শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ মন্ত্রিসভার সদস্যেরা। রবিবার নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতির বাসভবনে। ছবি: রয়টার্স।
নরেন্দ্র মোদী শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির হলে যে ‘মোদী, মোদী’ রব উঠবে, তা জানাই ছিল। ঘন নীল রঙের মোদী জ্যাকেটে নরেন্দ্র মোদী শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠে অতিথিদের সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে প্রণাম করলে যে ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনি উঠবে, তা-ও প্রত্যাশিতই ছিল।
রবিবাসরীয় রাষ্ট্রপতি ভবনের জনসমাগমে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাততালি ও জয়ধ্বনি কুড়োলেন বিজেপির অন্য দুই নেতা। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পৌঁছনোর আগেই যোগী অনুষ্ঠানে পৌঁছে যান। রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে বিশাল মাপের ডিজিটাল স্ক্রিনে যোগীকে দেখা যেতেই অনুষ্ঠানে হাজির বিজেপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী আনন্দে ফেটে পড়েন। উল্লাস দেখে বোঝার উপায় ছিল না, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির এ বার আসন সংখ্যা কমেছে। এবং তার জন্য যোগীর দিকেই দলের মধ্যে আঙুল উঠেছে। তা সত্ত্বেও যোগীকে দেখে জনতা যেভাবে উল্লাসে ফেটে পড়েছে, তেমন উত্তেজনা শাহরুখ খান, অক্ষয় কুমার থেকে রজনীকান্তের রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রাঙ্গণে ঢোকার সময়েও চোখে পড়েনি।
হাততালি ও উল্লাসের মাত্রায় যোগীকে ছাপিয়ে গিয়েছেন শিবরাজ সিংহ চৌহান। নরেন্দ্র মোদীর সামনেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথের পরে রাজনাথ সিংহ, অমিত শাহ, নিতিন গডকড়ী, বিজেপির বর্তমান সভাপতি জে পি নড্ডা শপথ নেন। তার পরেই শিবরাজ শপথ নেন। তাঁর নাম ঘোষণা হতেই রাষ্ট্রপতি ভবনের উঠোনে হাজির বিজেপির কর্মী, সমর্থকেরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। নির্মলা সীতারামন, এস জয়শঙ্কর ও এম এল খট্টরেরা শিবরাজের পরে শপথ নেন। মধ্যপ্রদেশে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিজেপিকে ফের ক্ষমতায় ফেরালেও শিবরাজকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়নি। এ বার শিবরাজকে মোদী তাঁর মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী করে নিয়ে এলেন।
শুধু মোদী, যোগী, শিবরাজকে ঘিরে উল্লাস বলে নয়। আজ রাষ্ট্রপতি ভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ছিল নির্বাচনী জনসভার আমেজ। সন্ধ্যা সওয়া সাতটায় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। তার আগে বারবার ঘোষণায় একটি কথাই মনে করে দেওয়া হচ্ছিল। তা হল, নরেন্দ্র মোদী টানা তিন বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করতে চলেছেন। সাত দশক পরে দেশের ইতিহাসে এই ঘটনা ঘটতে চলেছে।
শুধু শপথের অনুষ্ঠানে নয়। গোটা দিল্লি মোদীর ছবি-সহ হোর্ডিংয়ে মুড়ে দিয়ে আজ বিজেপি বোঝাতে চেয়েছে, লোকসভা ভোটে বিজেপির আসন কমে গিয়ে, বিজেপি নিজের জোরে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও মোদীই ফের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তা সে বিরোধীরা যতই সুযোগ পেলেই সরকার ফেলে দেওয়া বা অন্তর্বর্তী নির্বাচনের কথা বলুক। দিল্লি জুড়ে বিজেপির অধিকাংশ হোর্ডিংয়ে লেখা ছিল, ‘স্বপ্ন দেখানো নয়, স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেন বলেই দেশ বারবার নরেন্দ্র মোদীকে নির্বাচিত করে।’
আজ নরেন্দ্র মোদীর কনভয় যখন রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রাঙ্গণে ঢুকছে, তখন ঘোষণা হচ্ছিল, ‘শ্বাস বন্ধ করে রাখুন। নরেন্দ্র মোদী আসছেন।’ নরেন্দ্র মোদী যখন মঞ্চে উঠছেন, তখন তাঁকে ‘বিশ্বের জনপ্রিয়তম নেতা, জননেতা, জনসেবক’ বলে বর্ণনা করা চলছিল। মোদী মঞ্চে উঠতেই ‘মোদী, মোদী’ বলে জয়ধ্বনি শুরু হয়ে যায়। হাততালির আওয়াজ বাড়াতে ঘোষণা করা হয়, ‘আরও জোরে হাততালি দিতে হবে যাতে চাঁদ পর্যন্ত আওয়াজ পৌঁছে যায়।’’ উৎসাহের চোটে বিজেপির নেতা-কর্মীরা চেয়ারের উপরে দাঁড়িয়ে পড়েন। দেখে-শুনে এক অবসরপ্রাপ্ত আমলা বলেন, ‘‘এ তো রাষ্ট্রপতি ভবন না রামলীলা ময়দান, বোঝা যাচ্ছে না।’’
এই উল্লাসের মধ্যে এক জনই মুখ গোমড়া করে বসেছিলেন। তিনি স্মৃতি ইরানি। গত লোকসভা নির্বাচনে অমেঠীতে রাহুল গান্ধীকে হারিয়ে আসার পরে তাঁর দাপট ছিল দেখার মতো। এ বার সেই অমেঠীতেই গান্ধী পরিবারের প্রতিনিধি কিশোরীলাল শর্মার কাছে বিপুল ভোটে হেরে স্মৃতি মন্ত্রিসভা থেকেও বাদ পড়েছেন। অনুরাগ ঠাকুর মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেও তাঁকে হাসি মুখে বাকিদের সঙ্গে গল্প করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু স্মৃতির মুখে হাসি দেখা যায়নি।
আজ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সপরিবারে হাজির ছিলেন নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি বলে পরিচিত গৌতম আদানি। ছেলে অনন্ত অম্বানীকে নিয়ে এসেছিলেন মুকেশ অম্বানী। ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদী প্রশ্ন তুলেছিলেন, রাহুল গান্ধী সবসময় অম্বানী-আদানি নিয়ে সরব হলেও ভোট আসতেই তিনি অম্বানী-আদানি নিয়ে চুপ কেন? অম্বানী-আদানি কি কংগ্রেসকে টেম্পো ভর্তি করে কালো টাকা পাঠিয়েছেন? আজ শপথগ্রহণে দেশের দুই ধনীতম শিল্পপতিকে দেখে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ কটাক্ষ করেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী নিজেই দেশের দুই সবচেয়ে বড় শিল্পপতির বিরুদ্ধে টেম্পো ভরে কালো টাকা বিলি করার অভিযোগ তুলেছিলেন।’’
সন্ধ্যায় শপথগ্রহণের আগে রবিবার সকালে নরেন্দ্র মোদী রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানান। ‘সদৈব অটল’ বা অটলবিহারী বাজপেয়ীর স্মৃতিস্থলে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁকেও। রাষ্ট্রীয় সমর স্মারক বা ওয়ার মেমোরিয়ালে গিয়ে নিহত সেনানীদেরও শ্রদ্ধা জানান তিনি। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ মোদীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর সহযোগীদের তৈরি বিদ্বেষের আবহেই মহাত্মা গান্ধীর হত্যা হয়েছিল। ওঁর যে সব সঙ্গী নাথুরাম গডসেকে নায়কের মতো দেখেন, তাঁদের উনি বাধা দেননি। সংসদ চত্বরে গান্ধীর মূর্তি সরিয়ে, সিনেমা দেখে লোকে গান্ধীকে চিনেছে বলেছেন। মোদীকে দ্বিচারিতায় গোটা বিশ্বে কেউ টেক্কা দিতে পারবে না।’’
এ বার চারশো আসনে জিতে এলে মোদী সরকার সংবিধান বদলে দেবে, এই বিরোধীদের প্রচারে এ বার বিজেপির ভোট কমেছে। ফলপ্রকাশের পরে নরেন্দ্র মোদী এনডিএ-র সংসদীয় দলের বৈঠকে সংবিধান হাতে তুলে মাথায় ঠেকিয়েছিলেন। আজ রাহুল গান্ধী ওয়েনাড়ের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, ‘‘মোদীজি উত্তর ভারতে বড় ধাক্কা খেয়েছেন। এখন মাথা দিয়ে সংবিধান ভেঙে ফেলছেন!’’
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আনন্দের মধ্যেই সুর কেটেছে জম্মু-কাশ্মীরে তীর্যযাত্রীদের বাসে সন্ত্রাসবাদী হামলায়। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে মোদী সরকারকে নিশানা করে বলেন, ‘‘শান্তি ফেরানোর দাবি করে ছাতি চাপড়ানো এখন ফাঁপা মনে হচ্ছে।’’ শপথগ্রহণের আগে নিট পরীক্ষায় গণ্ডগোল নিয়ে কটাক্ষ করে রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর শপথের আগেই নিট পরীক্ষায় গণ্ডগোলে ২৪ লক্ষের বেশি পড়ুয়া ও তাদের পরিবার ভেঙে পড়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy