Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

কেন্দ্র ও প্রান্ত

অরুণাচল প্রদেশের ক্ষুদ্র জনজাতি ‘লিসু’র সদস্যদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়াছে সে রাজ্যের সরকার। মাত্রই কয়েক হাজার জনসংখ্যার এই জনজাতি বিগত দুই দশক ধরিয়াই তফসিলি মর্যাদার দাবি করিয়া আসিয়াছেন। চিন ও মায়ানমার সীমান্তে বিস্তৃত এই জনজাতির নিবাস রণনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়।

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

অরুণাচল প্রদেশের ক্ষুদ্র জনজাতি ‘লিসু’র সদস্যদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়াছে সে রাজ্যের সরকার। মাত্রই কয়েক হাজার জনসংখ্যার এই জনজাতি বিগত দুই দশক ধরিয়াই তফসিলি মর্যাদার দাবি করিয়া আসিয়াছেন। চিন ও মায়ানমার সীমান্তে বিস্তৃত এই জনজাতির নিবাস রণনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়।সীমান্তের অন্য পারেও লিসু’রা রহিয়াছেন, তবে সেখানে তাঁহারা তিব্বত অর্থাত্‌ চিনের নাগরিক এবং সেখানকার জনজাতীয়দের উপর চিনের বৃহত্তম হান জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভাব যথেষ্ট। আবার অরক্ষিত সীমান্তের দুই দিকেই লিসুদের অবাধ যাতায়াতও রহিয়াছে, যাহার ফলে তিব্বত-চিনে বসবাসকারী জ্ঞাতিভ্রাতাদের সহিত অরুণাচলে বসবাসকারী লিসুরা সহজেই নিজেদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার তুলনা করিতে পারেন। তুলনাটি নয়াদিল্লির পক্ষে খুব শ্লাঘনীয় হইবে না। এই সব বিবেচনা করিয়াই লিসু জনজাতিকে তফসিলি মর্যাদা দিবার প্রস্তাব, যাহার সুবাদে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের ন্যূনতম কিছু সুবিধা তাঁহারা অর্জন করিবেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চিন সীমান্তে ভারতীয় প্রতিরক্ষা আরও সুদৃঢ় করার দিকে নজর দিয়াছেন। সীমান্ত বরাবর রাস্তাঘাট, স্থলবাহিনীর ভারী ট্রাক, সাঁজোয়া গাড়ি ও ট্যাংক চলাচলের উপযোগী প্রশস্ত, মজবুত ও ধস-প্রতিরোধী রাস্তা নির্মাণ, একাধিক সামরিক বিমানঘাঁটি স্থাপন ইত্যাদি পরিকাঠামোগত প্রকল্প লওয়া হইয়াছে। কিন্তু তিব্বতের দিকে চিনের তৈয়ার করা পরিকাঠামোর সহিত তুলনা করিলে ভারতীয় অপ্রস্তুতি প্রকট। বিশেষত অরুণাচল প্রদেশের জনসাধারণ জীবনধারণের তীব্র অসুবিধা ও কষ্ট বরণ করিতে বাধ্য হন, শিল্প, কৃষি, বাণিজ্যের অভাব এবং সরকারি সাহায্যের অপ্রতুলতা তাঁহাদের দৈন্যদশায় ফেলিয়া রাখে। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত হইবে, রাজ্য সরকারের প্রস্তাবটি দ্রুত রূপায়িত করা। রাজ্যটি কংগ্রেস-শাসিত বলিয়া তাহার প্রস্তাব উপেক্ষা করার সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতি যেন এ ক্ষেত্রে বাধা না হয়। কেননা এই বিষয়টির সহিত জাতীয় প্রতিরক্ষার মতো স্পর্শকাতর রণনৈতিক প্রশ্নও জড়িত।

রাজ্যের অন্যান্য জনজাতির লোকেরা স্বভাবতই এই সম্ভাবনায় ক্ষুব্ধ। তাঁহাদের আশঙ্কা, লিসুরা তফসিলি মর্যাদা পাইলে অন্যদের শিক্ষা ও চাকরির কোটা কম পড়িয়া যাইবে। এই শঙ্কা তুলিয়া ধরিয়া ‘সারা অরুণাচল ছাত্র ইউনিয়ন’ প্রতিবাদের রাস্তা লইয়াছে। সরকারকে তাহাদের আশ্বস্ত করিতে হইবে। দারিদ্র, শিক্ষাহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা, কর্মহীনতা তো সকল রাজ্যবাসীরই সমস্যা। তাহা দূর করিতে হইলে রাজ্য জুড়িয়া ব্যাপক উন্নয়নের কর্মসূচি রূপায়ণ করিতে হইবে। উন্নয়ন প্রকল্পে যেমন বহু মানুষের কাজ জুটিবে, রোজগারের নিশ্চয়তা তৈয়ার হইবে, তেমনই নিজেরা সেই উন্নয়ন-যজ্ঞে শামিল হইতে জনজাতীয়রা শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ অর্জন করিতেও ব্যগ্র হইবেন। নয়াদিল্লির উচিত হইবে, চিন সীমান্তের এই রাজ্যটিতে উন্নয়ন ও বিকাশের এমন ক্রিয়াকাণ্ড শুরু করা, যাহাতে চিন-শাসিত তিব্বত অপেক্ষাও অরুণাচল প্রদেশের রাস্তাঘাট, পরিকাঠামো, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও সুযোগ উন্নততর হইয়া ওঠে। প্রধানমন্ত্রী অরুণাচল সফরকালে বিষয়টির দিকে মনোনিবেশ করুন। প্রান্তকে আন্তরিকতার সহিত কেন্দ্রে টানিয়া আনুন।

অন্য বিষয়গুলি:

editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy