Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪

পুজোয় ছোটরা চাইছে চিনা পিস্তল

বৈদ্যুতিন দ্রব্যের বাজার বহুদিন থেকেই চলে গিয়েছে চিনের দখলে। পুজোর মুখে বরাক উপত্যকায় দেশি খেলনাকে একেবারে বাজার ছাড়া করে ছেড়েছে চিন। পুতুল থেকে পিস্তল— সবই ‘মেড ইন চায়না’। খেলনা শুধু খেলার সামগ্রী হয়ে থাকলেও হতো।

চিনা বন্দুক হাতে ছোটরা। হাইলাকান্দিতে। ছবি: অমিত দাস

চিনা বন্দুক হাতে ছোটরা। হাইলাকান্দিতে। ছবি: অমিত দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাইলাকান্দি শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:০৪
Share: Save:

বৈদ্যুতিন দ্রব্যের বাজার বহুদিন থেকেই চলে গিয়েছে চিনের দখলে। পুজোর মুখে বরাক উপত্যকায় দেশি খেলনাকে একেবারে বাজার ছাড়া করে ছেড়েছে চিন। পুতুল থেকে পিস্তল— সবই ‘মেড ইন চায়না’। খেলনা শুধু খেলার সামগ্রী হয়ে থাকলেও হতো। কিন্তু, চিনে তৈরি নকল পিস্তলের গুলির আঘাতে একের পর এক শিশু জখম হচ্ছে। তার জেরে অভিভাবকরা বেজায় চিন্তায় পড়েছেন।

বছর কয়েক আগেও হাইলাকান্দির বাজারে খেলনা বলতে শিশুরা বুঝত পুতুল, গাড়ি। পিস্তল ছিল বটে, তবে তা ছিল প্লাস্টিক বা টিনের তৈরি। নখদন্তহীন ক্যাপ ফাটানোর যন্ত্র মাত্র। যার ‘ফটাফট’ শব্দই শিশু-কিশোরদের আমোদের পক্ষে যথেষ্ট ছিল। কিন্তু, এখন শিশু-কিশোররা শুধু চাইছে আসল পিস্তল বা রাইফেলের আদলে চিনে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্রের অবিকল মডেল।

হাইলাকান্দির এক দোকানি জানালেন, কেবল্ টিভি ও ইন্টারনেটের দৌলতে এখন বিভিন্ন ধরণের আগ্নেয়াস্ত্রের মডেল চিনেছে ছোটরা। চিনা রাইফেল-পিস্তলেও অবিকল সেই সব মডেল ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। তাতে ভরা যায় ম্যাগাজিন। পরপর শক্ত প্লাস্টিকের গুলি ছোঁড়া যায়। যা শরীরে লাগলে রীতিমতো ব্যথা লাগে। চোখে লাগলে বিপদ নিশ্চিত। এমন এক একটি খেলনা বন্দুকের দাম দু’হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ী হরিসাধন পাল জানালেন, তাঁরা এ সব খেলনা গুয়াহাটি এবং কলকাতার বাজার থেকে কিনে আনেন। তাঁর কথায়, ‘‘আগে আমরা দেশে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খেলনা এনে পুজোয় বিক্রি করতাম। কিন্তু আজকাল ব্যবসায় লাভ করতে হলে চিনা খেলনা বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই।’’

গ্রাম ও চা বাগানে খেলনা বিক্রি করেন সীতারাম বাউরি। তিনি বলেন, ‘‘শিশুরা আর আগের মতো ঢাক, বাঁশি, পুতুল, ডুগডুগি খোঁজে না। সকলেরই খেলনা পিস্তল চাই।’’

খেলনা বিক্রেতা শরিফউদ্দিনের মতে— এ অনেকটা বিনা যুদ্ধে বরাক জয়ের মতো ব্যাপার। বরাকের পুজোর বাজারে দেশীয় দ্রব্যের কোনও কদরই নেই।

গত দুর্গাপুজোয় লালা এবং হাইলাকান্দিতে চিনে তৈরি খেলনা পিস্তলের গুলির আঘাতে জখম হওয়ার ডজনখানেক ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু, এই ব্যাপারে প্রশাসন কার্যত হাত পা গুটিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ।

হাইলাকান্দির বিলাইপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রাণেশ দাস জানান, গত বছর পুজোয় তাঁর ৯ বছরের ছেলে লালা শহরে গিয়েছিল। সেখানে অন্য শিশুদের খেলনা বন্দুক থেকে ছোঁড়া গুলি ছেলের চোখে লাগে। চোখ মারাত্মক জখম হয়েছিল।

লালার শিক্ষক শিবনারায়ণ রবিদাস বাজারে এ ভাবে চিনা দ্রব্যের রমরমার নেপথ্যে গভীর ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘উত্তর-পূর্বের কচিকাঁচাদের মাথায় অপরাধ-প্রবণতা বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে চিন। তাই, কিশলয় মনের দখল নিতে মারণাস্ত্রের আদলের খেলনা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর মতে, গোটা উত্তর-পূর্ব জুড়ে জঙ্গিদের তাণ্ডব চলছে। জঙ্গিদের আসল অস্ত্র দিয়ে মদত যোগাচ্ছে চিন। অন্য দিকে, একেবারে শিশুকাল থেকেই কচি মনে অস্ত্রের প্রতি আসক্তি ছড়ানোর ষড়যন্ত্র করেই ভারতের বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নকল আগ্নেয়াস্ত্র। এতে কিশোর মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। লড়াই-প্রতিশোধ-হত্যাকে অন্যায় বা অসামাজিক ঘটনা নয়, বরং খুব স্বাভাবিক দৈনন্দিন ঘটনা বলেই মনে করছে তারা। ঠাকুর দেখতে বেরিয়েও বাচ্চারা হাতে রাখছে পিস্তল। এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়ছে। অন্যকে ব্যথা দিয়ে আনন্দ পাচ্ছে। তার উপর ইন্টারনেট, কেবল টিভি বা সিনেমায় লাগাতার হিংসার ছবি তো চলছেই।

পুলিশ ও শুল্ক দফতর সূত্রে খবর, আইনসিদ্ধ পথে এই সব খেলনা ঢোকে না। মায়ানমার সীমান্তবর্তী মণিপুরের মোরে শহর চিনা দ্রব্যের খোলা বাজারে পরিণত হয়েছে। তার অপর দিকে রয়েছে মায়ানমারের তামু। সেখান থেকে এক দিকে জঙ্গিদের জন্য ঢুকছে আসল রাইফেল-পিস্তল-গ্রেনেড। অন্য দিকে, খোলা বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নকল পিস্তল-রাইফেল।

ভারত-মায়ানমারের মধ্যে যে বাণিজ্য চুক্তি হয়েছিল— সেখানে ৪০ রকম জিনিস লেনদেনের উল্লেখ ছিল। কিন্তু, মোরে সীমান্তে জঙ্গিদের কথাই চূড়ান্ত। নিয়ম ভাঙাই সেখানে দস্তুর। তাই, ব্যবসায়ীরা আইন মেনে ব্যবসার ছাড়পত্র পেলেও, মোরে-তামুর বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে জঙ্গিদের হাতেই। তাদের ইচ্ছামতো জিনিসই সীমান্তে কেনাবেচা হয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy