১ লক্ষ ৭ হাজার ৭০১। পাহাড়প্রমাণ এই ফারাকেই জিতলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুব্রত জানা।
প্রতিটি বিষয়েই তাঁর প্রাপ্ত নম্বর একশোয়-একশো। তাই এ বার তিনিই মেধা তালিকায় সারা রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপকদের মধ্যে এক নম্বরে। কিন্তু তাতেও তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত নন। আর তাই বোধ হয় রেজাল্ট বেরনোর পরে সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন করতেই তাঁর সহাস্য উত্তর, ‘‘আমি তো নিমিত্ত মাত্র’’!
তা হলে আপনি কিছুই নন? সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরনে, গালে সবুজ আবির-মাখা ফার্স্ট বয়ের সটান জবাব, ‘‘সবই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। ওঁর নির্দেশ মতো শুধু উন্নয়নের কাজ করেছি মাত্র।’’ রাজ্যের এই সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক হলেন, ডোমজুড়ের তৃণমূল প্রার্থী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বারে ২৯৪টি বিধানসভার মধ্যে তিনিই সব থেকে বেশি ভোটে জিতেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাম-কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থীকে তিনি হারান ১ লক্ষ ৭ হাজার ৭০১ ভোটে।
ভোটের প্রচারলগ্নের প্রথম থেকেই নিজের জয় সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন রাজ্যের বিদায়ী সেচমন্ত্রী রাজীব। কিন্তু লক্ষ্য ছিল একটাই, কী ভাবে ভোটের ব্যবধান বাড়ানো যায়। তবে ২৫ এপ্রিল পরীক্ষার খাতা জমা পড়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার এই সদস্য অবশ্য নিজের প্রথম হওয়া নিয়ে কিছুটা হলেও আশাবাদী হয়েছিলেন। আর ফল বেরোতেই দেখা গেল হয়েছেও তাই।
এক সময়ে বামেদের ভিয়েতনাম বলেই পরিচিত ছিল ডোমজুড় বিধানসভা। ১৯৭৭ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত টানা ওই বিধানসভায় বামেরাই নিজেদের মার্জিন ক্রমশ বাড়িয়ে জয়ী হয়েছেন। ২০১১-তে রাজ্যে ‘মমতা ঝড়’-এ পরিবর্তন আসে হাওড়ার ওই গ্রামাঞ্চল ঘেরা বিধানসভায়। ভিয়েতনামের লাল মাটিতে সবুজ জোড়া ফুল ফোটান রাজীব।
কিন্তু এ বারের এ রকম সাফল্যের চাবিকাঠি কী?
স্থানীয় সূত্র বলছে, পাঁচ বছর আগে ভোট চাইতে এসে ডোমজুড়ের মানুষের কাছে বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনতে হয়েছিল রাজীবকে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে তিনি উন্নয়ন করবেন এলাকার। আর তা তিনি করেছেন। সেই কারণেই বোধ হয় হাওড়া জেলার ১৬টি বিধানসভার মধ্যে তিনিই বিধায়ক তহবিলের টাকা খরচেও প্রথম হয়েছিলেন। বরাদ্দ অর্থের ৯৯.৩১ শতাংশ টাকা রাজীব খরচ করেছেন তাঁর ডোমজুড় এলাকার উন্নয়নে। নিকাশি থেকে পানীয় জল, রাস্তা সবই হয়েছে রাজীবের হাত ধরে।
তবে এ সব কিছু যে শুধুই খাতা কলমের হিসেব নয় তা বলছেন খোদ ডোমজুড়ের সাধারণ মানুষই। যেমন, স্বাধীনতার পর থেকে বালি-জগাছা ব্লকের ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের পানীয় জল কিনে খেতে হতো। কেউ আবার পাশের বিভিন্ন পুরসভা থেকে খাওয়ার জল নিয়ে আসতেন। ২০১১ সালে ভোট চাইতে এসে রাজীব কথা দিয়েছিলেন তিনি ওই সমস্ত এলাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা করবেন। যেমন কথা তেমনি কাজ। গঙ্গার জল তুলে পরিশ্রুত করে ওই পঞ্চায়েত এলাকায় পাঠানোর জন্য তৈরি হচ্ছে জলপ্রকল্প। শুধু তা-ই নয়। ডোমজুড় বিধানসভার অধিকাংশ এলাকাই ফি-বছর বর্ষায় জলে ডুবে যেত। কম করে ছ’মাসের আগে সেই জমা জল নামত না।
পাঁচ বছরে সেখানেও পরিবর্তন। এলাকায় একের এক খাল সংস্কার, নালা তৈরি করে নিকাশির উন্নয়ন করা হয়েছে। আবার গ্রামের অধিকাংশ পরিচিত মেঠো রাস্তার ভোল বদলে এখন তা কংক্রিটের।
বাসিন্দাদের কথায়, শুধু এলাকার উন্নয়নই নয়। কোনও রং না দেখেই প্রতিটি বাসিন্দার ঘরের লোক হয়ে উঠেছিলেন রাজীব। যে কোনও অনুষ্ঠানে বা এলাকার যে কোনও বিপর্যয়— সব কিছুতেই তিনি আগে হাজির হতেন। রাস্তায় দাঁড়ানো যে কোনও বয়স্ক মানুষকে দেখলেই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেন। বাচ্চাদের কোলে নিতেন। দলমত নির্বিশেষে এই জনসংযোগও তাঁর সাফল্যের আর এক চাবিকাঠি বলেই মনে করেন বাসিন্দারা। এলাকার অনেক প্রবীণ সিপিএম নেতাও বিভিন্ন সময়ে তাই বলেছেন, ‘ছেলেটা খুব ভাল।’ বিধায়ক হিসেবে নাগরিকদের সমস্যা সমাধানের জন্য পাকুড়িয়ার ভাড়া বাড়িতে সপ্তাহের মঙ্গল ও শনিবার নিয়ম করে বসাতেন জনতার দরবার।
তবে শুধু এলাকার উন্নয়ন কিংবা জনসংযোগই নয়। রাজীবের সাফল্যের আর একটি মূল কারণ হল এলাকার মজবুত সংগঠন। জেলা পরিষদের সদস্য তথা ডোমজুড়ের যুব সভাপতি বিকাশ দে-র কথায়, ‘‘বিধায়ককে সামনে রেখেই পাঁচ বছর ধরে বুথ স্তর থেকে জেলা স্তরে সংগঠনের ভিত মজবুত করেছি। আর এর সঙ্গে অবশ্যই রয়েছে সকল স্তরের কর্মীকে সমান গুরুত্ব দেওয়া।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy