মানালি দে।
পয়লা বৈশাখ! জন্মদিন আর দুর্গাপুজো ছাড়াও নতুন জামা উপহার পাওয়ার দিন। সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠেই পাট ভাঙা সুতির জামার গন্ধ। তার পরে সারাদিন ধরে ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া। লুচি, আলুর তরকারি, ধোঁয়া ওঠা ভাত, পাঠার মাংস , পঞ্চপদে পেটপুজো হত সে দিন। কিন্তু আমার চোখ তো ঘড়ির কাঁটার দিকে। শুধু সন্ধে হওয়ার অপেক্ষা। সূর্য ডুবলেই নতুন জামা পরে দিদার হাত ধরে হালখাতা করতে বেরতাম। সেই আনন্দটাও কিন্তু দুর্গাপুজোয় ঠাকুর দেখতে যাওয়ার মতোই ছিল। কোন কোন দোকানে যাওয়া হবে, পয়লা বৈশাখের কিছু দিন আগে থেকেই সেই তালিকা তৈরি হয়ে যেত। এর পরে সব দোকান ঘুরে মিষ্টির বাক্স জমানোর পালা। কোন বাক্সে কী কী মিষ্টি আছে, সারা রাস্তা সে কথা ভাবতে ভাবতেই বাড়ি ফিরতাম। সে এক অন্য রকম রোমাঞ্চ! বাক্স খুলতেই নিমকি, গজা, লাড্ডু, কালোজামের মতো মিষ্টির গন্ধ! আর তার সঙ্গেই বাহারি সব ক্যালেন্ডার। কোন ক্যালেন্ডার রাখা হবে, কোনটা আত্মীয়দের দিয়ে দেওয়া হবে, সেই নিয়েও বেশ একটা বৈঠক বসত।
এ তো গেল মিষ্টি আর ক্যালেন্ডারের কথা। আরও একটা জিনিসের জন্য মুখিয়ে থাকতাম ওই দিনটায়। কাচের বোতলে ভরা রং–বেরঙের ঠান্ডা পানীয়। ছোটবেলায় সব সময়ে হাতের নাগালে এ সব পেতাম না। পয়লা বৈশাখে সেই পানীয়তে চুমুক বয়ে আনত একরাশ আনন্দ। আমাদের ছোটবেলায় হয়ত উৎসবের আড়ম্বর ছিল না, খুব দামি বা কায়দা করা জামাকাপড়ও ছিল না। তবে যা ছিল, তা সবটাই নিখাদ। সাদামাঠা আনন্দে ভরে থাকত সেই দিনটা।
ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পরে আর সে ভাবে এই দিনটা পালন করতে পারিনি। কাজের মধ্যেই কেটে গিয়েছে উৎসব। তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাঙালির এই উৎসবকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছি আমরা সকলে। চেষ্টা করেছি। বিয়ের পরে এই আমার প্রথম পয়লা বৈশাখ। নানা কাজে অভিমন্যু বা বাড়ির কারও জন্যই কিছু কেনাকাটা করা হয়নি। তবে সময় বার করব। নতুন জামাও কিনব।
এখন আর হালখাতা নেই। বাক্স খুলে প্রিয় মিষ্টি খোঁজার সুযোগও নেই। তবে স্মৃতি আছে। কাছের মানুষেরা আছেন। অতিমারির এই বছরে নতুন আগামীর স্বপ্ন নিয়ে তাঁদের সঙ্গেই কাটবে পয়লা বৈশাখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy