সান্ধ্য আড্ডা।— নিজস্ব চিত্র
মনোতোষের মন ভাল নেই।
সারা দিন খেটেখুটে রাতে পাড়ার মোড়ে বন্ধুদের সঙ্গে একটু খোলামেলা আড্ডা দেওয়া মনোতোষের বহুদিনের অভ্যাস। কিন্তু ইদানীং আড্ডা মেরে তেমন জুত হচ্ছে না।
হবে কী করে?
মনোতোষ ঢুকলেই সবাই সতর্ক ভাবে কথা বলতে শুরু করে। ভোটের এই রমরমা বাজারে তখন সকলে ব্যবসার মন্দা, গরম, সব্জির দামের মতো হাবিজাবি নিয়ে কথা বলবে। কিন্তু ভোট নিয়ে ‘স্পিকটি নট’।
দোষ অবশ্য পুরোটা বন্ধুদের নয়। এক মাসেরও বেশি ধরে, মানে সেই ভোট শুরু হওয়া ইস্তক নানা জটিল অঙ্ক কষে তৃণমূল ঠিক কতগুলো আসন পেয়ে দ্বিতীয় বার সরকার গড়বে, তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করে চলেছে মনোতোষ। তার নিজস্ব ‘সংখ্যাতত্ত্ব’ বলছে, তৃণমূল ২১৭টা আসন পাচ্ছেই।
রাতের আড্ডায় বন্ধুদের সেই অঙ্ক কাগজে-কলমে বোঝানোর চেষ্টা করত মনোতোষ। প্রথম প্রথম ধৈর্য ধরে শুনলেও পরের দিকে সে কলম হাতে নিলেই হাসাহাসি। আগে তর্ক-বিতর্কও নেহাত কম হয়নি। ইদানীং তাকে দেখলেই বন্ধুদের মুখে কুলুপ। আড়ালে তাকে ‘দু’শো সতেরো’ বলে ডাকাও শুরু হয়েছে।
এ হেন হিসাবে নবদ্বীপ শহরের অতি বড় তৃণমূল সমর্থকেরও আস্থা নেই। মনোতোষকে অবশ্য তাতেও দমানো যায়নি। নবদ্বীপের তাঁতকাপড় হাট লাগোয়া রাস্তায় এক চিলতে রেডিমেডের দোকান। সামনে পাতা চৌকির ধারে পা ঝুলিয়ে বসে কাগজ- কলম নিয়ে রোজই সে হিসেব কষে চলেছে। চারপাশে স্তুপীকৃত ওড়না, চুড়িদার। খদ্দের আসছে যাচ্ছে। তার ভ্রূক্ষেপ নেই।
এতটা খারাপ অবস্থা না হলেও গোটা তল্লাট এখন অনেকটাই ভোট-জ্বরে কাবু। লোকাল ট্রেনের ভিড়ে ঠাসা কামরা থেকে নাটমন্দিরে কথকতার আসর—চর্চার বিরাম নেই। এবং এঁদের অমেকেই ফের বদলের গন্ধ পাচ্ছেন। স্টেশনে হাঁটতে-হাঁটতে তৃণমুলের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা যেমন স্রেফ নাকচ করে দিলেন সেচ দফতরের প্রাক্তন কর্মী সুকুমার বারিক— “ধুর মশাই! পঞ্চাশ শতাংশ ডিএ বাকি রেখে কেউ ভোটে জিততে পারে! তবে ওরা সূর্যকান্তকে জিততে দেবে না। মুখ্যমন্ত্রী হবেন অধীর।”
এত ক্ষণ কথায় সায় দিলেও এ বার রে-রে করে উঠলেন আর এক প্রবীণ অচিন্ত্য হালদার— “আপনি দেখছি কিছুই বোঝেন না! তেমন কিছু হলে মুখ্যমন্ত্রী সুজন চক্রবর্তী।” এই অবধি শুনেই স্টেশনের এক ফিচেল হকার হেঁকে উঠল, “পাগলের ভাল করো মা!” তার পরে দু’জনকে শুনিয়ে আর এক হকারের উদ্দেশ্যে — “বুঝলি, দিদি এ বার ক্ষমতায় ফিরলে সরকারি হাসপাতালে বিনে পয়সায় পাগলের চিকিৎসার বন্দোবস্ত হবে।”
নবদ্বীপের জোটপ্রার্থী, সিপিএমের সুমিত বিশ্বাসের সেনাপতি প্রবীণ আমিন আলি বলেন, “যুদ্ধ শেষ। আমরা করব জয়।” বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী পুণ্ডরীকাক্ষ ওরফে নন্দ সাহার সেনাপতি তথা পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা প্রায় মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে উড়িয়ে দিচ্ছেন বিরোধীদের আশা। তাঁর দাবি, “আমরা ক্ষমতায় ফিরছিই। আর নবদ্বীপে সর্বকালের সেরা ফল হবে।”
প্রচার পর্বে ধারে-ভারে নন্দ সাহা যতটা এগিয়ে ছিলেন তাতে যদি বা তিনি না-ও হারেন, মার্জিন কমাটাই কিন্তু প্রায় হারের সামিল হবে। এই কথাটা যে নবদ্বীপের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, তা বোধহয় বিমানকৃষ্ণেরা ভালই জানেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy