কী করেন?
মাছ-ভাত ছেড়ে রেস্তঁরায় সাহেবি খাবার খাওয়ার নাম ছিল বিলাসিতা! এমনই চলে এসেছে সেই ‘কোম্পানির আমল’ থেকে। অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বিলাস-ভোজনের ব্যাখ্যার মোড় ঘুরিয়েছেন। এখন ঘরের সাহেবি খানা ছেড়ে তাঁর সাজানো রেস্তঁরায় ডাল-ভাত খেতে যাচ্ছেন লন্ডনবাসী! বিশ্বের দরবারে বাঙালি কায়দার ভোজ তুলে ধরার প্রয়াস আজকের নয়। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় রেস্তঁরায় বসিয়ে বাঙালি রান্না খাওয়ানোর প্রথম পদক্ষেপ। ৩২ আসনের ‘ওনলি ফিশ’ থেকে শুরু তাঁর যাত্রা। পরের বছর চালু হল প্রথম ‘মেনল্যান্ড চায়না’। স্পেশ্যালিটি রেস্তঁরা লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা-কর্তা আর থামেননি। দেশের নানা প্রান্তে ‘মেনল্যান্ড চায়না’-র সাফল্যের পর ছড়িয়ে পড়ে বাঙালি খাবারের রেস্তঁরা ‘ওহ! ক্যালকাটা’। শহর কলকাতা অভিজাত রেস্তঁরায় বসে বাঙালি খাবার খেতে শুরু করে।সঙ্গে তাজাকিস্তান থেকে দোহা-দুবাই, ঢাকা— সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এ শহরের রান্না।
কেন?
বাবা ছিলেন বিজ্ঞানী। খাদ্যরসিক আর অতিথিপরায়ণও। সাজিয়ে-গুছিয়ে বাঙালি খাবার খাওয়াতেন অতিথিদের। সেই থেকেই অতিথি আপ্যায়নের দিকে নজর তাঁর পুত্রের। ক্যাটারিং নিয়ে লেখাপড়ার পর কর্মসূত্রে মুম্বই। যেখানে আশির দশকে সাধারণ মাছের ঝোল-ভাত পাওয়া ছিল অতীব কঠিন। ইচ্ছা হল ভিন্ রাজ্যে বাঙালি খাবার খাওয়াবেন রেস্তঁরায় বসিয়ে। বিজ্ঞানীর সন্তান রসায়ন না চর্চা করুন, রসনা নিয়ে গবেষণায় মজলেন। বিশ্ব-জুড়ে ভারতীয় খাবার বলতে অধিকাংশ চিনতেন উত্তরপ্রান্তের রসনা। কিন্তু জগৎসভায় বঙ্গের রান্নার চাহিদা পোক্ত করা চালিয়ে যাচ্ছেন অঞ্জন।মায় সাহেবদেরও এনে ফেলেছেন ডাল-ভাত-শুক্তোয়।
আর কী?
সিনেমা দেখেন। তবে অবসরেও রসনা নিয়েই ভাবেন। নেটমাধ্যমে রান্না শেখায় বিশ্বাসী নন। রান্না করতে হবে হাতেকলমে। যেমন নতুন পঞ্জাবি পদের খবর পেলে রওনা দেন চণ্ডীগঢ়। পথের ধারের ধাবায় ঘুরে নতুন রান্না শেখেন।
এর পর?
লন্ডনের ‘চৌরঙ্গি’র সাফল্য উৎসাহ বাড়িয়েছে। এ বছরই আমেরিকার হিউস্টনে চালু হতে চলেছে আর একটি ‘চৌরঙ্গি’। আমেরিকা এবং কানাডার বিভিন্ন শহরে বাঙালি রান্না ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।