দেবেন্দ্র ফডণবীস, শরদ পওয়ার ও উদ্ধব ঠাকরে।
মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সিদ্ধান্তটি বিতর্কিত হইবে, তাহা প্রত্যাশিত। কিন্তু, বিতর্কের মূল কারণ ইহা নহে যে বিজেপি অপেক্ষা শিবসেনা বা এনসিপি-কে সরকার গড়িবার জন্য কম সময় দেওয়া হইল কেন। ইহাও নহে যে কেন এনসিপি-কে দেওয়া চব্বিশ ঘণ্টাও শেষ হইবার পূর্বে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সিদ্ধান্ত ঘোষিত হইল। মূল প্রশ্ন হইল, কোনও দলকে সরকার গঠনের জন্য কত সময় দেওয়া হইবে, সেই সিদ্ধান্ত করিবার অধিকার কেন রাজ্যপালের হাতে থাকিবে? ভুলিলে চলিবে না, রাজ্যপালের পদটি মূলত আলঙ্কারিক— এক অর্থে ঔপনিবেশিক শাসনের অবান্তর উত্তরাধিকার। পদটি যদি রাখিতেই হয়, তবে তাহাকে প্রশাসনের অঙ্গসজ্জা রূপে রাখাই বিধেয়— পদাধিকারীকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত করিবার অধিকার দেওয়া নিতান্তই অবাঞ্ছিত। মহারাষ্ট্রের বর্তমান রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি তাঁহার পূর্বাশ্রমে আরএসএস-এর লোক ছিলেন কি না, এবং রাজ্যপাল হইবার পরও সেই ধর্ম সম্পূর্ণ বিস্মৃত হইয়াছেন কি না, এই প্রশ্নগুলিই উঠিত না যদি তাঁহার হাতে সময় দেওয়া-না দেওয়ার অধিকারটি না থাকিত। রাজ্যপালের ন্যায় পদ যে নৈর্ব্যক্তিকতা এবং নিরপেক্ষতা দাবি করে, অনুমান করা চলে, অনেকের পক্ষেই সেই দাবি মেটানো অসম্ভব। অন্যান্য আনুগত্য তাঁহাদের নিকট হয়তো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠে। মনুষ্যচরিত্র। অতএব, রাজ্যপালদের নিকট নৈর্ব্যক্তিক নিরপেক্ষতার প্রত্যাশা না রাখিয়া বরং পদ্ধতির পরিবর্তন করা বাঞ্ছনীয়। রাজ্যপালের সন্তুষ্টি নহে, সরকার গঠনের ক্ষেত্রে একমাত্র বিবেচ্য হওয়া উচিত বিধিবদ্ধ নিয়ম।
নির্বাচন-পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলিকে একটি নির্দিষ্ট কোড বা বিধিতে বাঁধিয়া ফেলা জরুরি। যে দল সর্বাধিক আসন পাইয়াছে, তাহাকে সরকার গড়িবার আহ্বান জানাইবার পর কত দিন অপেক্ষা করিতে হইবে; তাহারা সরকার গড়িতে ব্যর্থ হইলে কোন দল ডাক পাইবে এবং তাহাকে কত দিন সময় দেওয়া হইবে; কোনও দলই সরকার না গড়িতে পারিলে কিং কর্তব্য— প্রতিটি প্রশ্নেরই নির্দিষ্ট এবং অপরিবর্তনীয় উত্তর থাকা বিধেয়। তাহাতে রাজ্যপাল ‘সন্তুষ্ট’ হইবেন কি না, এই প্রশ্নটি অবান্তর। এই বিধি প্রযুক্ত হইলে সর্বাপেক্ষা বড় লাভ, ঘোড়া কেনাবেচার জন্য সময় কমিবে। ভারতীয় রাজনীতি এখন যে অতলে দাঁড়াইয়াছে, তাহাতে ঘোড়া কেনাবেচার বাস্তবটি অস্বীকার করিবার কোনও প্রশ্নই নাই। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি রাজ্যের উদাহরণও বলিবে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা দল— ঘটনাক্রমে, সেই ভূমিকায় প্রতি বারই বিজেপি-কে দেখা গিয়াছে— সরকার গড়িতে চাহিলে বিরোধী দলের ‘আগ্রহী’ বিধায়কদের লইয়া কী পরিমাণ টানাটানি চলিতে থাকে। ‘রিসর্ট রাজনীতি’ বস্তুটি এখন ঘোর বাস্তব। ইহা গণতন্ত্রের অবমাননা। এই প্রবণতাটি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। বিধি ভিন্ন তাহার আর পথ আছে কি?
নির্বাচন ও সরকার গঠনকে যদি তাহার প্রকৃত অর্থে দেখা যায়, তবে তাহার মধ্যে জনমতের গুরুত্ব অপরিসীম। জনাদেশ যাঁহাদের পক্ষে, তাঁহারাই সরকার গড়িবেন— ইহাই একমাত্র নীতি হওয়া বিধেয়। কিন্তু, রাজনীতি সেই ধর্মকে হজম করিয়া ফেলিয়াছে। এখন যাহা দস্তুর, তাহাতে রাজনীতির বিলক্ষণ লাভ— কিন্তু, সেই লাভ রক্ষার দায়িত্ব ভারতীয় গণতন্ত্রের হইতে পারে না। এবং, রাজ্যপালের হাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করিবার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় শাসকদের আরও এক দফা শক্তিবৃদ্ধিও রাষ্ট্রীয় নীতি না হওয়াই উচিত। যাহা চলিতেছে, তাহা চলিতে পারে না। তাহা চলিতে দেওয়া অনুচিত। কাজেই, সরকার গঠন সংক্রান্ত বিধি রচিত হউক, এবং ব্যতিক্রমহীন ভাবে সেই বিধি মানিয়া চলা হউক। অন্যান্য বিধানসভায় মহারাষ্ট্রের কুনাট্যের পুনরভিনয়ের প্রয়োজন নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy