মুড়ি হোক বা ভাত, একটু পাঁপড় থাকলেই খাওয়া হয়ে যায়। অনুষ্ঠানবাড়িতে আবার যতই পোলাও, কালিয়া হোক না কেন, শেষপাতে পাঁপড়-চাটনির সঙ্গত ছাড়া অনেকেরই তৃপ্তি হয় না।
উত্তর বা দক্ষিণ ভারতের নানা প্রান্তেই পাঁপড় খাওয়ার চল। দক্ষিণ ভারতে চালের পাঁপড় জনপ্রিয়, রাজস্থানে বেসনের পাঁপড়ের চল বেশি। আবার পঞ্জাবিরা খান বিউলির ডালের পাঁপড়। এ সবের পাশাপাশি এখন রসুন, পেঁয়াজ, লঙ্কা, কাঁচা আম-সহ নানা রকম স্বাদের পাঁপড় বিক্রি হয়।
তবে অনেকেই প্রতি দিন ভাতের সঙ্গে পাঁপড় খান। বিশেষত অবাঙালিদের মধ্যে এমন চল বেশি। অনেকেই মনে করেন পাঁপড় হজমে সহায়ক। তা ছাড়া পাঁপড় তো আর ‘ফাস্ট ফুড’ গোত্রে পড়ে না!
কিন্তু নিয়মিত পাঁপড় খাওয়া কি আদৌ ভাল? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, সকলের জন্য সব খাবার ঠিক নয়। তা ছাড়া কে, কোন পাঁপড় খাচ্ছেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক অনন্যা ভৌমিক বলছেন, ‘‘কেউ যদি পাঁপড় সেঁকে খান তা হলে সমস্যা নেই। এটি ক্ষতিকরও নয়। তবে নিয়মিত তেলে পাঁপড় ভেজে খাওয়া স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়।’’
একটি পাঁপড়ে মোটামুটি ৩৫-৪০ ক্যালোরি থাকে, বেসনের পাঁপড় হলে থাকে কিছুটা প্রোটিন, সামান্য ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট এবং সোডিয়াম।
অসুবিধা কখন?
কারখানায় তৈরি পাঁপড়ে অনেক সময় বাড়তি মাত্রায় নুন ব্যবহার হয়। সোডিয়াম জরুরি হলেও, অতিরিক্ত নুন স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়। বিশেষত, শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বেশি হলে তো নয়ই।
আরও পড়ুন:
বেসন, ডাল, চালের পাঁপড় ছাড়াও নানা রকম রঙের, গন্ধের পাঁপড় বেশ জনপ্রিয়। কোনওটিকে বলা হচ্ছে চিংড়ির পাঁপড়, কোনওটি তৈরি বিট দিয়ে, কোনওটি আবার কাঁচা আম দিয়ে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, আদৌ এগুলি কাঁচা আম বা চিংড়ি দিয়ে তৈরি হচ্ছে কি না, প্রশ্ন থাকতে পারে। অনন্যার কথায়, পাঁপড়ে যদি রাসায়নিক, কৃত্রিম রং মেশে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হয়, তা হলে স্বাস্থ্যে কুপ্রভাব পড়তে পারে।
কেউ কেউ পাঁপড় ভাজেন ছাঁকা তেলে, বেশি তাপমাত্রায়। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় স্টার্চ জাতীয় খাবার থেকে অ্যাক্রিলামাইডের মতো যৌগ তৈরি হয়, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তবে পুষ্টিবিদ বলছেন, ছাঁকা তেলে না ভেজে আঁচ কমিয়ে পাঁপড় সেঁকে নিলে সেই ভয় থাকে না।
তা হলে সকলেই কি নিয়মিত পাঁপড় খেতে পারেন?
পাঁপড় ক্ষতিকর না হলেও, এতে থাকা নুন কখনও কখনও কারও কারও জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। অনন্যা সতর্ক করছেন, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে পাঁপড় এবং তার সঙ্গে নোনতা আচার খাওয়ার প্রবণতা ক্ষতিকর হতে পারে। তেমন কোনও সমস্যা না থাকলে দিনে এক বা দুটো স্যাঁকা পাঁপড় খাওয়ায় ক্ষতির কোনও ভয় নেই।