স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। —ফাইল ছবি।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে আটকে রয়েছে জনগণনার কাজ। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ সদ্য শুরু হলেও, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র কাজ কার্যত বিশ বাঁও জলে। সব মিলিয়ে আগামী দিনে একাধিক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিজের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেন অমিত শাহ।
গান্ধীনগরের সাংসদ অমিত শাহের কাছে এই মুহূর্তে যে চ্যালেঞ্জগুলি রয়েছে তার মধ্যে প্রশাসনিক দিক থেকে সম্ভবত ধারে ও ভারে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল জনগণনার কাজ শেষ করা। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ওই কাজ শুরু হলেও করোনা সংক্রমণের কারণে তা থমকে যায়। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় পাঁচ বছর। দেশের সর্বস্তরে জনগণনা করার দাবি উঠেছে। ওয়াকিবহাল শিবিরের বক্তব্য, দেশবাসীর আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বুঝতে, দেশের মানুষের জন্য ভবিষ্যৎমুখী সামাজিক পরিকল্পনাগুলি রূপায়ণ করার প্রশ্নে অন্যতম হাতিয়ার হল জনগণনার তথ্য। অথচ, দেশের সরকারের কাছে গত দেড় দশক ধরে কোনও তথ্য নেই। লোকসভার আগে হওয়া অন্তর্বর্তী বাজেটে সরকার জনগণনার জন্য ১২৭৭.৮০ কোটি ধার্য করেছিল। যদিও প্রয়োজন ১২ হাজার কোটি টাকা। সূত্রের মতে, চলতি অর্থবর্ষেই (২০২৪-২৫) প্রথমবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে হওয়া জনগণনার কাজ সম্ভবত এ বছরেই শুরু হয়ে যাবে। যার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে প্রায় তিন লক্ষ কর্মীকে। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশও দ্রুত জনগণনার কাজ শুরু করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন সরকারকে। তাঁর কথায়,‘‘আদমসুমারির মতো বিষয়টির সঙ্গে জড়িত রয়েছে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় মহিলাদের সংরক্ষণ দেওয়া ও সংসদীয় কেন্দ্রগুলির সীমানা পুনর্বিন্যাসের মতো কাজও।’’
জনগণনার কাজে অর্থ বা কর্মীর জোগানের মতো সমস্যাগুলি সে ভাবে অন্তরায় না হলেও, রাজনীতির অনেকের মতে আদমসুমারির কাজ যেই ঘোষণা হবে তেমনি দাবি উঠবে জাতিগত সমীক্ষার। বিশেষ করে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা যে ওই দাবি তুলে সরব হবেন তা এখন থেকেই স্পষ্ট। বাড়তি সমস্যা হল, শরিক নির্ভর বর্তমান মোদী সরকারের অন্যতম জোট সঙ্গী নীতীশ কুমার ইতিমধ্যেই নিজের রাজ্য বিহারে জাতিগত সমীক্ষার কাজ সেরে রেখেছেন। তিনি চান দেশ জুড়ে ওই সমীক্ষা হোক। বিজেপি নেতৃত্ব খুব ভাল করেই জানেন ওই সমীক্ষা হলে স্পষ্ট হয়ে যাবে দেশে ওবিসিরা মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। সেই মতো সরকারি শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে বাড়তি সংরক্ষণের দাবি করে সরব হবে ওবিসি সমাজ। সেই দাবি মেনে নিলে উচ্চবর্ণের ভোট ব্যাঙ্কের ক্ষুব্ধ হওয়ার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। যারা বিজেপির মূল ভোটার বলেই পরিচিত। অন্য দিকে জাতিগত সমীক্ষা না হলে ওবিসি ভোটার কংগ্রেস তথা বিরোধী ছাতার তলায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী দিনে জাতিগত সমীক্ষার প্রশ্নে অমিত শাহ ও তাঁর দল কোন পথে হাঁটেন তা এখন দেখার।
প্রায় পাঁচ বছর অপেক্ষার পরে সদ্য সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা মুসলিম ভিন্ন অন্য ছয় ধর্মালম্বীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু করেছে কেন্দ্র। ওই আইন প্রণয়নের লক্ষ্যই ছিল প্রতিবেশী তিন দেশ পালিয়ে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন ও পার্সি শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা। যাতে ভবিষ্যতে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি হলে ওই শরণার্থীদের সমস্যায় না পড়তে হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারের এনআরসি করার লক্ষ্যই ছিল মুসলিমদের নিশানা করে তাঁদের অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দিয়ে শরণার্থী শিবিরে পাঠানো। কিন্তু লোকসভার ফলে এই সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ওই এনআরসি আগামী দিনে আদৌও হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিজেপিতে। রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘আগামী দিনে নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ হয়তো চালু থাকবে। কিন্তু যে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে ওই নাগরিকত্ব প্রদান করার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল তা যতক্ষণ এনআরসি করা না হবে ততদিন কোনও লাভ পাওয়া যাবে না।’’ ওই নেতার আক্ষেপ, ‘‘বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়াই এনআরসি রূপায়ণের প্রশ্নে মূলত বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। আশঙ্কা এনআরসি শুরুর ঘোষণা হলে ওই নীতি মুসলিম বিরোধী বলে সমর্থন তুলে নিতে পারেন শরিকেরা।’’ এ কথা ঠিক চলতি নির্বাচনী ইস্তাহারে এনআরসি নিয়ে একটি শব্দ খরচ করেননি বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু অমিত শাহের কথা মতো সময়-সারণি ধরে এগোতে গেলে সিএএ-এর পরে এনআরসি হওয়ার কথা। কিন্তু শরিকি কাঁটার কারণে সেই এনআরসি চালুর ঘোষণা করার ঝুঁকি কি নিতে পারবেন অমিত শাহ, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy