কলকাতায় দ্বিতীয় দফার ভোটের পরের দিন রাজনৈতিক হিংসায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল পাটুলি থানার বাঘা যতীন। অভিযোগ উঠেছিল, থানার আধিকারিকেরা ওই গোলমালের খবর লালবাজারে জানাতে দেরি করেছিলেন। ফলে খবর পেয়ে লালবাজার থেকে অতিরিক্ত বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছতে আরও দেরি হয়ে যায়। বিরোধীদের অভিযোগ, এই সুযোগে ঘণ্টা তিনেক ধরে ওই এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছিল তৃণমূলের বহিরাগত গুন্ডাবাহিনী।
ওই ঘটনার পরে কলকাতা পুলিশের একাংশের আক্ষেপ ছিল, প্রথমে থানার গাফিলতিতে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে বিলম্ব হয়। এর পরেও যদি অতিরিক্ত বাহিনী ঝটপট পৌঁছে যেত, তা হলে ওই ভাবে পুলিশকে বেইজ্জত হতে হতো না। পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় কোনও বড় ঘটনা ঘটলে লালবাজার থেকে বাহিনী পাঠিয়ে অবস্থা সামাল দেওয়া হয়। তবে হরিদেবপুর, নাদিয়ালের মতো প্রান্তিক এলাকায় বড় কিছু ঘটলে লালবাজার থেকে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠাতে হলে অনেক সময়ে সমস্যা আরও বাড়ে।
এর থেকে শিক্ষা নিয়েই এ বার কলকাতা পুলিশের আট জন ডিভিশনাল ডেপুটি কমিশনারদের (ডিসি) অধীনে একটি করে বিশেষ দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিল লালবাজার। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দলের জন্য প্রতিটি থানা থেকে ৪০ বছরের কম, সুঠাম চেহারার ও দৈহিক ভাবে সক্ষম কনস্টেবলদের নাম চাওয়া হয়েছে। যাদের নিয়ে তৈরি করা হবে ওই বিশেষ দল। দলে প্রায় ২৪ জন কনস্টেবলের থাকার কথা। তাঁদের মধ্যে চার জন হবেন মহিলা কনস্টেবল। তাঁদের অবশ্য লালবাজার থেকে মনোনীত করা হবে। থানার কনস্টেবলদের বেছে নেবেন প্রতিটি ডিভিশনের ডিসি-রা।
মহানগরে এখন আটটি ডিভিশনে ৬৯টি থানা। অবস্থা সামাল দিতে প্রতিটি থানার পুলিশকে সহায়তার জন্য শহরের রাস্তায় সব সময়ে থাকে টহলদার বাহিনী বা ‘রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড’ (আরএফএস)। থানার ওসি বা ডিভিশনাল ডিসি-দের নির্দেশে নড়াচড়া করে ওই সমস্ত টহলদার বাহিনী। এ ছাড়াও ভোট পরবর্তী হিংসা রুখতে অতিরিক্ত পুলিশকর্মী মোতায়ন করা হয়েছে শহরের বিভিন্ন থানাগুলিতে।
কিন্তু কেন সুঠাম চেহারার এবং দৈহিক ভাবে সক্ষম কনস্টেবলের খোঁজ করছেন বাহিনীর কর্তারা?
লালবাজার সূত্রের খবর, ডিসি-দের অধীন ওই বিশেষ দলগুলিকে মূলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবহার করা হবে। তাই সুঠাম চেহারার যুবক চাওয়া হয়েছে ওই বাহিনীর জন্য। এক কর্তা জানান, কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফের কর্মীরা সুঠাম চেহারার অধিকারী হওয়ায় খুব সহজেই আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যায় সুবিধা পান। কিন্তু শহরের আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যায় তাঁদের সব সময়ে ব্যবহার করা হয় না।
পুলিশ সূত্রের খবর, এর আগে চেহারার জন্য বাহিনীতে আলাদা সুনাম ছিল উত্তরপ্রদেশ-সহ ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দাদের। কিন্তু এখন সেখানকার প্রজন্ম আর কলকাতা পুলিশে আসতে চাইছে না। ফলে এখন বাহিনীতে লম্বা, সুঠাম চেহারার কনস্টেবল অপ্রতুল। লালবাজারের দাবি, সব কিছু ঠিকমতো চললে চলতি সপ্তাহ থেকেই ওই বাহিনী রাস্তায় নামবে আইনশৃঙ্খলা সামলাতে। বাহিনীর অন্য একটি অংশের অবশ্য দাবি, বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণা আগামী সপ্তাহে। তাঁদের আশঙ্কা, ফল ঘোষণার পরে রাজনৈতিক হানাহানিতে উত্তপ্ত হতে পারে শহর। তাই আগেভাগেই লালবাজার ডিসি-দের হাতে ওই বিশেষ বাহিনী দিতে চাইছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। ওই বাহিনী ২৪ ঘণ্টা ডিসি অফিসে থাকবে। যে কোন আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যায় ডিসি-র সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে তাঁরা।
লালবাজারের কর্তাদের মতে, এতে কোনও গোলমাল সামাল দিতে গিয়ে পুলিশ আর সংখ্যায় কম হয়ে পড়বে না। গোলমাল ছড়াচ্ছে বুঝলেই টহলদার পুলিশের পাশাপাশি ডিসি-র ওই বাহিনীও ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy