকিৎসা বা তীর্থযাত্রার জন্য এবং ব্যবসা–বাণিজ্যের সঙ্গে
যুক্ত ব্যক্তিরাও নিয়মিত ভারতে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া, বহু নেপালির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-ও নেই নিজের দেশে। কিন্তু তাঁদের কাছেও বিপুল পরিমাণ বাতিল নোট
রয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে খবর। ফলে ঠিকঠাক হিসেব পাওয়া শক্ত।
দেড় মাস হতে চলল নেপালের রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্ক সে দেশের সমস্ত ব্যাঙ্ক, আর্থিক সংস্থা, মুদ্রা হস্তান্তর সংস্থার কাছে নিষেধাজ্ঞা পাঠিয়েছে, ভারতে বাতিল পুরনো নোট ব্যবহার না করতে এবং তাদের কাছে জমা দিতে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে ব্যবস্থাপনায় তারা পুরনো নোট বদলে নতুন নোট নেবে বলেই দেশের আর্থিক সংস্থাগুলিকে জানানো হয়েছে। কিন্তু ভারতের দিক থেকেই কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy