Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

সমগ্র আকাশ

অতিমারি হেতু লকডাউন, কর্মহীনতা ও আর্থিক দুর্দশায় পারিবারিক স্থিতিসাম্য নড়িয়া গিয়াছে, এই সব কিছুরই ফলভোগ করিতে হইতেছে নারীদের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২১ ০৫:০৬
Share: Save:

কবি লিখিয়াছিলেন, বিশ্বের মহান ও চিরকল্যাণকর সৃষ্টিগুলির অর্ধেক নারীর কৃতি। সেই কৃতিত্বই আরও এক বার প্রকাশ পাইল, উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত সর্বভারতীয় সমীক্ষায়। পাঁচ বৎসর আগে বাণিজ্যে স্নাতক স্তরে সারা দেশে প্রতি ১০০ জন ছাত্রের তুলনায় ছাত্রী-সংখ্যা ছিল ৯০, ২০১৯-২০ সালের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় তাহা বাড়িয়া ১০০ হইয়াছে। বিজ্ঞানে স্নাতক স্তরে এবং ডাক্তারির এমবিবিএস পাঠক্ষেত্রে পূর্বেই ছাত্রীরা ছাত্রদের সংখ্যা ছুঁইয়াছে, দেখাইয়াছিল ২০১৭-১৮ সালের সমীক্ষা। তাহার পর হইতে ওই দুই পরিসরে মেয়েদের সংখ্যাই বৃদ্ধি পাইয়াছে, প্রতি ১০০ জন ছাত্রের তুলনায় বি এসসি-তে ১১৩ জন, এমবিবিএস-এ ১১০ জন ছাত্রীর উপস্থিতি তাহারই নির্দেশক। এই বার বাণিজ্যে স্নাতকের পাঠেও ছাত্র ও ছাত্রীর অনুপাত-সমতায় আশা জাগিতেছে যে, উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে লিঙ্গসাম্য তাহা হইলে সুদূরপরাহত নহে।

উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের এই ‘গ্রোস এনরোলমেন্ট রেশিয়ো’, অর্থাৎ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও গবেষণা স্তরে ১৮-২৩ বৎসর বয়সি ছাত্রীদের নাম নথিভুক্তির অনুপাত আশাব্যঞ্জক সন্দেহ নাই, তবে দীর্ঘ পথ চলা এখনও বাকি। বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও ডাক্তারি স্তরে পড়াশোনায় মেয়েরা আগাইয়া আসিতেছে, কিন্তু আইন বিষয়ে এবং বিশেষত বি টেক স্তরে উচ্চশিক্ষায় ছাত্রীদের অনুপাত এখনও অত্যন্ত কম, একশত জন ছাত্রের অনুপাতে যথাক্রমে ৫৩ এবং ৪২ মাত্র। এই ক্ষেত্রগুলিতে মেয়েদের অগ্রগমন নিশ্চিত করা যেমন প্রয়োজন, তেমনই দরকার উচ্চশিক্ষার সার্বিক পরিসরটি মেয়েদের জন্য সুগম করা— উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের সাফল্য উদ্‌যাপনের পাশাপাশি মেয়েদের যে বৃহৎ অংশ অন্ধকারে রহিয়া গেল, তাহাদের আলোয় লইয়া আসা। মেয়েদের স্থান বাহিরে নহে, ঘরে; পড়াশোনায় নহে, গৃহকর্মে— এই প্রাচীনপন্থী শৃঙ্খল একুশ শতকের ভারতেও সম্পূর্ণ চূর্ণিত হয় নাই। প্রাথমিক ও বিদ্যালয় শিক্ষায় স্কুলছুট মেয়েদের সংখ্যাই প্রমাণ, স্কুল ডিঙাইয়া কলেজ, কলেজ পার হইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পড়িবার, এবং ছেলেদের পাশে সমান সংখ্যাগুরুত্বে জায়গা করিয়া লওয়াকে আজিকার ভারতে কেন ‘সাফল্য’ বলিতে হইতেছে। বিজ্ঞান বা ডাক্তারি পড়া মেয়েদের কর্ম নহে, এহেন পুরুষতান্ত্রিক লিঙ্গদ্বেষ মেয়েরাই পাল্টাইয়াছে, এখন দরকার অস্পৃষ্ট শিক্ষা-পরিসরগুলিতে সমানাধিকার ও সফলতা।

কোভিড-অতিমারিতে ছাত্রীদের গৌরবগাথা ব্যাহত হইবার শঙ্কা প্রবল। সদ্যপ্রকাশিত সমীক্ষাটি ২০১৯-২০ সময়ের, আগামী বৎসর জানা যাইবে, কোভিডের জেরে দেশে উচ্চশিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত কী হইল। অতিমারি হেতু লকডাউন, কর্মহীনতা ও আর্থিক দুর্দশায় পারিবারিক স্থিতিসাম্য নড়িয়া গিয়াছে, এই সব কিছুরই ফলভোগ করিতে হইতেছে নারীদের— বিশেষত অল্পবয়সি ও তরুণীদের। আমূল পরিবর্তিত শিক্ষা-আবহে মেয়েরা আদৌ পড়াশোনা করিতেছে, না কি রান্নাঘরে চুলার পাশে দিন কাটাইতেছে, সরকারকে তাহা দেখিতে হইবে। নারী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ছাত্রীদের পাশে দাঁড়াইবার পদক্ষেপ করিতে হইবে। অর্ধেক নহে, শিক্ষার জানলা দিয়া সমগ্র আকাশ দেখিতে পাইবার যে আনন্দ সম্প্রতি মিলিয়াছে, শুধু একটি বৎসরের জেরে যেন তাহা মুছিয়া না যায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy