Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪
কৃতিত্ব তাঁদেরই,দাবি মোদীর

দুর্নীতিতে ভারতকে ছাড়াল চিন, বলছে রিপোর্ট

সংস্কার ও সহিষ্ণুতা নিয়ে অভিযোগের তিরে বিদ্ধ নরেন্দ্র মোদীর এখন এক মাত্র ভরসা— তাঁর দুর্নীতিমুক্ত সরকারের দাবি। দিল্লি হোক কিংবা কাশ্মীর— নিজের সাফল্যের ঢাক পেটাতে বার বার জোর গলায় সেই দাবিটাই করে যেতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:২১
Share: Save:

সংস্কার ও সহিষ্ণুতা নিয়ে অভিযোগের তিরে বিদ্ধ নরেন্দ্র মোদীর এখন এক মাত্র ভরসা— তাঁর দুর্নীতিমুক্ত সরকারের দাবি। দিল্লি হোক কিংবা কাশ্মীর— নিজের সাফল্যের ঢাক পেটাতে বার বার জোর গলায় সেই দাবিটাই করে যেতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে।

মোদীর এই দাবিতে ইন্ধন জুগিয়ে ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল’-এর রিপোর্ট জানিয়েছে, দুর্নীতির প্রশ্নে ভারতের থেকে এগিয়ে রয়েছে চিন। দুর্নীতির সূচকে বিশ্বের ১৭৫টি দেশের একটি ক্রমতালিকা তৈরি করে এই সংগঠন। কোন দেশে দুর্নীতি কত কম, সেই সূচকের হিসেবের তালিকায় ভারত রয়েছে ৮৫-তম স্থানে। বেশ কিছুটা পিছিয়ে থেকে চিনের জায়গা হয়েছে ১০০-তম স্থানে।

অর্থনীতির বহর বা শিল্পায়নের নিরিখে না হোক, দুর্নীতির মাপকাঠিতে অন্তত চিনকে পিছনে ফেলতে যারপরনাই আহ্লাদিত নরেন্দ্র মোদী সরকার। গতকাল দিল্লি ইকনমিক্স কনক্লেভেও সংস্কারের কথা বলতে গিয়ে তাঁর দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের কথা টেনে এনেছিলেন মোদী। আজ চিনকে পিছনে ফেলে দেওয়ার কথা জানার পরে কাশ্মীরে গিয়েও তিনি এ বিষয়ে বড়াই করার সুযোগটা হাতছাড়া করেননি। শ্রীনগরের অনুষ্ঠানে মোদী বলেন, ‘‘গত ৫০ বছরে প্রথম বার ভারত চিনকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। আগে আমরা ৯৫-তম স্থানে ছিলাম। এখন রিপোর্ট এসেছে, প্রশাসনের পারদর্শিতা আসায়, দুর্নীতি দূর করার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করার পরে আমরা ৯৫ থেকে ৮৫-তম স্থানে পৌঁছে গিয়েছি। ১৭ মাসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এত বড় লড়াই করে দেখিয়েছে ভারত।’’

গতকালও দিল্লির ইকনমিক্স কনক্লেভে মোদী দাবি করেছিলেন, ইউপিএ-সরকার যেখানে দুর্নীতিতে ডুবে ছিল, সেখানে তাঁর সরকারের কঠোর সমালোচকরাও দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারেনি। স্পেকট্রাম থেকে কয়লা বণ্টনে ইউপিএ-র বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রচুর অভিযোগ উঠেছিল। সেই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে এসেছে মোদী সরকার। তবে মোদীর জমানায় দুর্নীতির অভিযোগ যে একেবারে ওঠেনি, তা নয়। ললিত মোদীর সঙ্গে সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা রাজের যোগাযোগ, মধ্যপ্রদেশের ব্যপম কেলেঙ্কারি নিয়ে সংসদও অচল হয়েছে। কিন্তু বিজেপি নেতাদের যুক্তি, ললিতকে সুষমার সাহায্যের অভিযোগ নৈতিকতা-অনৈতিকতার প্রশ্ন। দুর্নীতির নয়। বসুন্ধরা বা ব্যপম কেলেঙ্কারিও কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতি নয়। কাজেই প্রধানমন্ত্রীর দাবির মধ্যে কোনও খাদ নেই।

মোদী বা বিজেপি নেতারা যা-ই দাবি করুন, তথ্য কিন্তু বলছে গত ৫০ বছরে এই প্রথম নয়। এর আগে ১৯৯৬ সালেও দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে চিনের আগে ছিল ভারত। তার ১৮ বছর পরে আরও একবার চিনকে পিছনে ফেলে দিল ভারত। এর পিছনে কারণ অবশ্যই ভারতের এগিয়ে যাওয়া। তবে তাৎপর্যপূর্ণ, কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত চিন কিন্তু গত ১৮ বছরে এক ধাক্কায় বেশ খানিকটা পিছিয়ে গিয়েছে। চিনের প্রশাসন-সেনা-শাসক দলের মধ্যেও দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের নেতৃত্বে সে দেশেও গত দু’বছরে দুর্নীতি রুখতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার সরকারি পদস্থ অফিসারদের কড়া শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

যে দেশ একেবারে দুর্নীতিমুক্ত, তাকে ১০০ শতাংশ নম্বর দিয়ে তালিকা তৈরি করে ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল’। এই তালিকায় অবশ্য কোনও দেশেই একশোয় একশো পায়নি। আর ভারত পেয়েছে মাত্র ৩৮ নম্বর। চিন তার
থেকে মাত্র দু’নম্বর কম পেয়েছে। ১৭৫টি দেশকে নিয়ে তৈরি করা এই তালিকায় সামগ্রিক ভাবেও ভারত বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে। সবচেয়ে দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে প্রথম স্থানে রয়েছে ডেনমার্ক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড এবং ফিনল্যান্ড। আর সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে যৌথ ভাবে শেষ সারিতে জায়গা পেয়েছে সোমালিয়া এবং উত্তর কোরিয়া।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy