দু’দিন আগেই তাঁর নাম ‘পদ্মবিভূষণ’ সম্মানের জন্য ঘোষণা করেছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। আর আজই মহারাষ্ট্রে বিজেপির পরিত্রাতা হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বসলেন ‘মরাঠা স্ট্রংম্যান’ শরদ পওয়ার। শিবসেনা বিজেপির সঙ্গ ছাড়ার কথা ঘোষণা করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই!
শিবসেনা-বিজেপির পঁচিশ বছরের সম্পর্কে অনেক ওঠাপড়াই এসেছে। এখন আবার দুর্যোগের মুখে দু’টি দলের সম্পর্ক। শিবসেনা-প্রধান উদ্ধব ঠাকরে কাল ঘোষণা করে দিয়েছেন, তাঁদের দল আগামী দিনে মুম্বই-সহ মহারাষ্ট্রের সব পুরসভা, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েতের ভোটে একা লড়বে। রাজ্যের শিবসেনার মন্ত্রীরা ‘পকেটে ইস্তফাপত্র তৈরি’ রাখার কথা বললেও এখনই মহারাষ্ট্র সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার কথা অবশ্য বলেননি উদ্ধব। এরই মধ্যে আজ আসরে নেমে শরদ পওয়ার জানিয়ে দিলেন, সরকার বাঁচাতে বিজেপি যদি এনসিপি-র সমর্থন চায়, তবে তিনি তা বিবেচনা করে দেখতে পারেন। এত পুরনো জোটের সঙ্গত্যাগে তিনি ‘ব্যথিত’ বলেও জানিয়েছেন পওয়ার। এমন নয় যে, এই মুহূর্তে স্থানীয় নির্বাচনে পওয়ারের এনসিপি বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধতে চলেছে। কিন্তু উদ্ধব যাতে এখনই সরকারটি ফেলে না দেন, তাই নিজেদের সমর্থনটি আগেভাগে জানিয়ে রাখলেন এনসিপি নেতা।
বিজেপি সূত্রের মতে, এটি আসলে শিবসেনার উপরেই পওয়ারের চাপ বাড়ানোর কৌশল। আর শিবসেনা বলছে অন্য কথা। পওয়ারকে ‘পদ্মবিভূষণ’ দেওয়ার ঘোষণার পরেই উদ্ধব বলেছিলেন, এটি মোদীর ‘গুরুদক্ষিণা’। আজ পওয়ারের মুখে সমর্থন-প্রসঙ্গ সেই জল্পনাই জোরালো করে তুলল। কিছু দিন আগে এনসিপির প্রফুল্ল পটেলের বিরুদ্ধে সিবিআই হানা হয়েছে। তার পরেই পওয়ারকে ‘পদ্ম’ সম্মান। নরেন্দ্র মোদী যে নরমে-গরমে রেখে পওয়ারকে কাছে টানতে চাইছেন, সেটি বিলক্ষণ বুঝতে পারছে শিবসেনা। দলের এক নেতার মতে, মোদী বেশ কিছু দিন ধরেই পওয়ারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে চলছেন।
কিন্তু এখন এনসিপির সঙ্গে বিজেপির জোট বাঁধা মুশকিল। গত বিধানসভার পরেও পওয়ার বিজেপিকে সমর্থনের কথা বলেছিলেন। বিজেপি তা না নিয়ে শিবসেনার জন্যই অপেক্ষা করেছিল। তার উপরে খোদ পওয়ার-কন্যা সুপ্রিয়া সুলেই তীব্র বিজেপি-বিরোধী। তিনি চান, কংগ্রেসের সঙ্গেই থাকতে। বিজেপির নিজস্ব অসুবিধেও রয়েছে। কারণ, পওয়ার ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে বিজেপিই এত দিন প্রচার করে এসেছে। তাঁর ‘পদ্ম’প্রাপ্তি নিয়ে রাজ্য বিজেপি যথেষ্ট অস্বস্তিতে রয়েছে।
গত কালও শরদের ভাইপো অজিত পওয়ার স্থানীয় নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গেই সমঝোতা করার পক্ষে সওয়াল করেছেন। কংগ্রেসও সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছে। ফলে সব দলের কাছেই স্পষ্ট, পওয়ার আসলে বিজেপিকে সমর্থনের কথা বলে শিবসেনার উপরেই চাপটি বাড়িয়ে রাখলেন। কারণ, শিবসেনা যে আগামী দিনে মুম্বই-সহ স্থানীয় নির্বাচনগুলি একা লড়বে, সেটি প্রায় জানাই ছিল। ২০০২, ২০০৭, ২০১২— পরের পর নির্বাচনে শিবসেনার পাওয়া ভোটের হার কমলেও গত ১৯ বছর ধরে বৃহম্মূম্বই পুরসভা তাদের দখলে। কিন্তু ২০১৪-র বিধানসভা ভোটে উদ্ধবদের চেয়ে বেশি আসনে জিতে রাজ্য সরকারে বিজেপিই দাদার ভূমিকায় চলে এসেছে।
এমনকী, মুম্বইয়ের ৩৬ বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৫টি এখন বিজেপির হাতে। আর শিবসেনার ১৪টি। ফলে বৃহন্মুম্বই পুরসভার ভোটে বেশি আসনের জন্য চাপ রেখে আসছিল বিজেপি। আর উদ্ধব চান মুম্বই পুরসভায় একার জোরে শিবসেনার ‘দাদাগিরি’ ধরে রাখতে। সেটাই তাঁদের শেষ সম্বল। উদ্ধব জানেন, জোট হলে ২২৮টির মধ্যে শ’খানেকের বেশি আসন বিজেপিকে ছাড়তে হবে। টিকিট না পেয়ে দলের অনেকে বিদ্রোহী হতে পারেন। অঙ্ক কষেই তাই একলা চলার বাজি ধরেছেন উদ্ধব। কিন্তু শিবসেনার হঠকারিতায় রাজ্য যাতে অন্তর্বর্তী নির্বাচনের মুখে না পড়ে সেটাই নিশ্চিত করতে চাইলেন পওয়ার। কারণ, সিংহভাগ দলই এখন অকাল ভোট চাইছে না।
তবে রাজ্যে জোট সমীকরণ যা-ই দাঁড়াক, প্রয়োজনে পওয়ার যে বিজেপির পরিত্রাতার ভূমিকায় থাকছেন, সেই বার্তাটি দিয়ে বাকিদের স্নায়ুর চাপ বাড়ালেন তিনি। কংগ্রেস যখন মোদী-বিরোধিতায় রাজনৈতিক দলগুলিকে একজোট করছেন, তখন পওয়ারের মন্তব্য এক নতুন মোড়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy