হামলায় আহত জওয়ানকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন সহকর্মীরা। শনিবার তিনসুকিয়ায়।— নিজস্ব চিত্র
মণিপুর, নাগাল্যান্ডের পর অসমের তিনসুকিয়া।
সেনা কনভয়ে বিস্ফোরণ ঘটাল জঙ্গিরা। হামলা চালানো হল রকেট লঞ্চার, স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়েও। আজ ভোরে পেঙেরি এলাকায় ওই জঙ্গিহানায় নিহত হলেন তিন জওয়ান। জখম চার জন নিরাপত্তকর্মী। সন্দেহের তির আলফা (স্বাধীন) জঙ্গিদের দিকে।
অসমে সর্বানন্দ সোনোয়াল সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে এটাই প্রথম বড় মাপের জঙ্গি হামলা। এ জন্য গোয়েন্দা এবং রাজ্য সরকারের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছে বিরোধীরা।
মাত্র ৭২ ঘণ্টা আগে পেঙেরির ওই এলাকাতেই চা বাগানের একটি গাড়িতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই ঘটনায় এক জনের মৃত্যু হয়েছিল। জঙ্গিদের খোঁজে সেখানে তল্লাশি চালাচ্ছিল নিরাপত্তাবাহিনী।
পুলিশ ও সেনা সূত্রে খবর, আজ ভোর ৫টা নাগাদ পেঙেরি থেকে ‘১৫ কুমায়ুন রেজিমেন্ট’-এর জওয়ানরা ট্রাক ও জিপসিতে ডিগবয়ের দিকে রওনা হন। ওই রাস্তা যায় আপার ডিহিং সংরক্ষিত অরণ্যের মধ্যে দিয়ে। রাজ্য পুলিশের ডিজি মুকেশ সহায় জানান, সাড়ে ৫টা নাগাদ ঢেকিয়াজান এলাকায় জঙ্গলের রাস্তায় কনভয়ে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। রকেট লঞ্চার থেকে রকেট ছোঁড়া হয়। তার ধাক্কায় রাস্তার পাশে ছিটকে যায় ট্রাকটি। বিস্ফোরণে দুমড়ে যায় জিপসিও। স্প্লিন্টারে জখম হয়েও গাড়ি নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করেন চালক। তখনই রাস্তার দু’পাশের ঝোপে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, আন্ডার ব্যারেল গ্রেনেড লঞ্চার নিয়ে আক্রমণ শুরু করে। এলোপাথারি গুলির জবাব দেওয়ার সুযোগ পাননি জওয়ানরা। ট্রাকে আগুন লাগানোরও চেষ্টা করা হয়।
সেনা মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুনীত নিউটন জানান, ঘটনাস্থলেই মারা যান হাভিলদার মুলতান সিংহ। জখম হন নায়েক নরপত সিংহ, হাভিলদার ঋষিপাল সিংহ, জওয়ান বিক্রম চাঁদ, মনোজ সিংহ, সত্যেন্দ্র প্রতাপ সিংহ ও বীরেন্দ্র সিংহ। জখমদের ডিগবয়ে ইন্ডিয়ান অয়েলের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে নরপত সিংহ ও ঋষিপাল সিংহ মারা যান। বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাঁদের দিনজান সেনা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
মুকেশবাবু জানান, ওই হামলায় আলফা স্বাধীন জঙ্গিদের সাহায্য করেছে খাপলাং বাহিনী। জেলার এসপি মুগ্ধজ্যোতি মহন্ত বলেন, ‘‘১৫ নভেম্বর থেকে ওই জঙ্গলে অভিযান চলছিল। কিন্তু তার পরও নাশকতা ঠেকানো গেল না। ১৬ নভেম্বর এবং আজ একই দল হামলা চালিয়েছে কি না, তা দেখা হচ্ছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের নির্দেশে ঘটনাস্থলে যান ডিজি মুকেশ সহায়, আইজি আইন-শৃঙ্খলা মুকেশ অগ্রবাল, ডিআইজি বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা। পেঙেরির ঘটনার নিন্দা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তিনি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। অবিলম্বে ‘অল-আউট’ অভিযানের নির্দেশ দিয়ে সোনোয়াল জানান, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ‘জিরো-টলারেন্স’ নীতি নেওয়া হবে। প্রয়োজনে জঙ্গি হামলার ঘটনার তদন্তভার এনআইএকে দেওয়া হতে পারে।
উল্লেখ্য, ১৬ নভেম্বর পেঙেরি চা বাগান থেকে ডুমডুমা থানায় সাপ্তাহিক বেতনের টাকা নিতে যাওয়া গাড়িতে হামলা চালিয়েছিল আলফা স্বাধীন জঙ্গিরা। মারা যান এক যুবক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy