Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

এবিজি ক্ষতই ভাবনা তৃণমূলের

শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে পণ্য খালাসকারী সংস্থা এবিজির হলদিয়া ছাড়া দিয়ে। অভিযোগ উঠেছিল, শাসকদল তৃণমূলের চাপে পড়ে হলদিয়া ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল এবিজি। কাজ হারিয়েছিলেন বহু কর্মী। শুধু এবিজি কেন, আস্তে আস্তে ঝাঁপ বন্ধ হল রেণুকা সুগার, রোহিত ফেরোটেকের মত কারখানারও।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০২:১৬
Share: Save:

শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে পণ্য খালাসকারী সংস্থা এবিজির হলদিয়া ছাড়া দিয়ে।

অভিযোগ উঠেছিল, শাসকদল তৃণমূলের চাপে পড়ে হলদিয়া ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল এবিজি। কাজ হারিয়েছিলেন বহু কর্মী। শুধু এবিজি কেন, আস্তে আস্তে ঝাঁপ বন্ধ হল রেণুকা সুগার, রোহিত ফেরোটেকের মত কারখানারও।

পুরনো কারখানা বন্ধ তো হল। আবার নতুন কোনও সংস্থা কারখানা খুলতে উদ্যোগীও হল না। আর এই বিষয়টিকেই হাতিয়ার করে ভোটের ময়দানে বাম-কংগ্রেস জোট।

২০১২ সালের অক্টোবর মাসে এবিজি শ্রমিকদের এসএমএসের মাধ্যমে ছাঁটাই নোটিস দিয়ে হলদিয়া ছেড়েছিল। সেই সময় কাজ হারিয়েছেন ভবানীপুরের মনোহরপুরের বনমালী ভুঁইয়া। সংসার চালাতে এখন তাঁর ভরসা রাজমিস্ত্রির কাজ। ইট গাঁথতে গাঁথতে তিনি বলেন, ‘‘নতুন সরকারের আমলে নতুন কারখানা আসেনি। পুরনো কারখানাটাও বন্ধ হয়ে গেল। আমাদের সংসার কেমন করে চলবে কেউ ভেবেছে? এর প্রভাব তো ভোট যন্ত্রে পড়বেই।”

রেণুকা সুগার আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেনি। তবে ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে ঠিকাদারদের সঙ্গে নতুন করে চুক্তিও করেনি তারা। ফলে সেদিন থেকে প্রায় ৪০০ কর্মী কাজ হারিয়েছেন। কী বলছেন রেণুকা সুগারের কাজহারা কর্মীরা? হলদিয়ার গান্ধীনগরের শেখ আলি হোসেনের কথায়, ‘‘বাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। সংসার চালাতে সমস্যায় পড়েছি। নতুন সরকারের আমলে নতুন কারখানা তো আসেনি। উল্টে কিছু কারখানা বন্ধ হয়েছে।’’

হলদিয়ার রোহিত ফেরোটেক লিমিটেড নামে ফেরো ম্যাঙ্গানিজ তৈরির কারখানায় গত বছর ১ জুলাই সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিশ দিয়েছে মালিকপক্ষ। কারণ হিসেবে জানানো হয়েছিল, বিদ্যুতের মাসুল বেশি আর শ্রমিক কর্মচারীদের অনায্য দাবি-দাওয়াকেই। সেখানকার কর্মীরাও বলেন, ‘‘সরকার চাইলে বিদ্যুতের দাম কমিয়ে রোহিত ফেরোটেককে চালু রাখার সুযোগ দিতে পারত। কিন্তু সরকার আমাদের পেটে লাথি মেরেছে।’’

তাহলে গত পাঁচ বছরে কোনও কাজই হয়নি হলদিয়ায়?

হলদিয়ার তৃণমূল প্রার্থী মধুরিমা মণ্ডল জবাব নিয়ে তৈরিই ছিলেন। বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের পাশাপাশি সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী জেলার পাশাপাশি হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাছাড়াও আমাদের দল পরিচালিত পুরসভাও এলাকায় উন্নয়ন করেছে। হলদিয়াতে নতুন নতুন বিনিয়োগ আসছে।’’

মধুরিমা মণ্ডলের কথার রেশ টেনে তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীও বলেন, ‘‘সিপিএম আমলে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে দূষণে নতুন শিল্প কারখানায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেই নিষেধাজ্ঞা তোলার ব্যবস্থা করেছি। ইতিমধ্যে হলদিয়ায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ এসেছে। ২২০০ কোটি টাকার সিইএসসির বিদ্যুৎ কারখানা চালু হয়েছে। তাছাড়াও ২০০০কোটি টাকার আইপিসিএলের বিদ্যুৎ কারখানার কাজ চলছে, ৪২০০ কোটি টাকার আইওসির নতুন প্রকল্প হচ্ছে, ৪০০ কোটি টাকার এক্সাইডের সম্প্রসারণ, ১২০ কোটি টাকার হিন্দুস্থান ইউনিলিভারের সম্প্রসারণের কাজ হচ্ছে। আইওসির হলদিয়া-বারাউনি-পারাদ্বীপ পাইপ লাইনের কাজ হচ্ছে। হলদিয়ায় ফ্লাইওভারের শিলান্যাস হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, সিপিএম আমলেই এইচএফসি, হিম কন্টেনার, সওয়ালেশ, সাইমন ইস্পাতের মত কারখানা বন্ধ হয়েছিল। সাইমন ইস্পাত সম্প্রতি স্টেট ব্যাঙ্ক অধিগ্রহণ করেছে। সেই কারখানা চালুও হবে দ্রুত।

বন্ধ কারখানা খোলার বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? শুভেন্দুবাবু উত্তর, ‘‘রেণুকা সুগার ও রোহিত ফেরোটেক সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। রেণুকা সুগার বন্ধের জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দায়ী। তারা চিনির কাঁচামালের ওপর আমদানি কর বাড়িয়ে দেওয়ায় রেণুকা সুগার সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। রোহিত ফেরোটেকও বিদ্যুতের মাসুল বৃদ্ধির কারনে সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।’’


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

আর এবিজি? তাঁর বক্তব্য, “এবিজির বিষয়ে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আরপিএস কাহালো যা বলেছিলেন সেটাই আমার বক্তব্য।”

তবে হলদিয়ায় লড়াইটা এ বার জোরদার। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হলদিয়ায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোট প্রার্থী ১১ হাজার ৯২৪ ভোটে এগিয়েছিলেন। আর ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভোট শতাংশ কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। সেখানে ২০১৪ তে বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছিল ধরে নিয়ে দেখা যাচ্ছে ভোট কমেছে মাত্র এক শতাংশ।

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লক্ষণ শেঠ সিপিএমেই ছিলেন। এবারে লক্ষ্মণ শেঠ নতুন দল গঠন করে হলদিয়ায় প্রার্থী দিয়ে ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন।

হলদিয়ায় উন্নয়নের অভাবই যে তাঁর তুরুপের তাস সেকথা এক বাক্যে স্বীকার করেছেন বাম-কংগ্রেস জোটের সিপিএম প্রার্থী তাপসী মণ্ডল। তাঁর কথাতেও তার ছাপ স্পষ্ট। বলেন, ‘‘গত পাঁছ বছরে নতুন ক’টা কোম্পানি এখানে এসেছে মনে করে বলতে পারবেন? সিইএসসির কারখানার কাজ বাম আমলে শুরু হয়েছিল। শিল্পাঞ্চলের মানুষ এর জবাব দেবেন।”

অপেক্ষা ১৯ তারিখের।

অন্য বিষয়গুলি:

Haldia assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy