Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

পৃথিবী একটিই

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন দূষণের প্রশ্নে ‘পারস্পরিক আঁতাঁত’ করিল। কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণে সর্বাধিক অবদান এই দুই দেশের। প্রথমটি ঐতিহাসিক ভাবে বৃহত্তম দূষণকারী দেশ, দ্বিতীয়টি এখন দূষণের রাজধানী। দেশ দুইটি বোঝাপড়া করিল। দুই দেশের প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক চুক্তির মর্মার্থ: পৃথিবী জাহান্নামে যাউক, আমরা দূষণ কমাইব না।

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন দূষণের প্রশ্নে ‘পারস্পরিক আঁতাঁত’ করিল। কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণে সর্বাধিক অবদান এই দুই দেশের। প্রথমটি ঐতিহাসিক ভাবে বৃহত্তম দূষণকারী দেশ, দ্বিতীয়টি এখন দূষণের রাজধানী। দেশ দুইটি বোঝাপড়া করিল। দুই দেশের প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক চুক্তির মর্মার্থ: পৃথিবী জাহান্নামে যাউক, আমরা দূষণ কমাইব না। চিন প্রতিশ্রুতি দিয়াছে, ২০৩০ সালের পর তাহার দূষণের মাত্রা কমিবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও জানাইয়াছে, ২০২৫ সালে তাহার দূষণের মাত্রা ২০০৫ সালের তুলনায় ২৬ শতাংশ কমিবে। এই চুক্তি বলবত্‌ হইলে ২০২৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক দূষণমাত্রা ১৯৯০ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ মাত্র কমিবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূষণমাত্রা কমিবে ১৯৯০ সালের ৩৫ শতাংশ। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের লক্ষ্যসীমায় বাঁধিতে হয়, তবে মার্কিন দূষণ অন্তত ৫০ শতাংশ কমা উচিত। চুক্তি মোতাবেক চলিলে ২০২৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাথাপিছু কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ দাঁড়াইবে ১৪ টন। চিনও কাছাকাছিই থাকিবে। পরিমাণটি ভারতের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ। ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা ইত্যাদির প্রশ্ন আর না তোলাই ভাল।

এই আঁতাঁতের বৃহত্তম বিপদ, তাহাকে বাগে রাখিবার মতো আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ এখন কার্যত নাই। কিয়োটো প্রোটোকলের মেয়াদ ফুরাইয়াছে। এখন আর কোনও আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত দূষণ হ্রাস মাত্রা নাই। প্রতিটি দেশই নিজের মতানুসারে দূষণ কমাইবার প্রতিশ্রুতি দেয়, এবং সেই প্রতিশ্রুতিই একমাত্র ভরসা। এই ব্যবস্থাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা চিনের পক্ষে অতি উপযোগী, সন্দেহ নাই। দূষণ কমাইবার আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা থাকিলে অর্থনীতির উপর তাহার যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, এই ব্যবস্থায় সেই বালাই নাই। কিন্তু, বৃহত্তর পৃথিবীর পক্ষে এই অবস্থা বিপজ্জনক। যে উন্নত দেশগুলি দূষণ কমাইতে যথার্থই সক্রিয় ছিল, তাহারা উদ্যোগ গুটাইবে। আর, যে দ্বীপরাষ্ট্রগুলি বিশ্ব উষ্ণায়নের বৃহত্তম শিকার, সেগুলির সমস্যা আরও বাড়িবে। গত কয়েক বত্‌সরে পরিবেশ রাজনীতি যে পথে গিয়াছে, তাহা পৃথিবীর পক্ষে মঙ্গলজনক নহে। সদ্যসমাপ্ত জি-২০ বৈঠকের দায়সারা ঘোষণা তাহারই দ্যোতক।

তবে, মার্কিন-চিন চুক্তিতে ভারতের লাভ, সন্দেহ নাই। ভারতের উপর দূষণ কমাইবার চাপ কার্যত থাকিবে না। এমনিতেও দূষণের প্রশ্নে ভারত এই দেশগুলির সহিত তুলনীয় নহে। মাথাপিছু দূষণের পরিমাণ মাপিলে ভারতকে নিতান্ত ‘সবুজ’ বলা চলিতে পারে। কিন্তু, পরিবেশের প্রশ্নে চিনের সহিত এক নৌকায় সওয়ার একটি কুফল, অনেক অবাঞ্ছিত দায় গ্রহণ করিতে হয়। আপাতত সেই দায় ঘুচিল। ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা ভাবিলে এই পরিস্থিতিটি অতি অনুকূল। এই অবস্থায় বিচক্ষণতা আবশ্যক। যত দিন দূষণ নিয়ন্ত্রণের চাপ প্রবল না হইতেছে, ভারত সর্বশক্তিতে আর্থিক উন্নয়নের পথে হাঁটুক। কিন্তু, দীর্ঘমেয়াদে ভারতকেও পরিবেশের প্রশ্নে দায়িত্বশীল হইতে হইবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ সম্মেলনে ভারত তাত্‌পর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করিতে পারে। নিজের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখিয়া এক দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আর অন্য দিকে মরিশাস, ফিজির ন্যায় ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলির মধ্যে ভারত মধ্যস্থকারী শক্তি হইতে পারে। পৃথিবী একটিই, কথাটি স্মরণীয়।

অন্য বিষয়গুলি:

anandabazar editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy