Advertisement
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘ক্ষতটা দেখে মনে হয় আমি সুপারহিরো’

অভিনয়ে আসা, স্ট্রাগল, অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজের মত জানালেন রোহন ভট্টাচার্য‘স্ট্রাগল’ শব্দটির সঙ্গেও পরিচিতি তখন থেকেই। ‘‘স্টুডিয়োর বাইরে নিজের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম।

রোহন

রোহন

স্বর্ণাভ দেব
শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০১
Share: Save:

রাস্তায় বেরোলেই ভক্তদের ভিড় তো থাকেই, কিন্তু এক পাঁচতারা হোটেলে ডিনারে গিয়ে সংশ্লিষ্ট হোটেলের ম্যানেজারের সেলফি তোলার আবদারে বেশ চমকে গিয়েছিলেন তিনি। কথা হচ্ছে ‘ভজগোবিন্দ’ ধারাবাহিকের গোবিন্দ অর্থাৎ রোহন ভট্টাচার্যর। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ছবিতে নায়ক হিসেবে কাজ করলেও গোবিন্দই জনপ্রিয়তা দিয়েছে রোহনকে। তাঁর অভিনয়ে আসার ঘটনাও অদ্ভুত। বাবা মানিক ভট্টাচার্য গণনাট্য সংগঠনের পাশাপাশি প্রফেশনাল থিয়েটার করতেন। কিন্তু তেমন সাফল্য পাননি। তাই ইচ্ছেপূরণের সোপান হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ছেলেকেই। রোহন জানালেন, ‘‘বাবা ছোটবেলা থেকেই আমাকে সিনেমা দেখতে নিয়ে যেতেন। সেখান থেকেই সিনেমার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। নায়ক হওয়ার জন্য মার্শাল আর্টও শিখতে শুরু করি। বাংলার অধিনায়কত্বও করেছি। পরে জাতীয় স্তরের খেলাতেও সুযোগ পেয়েছিলাম।’’ মার্শাল আর্টের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হলেও অভিনয়ের প্রতি প্যাশন কমেনি কখনওই। তারই সুবাদে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অভিনয়ে ডিপ্লোমা করেন।

এর পরই শুরু হয় কাজের খোঁজ। ‘স্ট্রাগল’ শব্দটির সঙ্গেও পরিচিতি তখন থেকেই। ‘‘স্টুডিয়োর বাইরে নিজের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে সুযোগও পেয়ে যাই। তখন সারা রাত কাজের শেষে অপেক্ষা করতাম কখন ভোর হবে। বাড়ি ফেরার বাস ধরব। জুনিয়র আর্টিস্টদের তো কেউ মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না। বাড়ি ফিরে বাথরুমে ঢুকে কাঁদতাম। সেই কঠিন সময় পেরিয়ে এলেও ভুক্তভোগী তো! তাই জুনিয়র আর্টিস্টদের সঙ্গেও বন্ধুর মতো মিশি,’’ বললেন রোহন। এমনকী টাকার বিনিময়ে নায়ক হওয়ার প্রস্তাবও পেয়েছিলেন। কিন্তু নিজের যোগ্যতার উপর আস্থা রেখেই লড়াই জারি রেখেছিলেন রোহন। হঠাৎই ‘বসুন্ধরা’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান অডিশন দিয়ে। আর ঘুরে তাকাতে হয়নি রোহনকে। তার পরেই ‘জাল’, ‘জামাইবরণ’, ‘ব্ল্যাকমেল’, ‘বাজিকর’, ‘নীললোহিত’ ছবিতে কাজের সুযোগ পান। ‘মন শুধু তোকে চায়’-এর প্রোমোতে রোহনকে দেখে ‘ভজগোবিন্দ’র জন্য অডিশনে ডাকা হয়। বদলে যায় রোহনের কেরিয়ার গ্রাফ।

তা, আপনার পরিচিতি তো গোবিন্দ হিসেবে। খারাপ লাগে না, ব্যক্তি রোহনকে কেউ চেনেন না? ‘‘না, কারণ গোবিন্দকে তো আমিই তৈরি করছি।’’ দিনে প্রায় ১৬ ঘণ্টা শ্যুটিং‌য়ের জন্য দমদমের পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে গড়িয়ায় থাকছেন এখন। কাজের চাপে বুঝে উঠতে পারছেন না, পিসতুতো বোনের বিয়েতে যেতে পারবেন কি না। উঠে আসে রমাপ্রসাদ বণিকের প্রসঙ্গ। ‘‘জানেন, শুরুর দিকে রমাদা বলেছিলেন, ‘আমি জিতকে বলেছিলাম, তোমাকেও বলছি, তোমার হবে। লেগে থাকো।’ আজ উনি বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন।’’ তৃপ্তি ঝরে পড়ে রোহনের গলায়। আর অনুপ্রাণিত হন নিজের সাহসিকতাতেই। ‘‘যখন ‘নীললোহিত’-এর শ্যুটিং করছিলাম, দুর্ঘটনায় হাত ভেঙে গিয়েছিল। তবু শ্যুট বন্ধ করিনি। ভেবেছিলাম, ছবির কাজ যদি বন্ধ হয়ে যায়! সেই দাগ রয়ে গিয়েছে এখনও।’’ প্রতিবেদককে সেটা দেখিয়ে বললেন, ‘‘আমি চাই এই দাগটা যেন মুছে না যায়। এই ক্ষতটা দেখলে মনে হয়, আমি সুপারহিরো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE