মায়ের সঙ্গে রাত্রি। ছবি: উদিত সিংহ।
ভোট শেষ। কিন্তু, বর্ধমানে হিংসার রাজনীতি চলছেই। এ বার ভাতারে সিপিএমের বুথ এজেন্টের বাড়িতে ভাঙচুর, বোমাবাজি। অভিযুক্ত শাসক দল। বোমার হাত থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছে ওই এজেন্টের বছর পাঁচেকের নাতনি।
এখন প্রশ্ন, বারবার বর্ধমানেই এমন ঘটনা কেন? বিরোধীদের দাবি, ভোটের আগে থেকেই আবহ যে পুরোপুরি পক্ষে নেই, তা বুঝেছে শাসকদল। হাজার ছক করার পরেও অনেক বুথেই সিপিএম এজেন্টদের উপস্থিতিতে ‘ঠিকঠাক’ ভোট হয়েছে। সেই আক্রোশেই হামলা চলছে। ভোটের রাতে খণ্ডঘোষের লোধনা গ্রামে সিপিএমের বুথ এজেন্ট-সহ দু’জনকে পিটিয়ে, কুপিয়ে মারা হয়।
সিপিএমের দাবি, ভাতারের মুরারিপুকুর গ্রামে দলের বুথ এজেন্ট মনোজ দে-র বাড়িতে হামলা সেই আক্রোশেরই ফল। ২০১১ সালের পর থেকে বাড়িছাড়া ছিলেন মনোজবাবু, তাঁর ছেলে অমিত-সহ মুরারিপুর গ্রামের আরও অনেকে। মাসখানেক আগে ঘরে ফেরেন তাঁরা। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের বুথে সিপিএমের এজেন্টও হন মনোজ। তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্নাদেবী জানান, শনিবার রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে বৌমা চুমকি আর নাতনি রাত্রিকে নিয়ে দাওয়ায় বসেছিলেন তিনি। বাইরে হট্টগোল, দাপাদাপির শব্দ বুঝে উঠতে না উঠতেই বোমা পড়ে বাড়িতে।
রবিবার জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, ‘‘হঠাৎ বোমার একটা টুকরো এসে পড়ল নাতনির পায়ের কাছে! ও চিৎকার করে উঠতেই ওকে কোলে তুলে ঘরে ঢুকে যাই।’’ তবে, ঘরেও ইট পড়তে থাকে। তা লাগে রাত্রির গায়েও। রাত্রির মা চুমকিদেবীর দাবি, বাড়ির সামনে বোমাবাজি করতে করতে অ্যাসবেস্টসের চাল ভেঙে জনা দশেক তৃণমূলের দুষ্কৃতী ঢুকে পড়ে। ভাঙচুর চালিয়ে সব তছনছ করে পালিয়ে যায়। বাড়ি থেকে পালান অমিত, মনোজবাবুও। তাঁদের অভিযোগ, পরিকল্পনা করে বাড়ির বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়ে তার পরে হামলা চালায় তৃণমূলের লোকজন। কোনও রকমে প্রাণ বেঁচেছেন তাঁরা।
ভাতার বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বামাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজনৈতিক হিংসায় মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে আরও বড় ক্ষতি হয়ে যেত।’’
শনিবার দুপুরে মুরারিপুরের মাঝিপাড়াতেও এক দফা সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ হয়। দু’পক্ষেরই বেশ কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে। ঘটনার পর থেকে মাঝিপাড়া কার্যত পুরুষশূন্য। গ্রাম ছেড়েছেন সিপিএম সমর্থক মহিলারাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক-দু’জন জানান, ভোটের দু’দিন আগেই গ্রামে ফিরেছিল মাঝিপাড়ার ১৪-১৫টি পরিবার। আবারও ঘরছাড়া তাঁরা। তবে ভয়ে হামলাকারীদের নিয়ে মুখ খুলতে চাননি কেউ। রবিবার দিনভর পুলিশের টহল ছিল গ্রামে। কালনার ধাত্রীগ্রামেও সিপিএম সমর্থক কয়েকটি পরিবারের উপর হামলা, মারধর করা হয় এ দিন। যদিও ঘটনাটি অরাজনৈতিক বলে দাবি তৃণমূলের।
ভাতারে এজেন্টের বাড়িতে বোমাবাজির কথা শুনে জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য শান্তনু কোনারের দাবি, ‘‘এ রকম কোনও ঘটনা ঘটেছে কি না জানতে হবে। তবে, ওখানে সিপিএমের হাতে আমরাই আক্রান্ত। আমাদের চার কর্মী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।’’
শান্তনুবাবু চাইলে পাঁচ বছরের রাত্রির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। বোমার আগুনের আতঙ্ক যার এখনও কাটেনি। এ দিন বারবার সে জানতে চেয়েছে, ‘‘আবারও বোমা ছুড়বে না তো কেউ? মারবে না তো?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy