ছোট্ট সায়ন্তিকা। —নিজস্ব চিত্র।
মেঝেতে রাখা দুধভর্তি বাটি। রাতের খাবার খাচ্ছিল ছোট্ট সায়ন্তিকা।
হঠাত্ই, সজোরে একটা লাথি। উড়ে গিয়ে দেওয়ালে ধাক্কা খেল বাটিটা। চার দিকে ছড়িয়ে পড়ল দুধ, তিন বছরের সায়ন্তিকার রাতের খাবার। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সামনে তাকিয়েই সে দেখে, সাত-আট জন ‘কাকু’ দাঁড়িয়ে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেই ‘কাকু’রা তার মা, দাদু, এমনকী, তাকেও বাঁশ দিয়ে পেটায়। ভাঙচুর করে তার মামাবাড়ির প্রতিটা ঘর।
আসলে ওই ‘কাকু’রা তার মা-দাদুকে ভোট দিতে যেতে বারণ করতে এসেছিল। কিন্তু, ‘অনুরোধ’ না-মানায় রীতিমতো হামলা চালায় তারা। প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি, বোমাবাজি, ভাঙচুর, মারধর— নিস্তার মেলেনি সায়ন্তিকারও। যদিও রবিবার রাতের এই ঘটনার পরেও সোমবার সকালে ভোট দিয়েছেন সায়ন্তিকার মা দেবশ্রী ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ওরা দিলেও মারবে, না দিলেও মারবে। তাই ভোটটা দিয়েই এলাম।’’গোটা ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে তৃণমূলের দিকে।
ভোটের দু’দিন আগে মেয়েকে নিয়ে হালিশহরের বারেন্দ্র গলির বাপেরবাড়িতে এসেছিলেন দেবশ্রী। বাবা টিটু সমাজপতি এলাকায় সিপিএম সমর্থক হিসেবে পরিচিত। দেবশ্রীর বিয়ে হালিশহরের ভেতরে হলেও তাঁর ভোট বাপেরবাড়ির ঠিকানাতেই রয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, রবিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূলের এক দল দুষ্কৃতী। বাড়িতে ঢুকেই তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। ভাঙচুর শুরু করে ঘরজুড়ে। জিনিসপত্র টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেয়। এর পরই বাঁশ দিয়ে আক্রমণ করা হয় টিটুবাবুকে। মেঝেতে বসে তখন রাতের খাবার খাচ্ছিল সায়ন্তিকা। লাথি মেরে তার খাবার ফেলে দেওয়া হয়। ভয় পেয়ে সে মায়ের কাছে ছুটে চলে যায়। তখন দেবশ্রীদেবীর উপর চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। তাঁকেও বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়। ছোট্ট সায়ন্তিকা মা-কে জড়িয়ে ধরতেই, তার উপর চড়-থাপ্পড় শুরু হয়। পেটানো হয় বাঁশ দিয়েও। এ দিন সকালে সে বাঁ হাতের কনুইয়ের জায়গাটা দেখিয়ে বলে, ‘‘আমাকে এখানে মেরেছে। খুব ব্যথা লেগেছে। নাকে মেরেছে।’’ ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে সে, বলে, ‘‘জানো, লম্বা একটা বাঁশ দিয়ে মেরেছে। আমার দুধের বাটিও লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে ওই কাকুরা।’’
শুধু টিটুবাবুর বাড়িতেই নয়, গোটা এলাকাতেই সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ ওঠে ওই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। বীজপুর থানা ঘটনার কথা জানলেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। এ দিন আনন্দবাজারের তরফে নির্বাচন কমিশনকে ঘটনার কথা জানানোর পর তত্পর হয় তারা। বিশেষ পর্যবেক্ষকের নেতৃত্বে বিশাল কেন্দ্রীয় বাহিনী যায় ওই এলাকায়। নিরাপত্তার ঘেরাটোপেই ভোটারদের নিয়ে যাওয়া হয় বুথে। এলাকাতেও বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কমিশন নির্দেশ দেয়, ডিসি পদমর্যাদার এক জন অফিসারকে ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হবে। সেই মতো, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি ট্রাফিক অবধেশ পাঠক ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বতপ্রণোদিত ভাবে অভিযোগ গ্রহণ করেন।
যদিও বীজপুরের তৃণমূল প্রার্থী শুভ্রাংশু রায় বলেন, ‘‘এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। যেই করে থাকুক, একটা বাচ্চার উপর এ ভাবে আক্রমণ মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনকে বলছি, কড়া পদক্ষেপ করতে। ওই পরিবারটির পাশে আমি আছি। বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি থেকে চিকিত্সার জন্য যা করতে হয়, সব আমি করব।’’
দেখুন ভিডিও...
আরও পড়ুন-অবাধ ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ হাড়োয়ার বুথে, বিক্ষোভে বন্ধ ভোট
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy