ধনবান হওয়ার মধ্যে কোনও লজ্জা নাই, বরং ইহা গৌরবের। বিড়ালের রং সাদা না কালো, তাহাতে কিছু যায়-আসে না, যতক্ষণ সে ইঁদুর ধরিতে সমর্থ। কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত গণপ্রজাতন্ত্রী চিন যখন কর্ণধার দেং জিয়াও পিং-এর এই সকল সূত্র প্রচার করিতে শুরু করে, তাহার আগে হইতেই চিনে দুর্নীতির প্রকোপ ছিল। কিন্তু যে কোনও উপায়ে ধনসঞ্চয়ের এই নৈতিক অনুমোদন সম্ভবত সেই প্রকোপ আরও বাড়াইয়া তোলে। দলীয় নেতা ও আমলাতন্ত্রের তরফে ধনবান হওয়ার রুদ্ধশ্বাস প্রতিযোগিতায় বিপুল আর্থিক কেলেঙ্কারি, সরকারি সম্পদ হস্তগত করার অনাচার ক্রমশ চিনের আকাশকে মেঘাচ্ছন্ন করিয়া তোলে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বও বাধ্য হয় দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে। আর্থিক অপরাধ অর্থাৎ দুর্নীতি, তহবিল তছরুপ ইত্যাদির দায়ে একের পর এক মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হইতে থাকে।
চিনের নূতন নেতা শি জিনপিং যখন ক্ষমতাসীন হইয়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে দল ও সরকারের লড়াইকে অগ্রাধিকার দিতে চাহিলেন, তখনই বুঝা গিয়াছিল, বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতা-আমলা-রাজনীতিক এ বার আসামির কাঠগড়ায় উঠিবেন। কমিউনিস্ট স্বৈরতন্ত্রে যেহেতু বিরুদ্ধবাদীদের শায়েস্তা করিতেও ‘ষড়যন্ত্রকারী’, ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ ইত্যাকার আখ্যায় ভূষিত করিয়া প্রভাবশালী নেতাদের বধ্যভূমিতে পাঠাইবার রেওয়াজ আছে, তাই প্রায়শ এ ধরনের বিচারবিভাগীয় তৎপরতা কতটা সৎ এবং কতটা প্রহসন, সেই সংশয় থাকিয়া যায়। এই স্বৈরতন্ত্রে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও বৈধ পদ্ধতি নাই, পাল্টা সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহেরও অসুবিধা বিস্তর। তাই সম্পূর্ণ একতরফা ভাবে শীর্ষ নেতৃত্ব তাহার পথের কাঁটাগুলি উৎপাটিত করিতে ‘দুর্নীতি-বিরোধী অভিযান’ শুরু করিতেই পারে। তবে দ্রুত ধনবান হওয়ার গৌরব অর্জনের তাগিদ দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু কম শক্তিশালী প্ররোচনা নয়। শীর্ষ চিনা কমিউনিস্ট সংগঠন পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্য ঝাও ইয়ং কাং-এর নিকট বিপুল সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করার প্রমাণ মিলিয়াছে। ইহা নাকি হিমশৈলের চূড়া।
প্রতিবেশী ভারতও দুর্নীতির জন্য নাম কিনিয়াছে। প্রতিটি নির্বাচিত সরকারের আমলেই যে ভাবে বড় মাপের সব কেলেঙ্কারি ফাঁস হইতেছে, তাহাতে স্পষ্ট, দুর্নীতিপরায়ণরা সব ধরনের তন্ত্র বা শাসনব্যবস্থাতেই দুর্নীতি ও অনিয়ম করার উপায় ও পথ খুঁজিয়া লইবে। কমিউনিস্ট স্বৈরতন্ত্র যেমন তাহাদের আটকাইতে পারিবে না, প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রও তেমনই তাহাদের ঠেকাইতে ব্যর্থ হইবে। তবে একদলীয় স্বৈরাচারের তুলনায় বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এইটুকু সুবিধা আছে যে, এখানে অন্তত দুর্নীতি রোধ করার রকমারি রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি নজরদারি পদ্ধতি ও পাহারাদার সংস্থা থাকে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখর হওয়ার এবং আন্দোলন করার অধিকার জনসাধারণের সামনে খোলা থাকে। নির্বাচিত প্রতিনিধিসভায় জনপ্রতিনিধিরা সরকারকে দুর্নীতিদমনে ব্যবস্থা লইতে বাধ্য করিতে পারেন। যেমন টু-জি কেলেঙ্কারি, কয়লা কেলেঙ্কারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে হইয়াছে। গণপ্রজাতন্ত্রী চিনে এমন কোনও সম্ভাবনা নাই। সেখানে পার্টির সাধারণ সম্পাদক তথা সরকারের প্রধানের অভিপ্রায়ই দুর্নীতিরোধে একমাত্র ভরসা, তাহার জন্য কোনও গণতান্ত্রিক রক্ষাকবচ নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy