চা হাতে চলছে আড্ডা। — নিজস্ব চিত্র
আইপিএলে কেকেআর তালিকার শীর্ষে। কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে আন্দ্রে রাসেল শেষ ওভার বল করতে এসে তিনটে উইকেট তুলে নিয়ে জয় ছিনিয়ে আনল। কিন্তু সে সব নিয়ে ভোটের বাজারে আলোচনা নেই।
অন্য সময় হলে যে কোনও দিন ব্যাট হতে মাঠে নামেননি তিনিও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠতেন। ভোটের বাজারে পিছিয়ে পড়েছে আইপিএলও। বরং চায়ের দোকানে, সেলুনে, পাড়ার ঠেকগুলিতে সর্বত্রই চলছে ভোট নিয়ে আলোচনা।
বহরমপুর কেন্দ্রের ফল কী হবে অথবা মুর্শিদাবাদে ২২টি আসনে কে ক’টা জিতবে— তা নিয়েও কোনও হেলদোল নেই বহরমপুরের মানুষের। তাঁদের আলোচনা নবান্নে কাদের পতাকা পতপত করে উড়বে! বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু তাই নিয়েই চলছে তুমুল তর্ক-বিতর্ক।
বহরমপুর ভূমি সংস্কার দফতরের পাঁচিল ঘেঁষা চায়ের দোকান রোজই খুলে যায় সকাল-সকাল। বাঁধাধরা খদ্দেরের ভিড়ই বেশি। প্রতি ঘণ্টায় পাল্টে যায় খদ্দেরদের মুখের ভিড়। চায়ের গেলাসে চুমুক দিয়েই এক জন বলে ওঠেন, ‘‘সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেপি সকলেই সকলের তরে, আমরাই শুধু পরের তরে।’’
কথাটা মনে ধরে উঠতি যুবকের। তিনি বলেন, ‘‘ঠিক বলেছেন। কিন্তু পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদল হলে আমাদের গুরত্ব থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলিও ভয়ে থাকবে। দশ বছর মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়ার আগে ১০ বার ভাববে!’’ পাশ থেকে অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাঙ্ককর্মী বলেন, ‘‘বহরমপুর নিয়ে কোনও আলোচনা হবে না। এখানে দাড়িওয়ালাই ফের জিতবে। চারদিকে যা আলোচনা চলছে তাতে বিজেপি দু’নম্বরে এবং তৃণমূল থাকবে তিন নম্বরে।’’
এক শিক্ষক বলেন, ‘‘বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী ভগ্নাংশে এগিয়ে আছে বলা হলেও বদল হওয়ার লক্ষণ কোথায়! বদল যদিও বা হত, কিন্তু এ বার জোটের বাতাবরণ রয়েছে। সিপিএমের সকলেই যে জোটের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে, তা কিন্তু নয়। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস এখানে নিজেই একক ভাবে শক্তিশালী। ভোটের মার্জিন কমলেও জিতবে কংগ্রেসই।’’
আলোচনায় এল কোচবিহারে উদয়ন ঘোষের উপস্থিতিতে বুথের ভেতরে ছাপ্পা বা রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বুথে ঢুকে পোলিং অফিসারদের হুমকি। মাঝবয়সী এক জন বললেন, ‘‘ভোটের আগে বলেছি, এখনও বলছি, জোট ১৩৫ আসন পাবে। পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি আসনের মধ্যে ১২টি তৃণমূল পাবে। চারটে জোট পেতে পারে।’’ তাঁকে উদ্দেশ করে দাদা গোছের এক জন বললেন, ‘‘মাথা কি একেবারেই গিয়েছে!’’ চারপাশে হাসির রোল উঠল।
কোনও আলোচনাতেই বহরমপুর আসন নিয়ে কিন্তু কথা হচ্ছে না। ‘‘কী-ই বা কথা হবে বহরমপুর নিয়ে’’ —বিস্ময় এক উঠতি নেতার গলায়। সেলুনে চুল কাটাতে এসে এক যুবক বলছিলেন, ‘‘বহরমপুরের প্রার্থী একটি কলেজের অধ্যক্ষ। কিন্তু ভোটে জিততে গেলে যে সংগঠন থাকা দরকার তা কোথায় শাসক দলের?’’ তিনি বলেন, ‘‘তবে প্রচারের দিক থেকে তৃণমূল অনেক এগিয়ে আছে। প্রচারের দিক থেকে জোটপ্রার্থীর ঘাটতি ছিল। বাড়ি-বাড়ি প্রচারও সে ভাবে হয়নি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণেই হয়তো হয়েছে। পুরসভা নির্বাচনে যা হয়, সেটুকুও বিধানসভা ভোটে প্রচার হয়নি।’’
বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতি এখনও বামফ্রন্টের দখলে। পুরসভা কংগ্রেসের দখলে। অঙ্কের বিচারে জোটপ্রার্থী এগিয়ে আছেন। এর পরেও কোনও অঘটন ঘটলে সেটা আলাদা কথা। কিন্তু জোটপ্রার্থীর ও শাসক দলের প্রার্থীদের ভোটের কারিগরেরা কিন্তু জয়ের ব্যাপারে একশো শতাংশ আশাবাদী। জোটের প্রার্থী, কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তীর নির্বাচনী এজেন্ট কেশবচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করতে যাব কেন বলুন তো?’’ শাসক দলের প্রার্থী সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন তাঁর স্বামী কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়। কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘শেষ কথা মানুষ বলবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy