একটি খবর পেয়ে আমি কিছুটা চিন্তিত বোধ করছি। আমি প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেছিলাম। জানতে পারলাম, সেই কলেজ (এখন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপক দুই ভূতপূর্ব ছাত্রের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য বিশেষ ধরনের কিছু আয়োজন করছে। এ ধরনের উৎসব সাধারণত খুবই আনন্দের কারণ হয়ে থাকে। এবং এই আয়োজনটি যে সাম্প্রতিক ঘটনার সূত্রে পরিকল্পিত হয়েছে সেটি, অর্থাৎ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল প্রাপ্তি, অত্যন্ত আনন্দের (আমি অবশ্যই এই ঘটনায় প্রচণ্ড খুশি হয়েছি।) কিন্তু আমার কলেজ নিয়ে আমি গর্ব বোধ করি, এবং সেই কারণেই একটি কথা বলার দরকার আছে বলে মনে করি। নোবেলের সামাজিক গুরুত্ব যতই হোক না কেন, তা যেন কোনও ভাবেই আমাদের মনে প্রেসিডেন্সির অত্যন্ত উজ্জ্বল শিক্ষা-ঐতিহ্যকে ম্লান করতে না পারে। সেই সমৃদ্ধ ইতিহাসের ধারায় বিরাজ করছেন হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিয়ো, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, স্বামী বিবেকানন্দ, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সুভাষচন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ, ফজলুল হক, হুমায়ুন কবীর, জ্যোতি বসু, সত্যজিৎ রায় এবং আরও অনেক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। কোনও সামাজিক সম্মান— নোবেল পুরস্কারও— তাঁদের কৃতিকে একটুও নিষ্প্রভ করতে পারে না। যে কোনও নতুন কীর্তি এই ইতিহাসকে স্মরণ করার একটি উপলক্ষ হিসেবে গণ্য করাই বিধেয়, যে ইতিহাসের মধ্যে দিয়েই প্রেসিডেন্সি স্বমহিমায় সমুন্নত।
অমর্ত্য সেন
কেমব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
কোসাম্বি
অগ্নি রায়ের ‘মিথ ভেঙে মুক্তির উড়ান’ (রবিবাসরীয়, ২৭-১০) শীর্ষক নিবন্ধে পড়লাম, ‘‘আনন্দীবাইকে যেমন তাঁর স্বামীর আকাঙ্ক্ষার জন্য লড়তে হয়েছে, মীরাকেও লড়তে হয়েছে তাঁর বাবাকে খুশি করার জন্য। মীরার বাবা ছিলেন গণিতবিদ ডি ডি কোসাম্বি।’’ এ প্রসঙ্গে জানাই, ডি ডি কোসাম্বি (১৯০৭-১৯৬৬) শুধু গণিতবিদ ছিলেন না। একাধারে তিনি ছিলেন রাশিবিজ্ঞানী, ভাষাতত্ত্ববিদ, এবং ইতিহাসবিদ। এক কথায় ‘পলিম্যাথ’। হার্ভার্ড-এর গণিতের ছাত্র কোসাম্বি গণিত পড়িয়েছেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্গুসন কলেজ, টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ-এ। প্রজননবিদ্যায় ‘কোসাম্বি ম্যাপ ফাংশন’ ব্যবহৃত হয়, ‘মুদ্রা বিষয়ক বিজ্ঞান’ (numismatics)-এও কোসাম্বির গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। লিখেছেন গণিতের বই ‘পাথ জিয়োমেট্রি’, ‘প্রাইম নাম্বার’, প্রকাশিত হয়েছে একাধিক গবেষণাপত্র। এ সব সত্ত্বেও ভারততত্ত্ববিদ এ এল ব্যাসম (১৯১৪-১৯৮৬)-এর বন্ধু অধ্যাপক কোসাম্বির একটি বড় পরিচিতি এক ইতিহাসবিদ হিসেবে।
তাঁর মেয়ে মীরা কোসাম্বি 'RESONANCE June 2011'-তে ‘ডি ডি কোসাম্বি: দ্য স্কলার অ্যান্ড দ্য ম্যান’ প্রবন্ধে লিখেছেন, “১৯৫৬’য় প্রকাশিত ‘অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য স্টাডি অব ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি’ সারা বিশ্বে ইতিহাসের শিক্ষক ও ছাত্রের অবশ্যপাঠ্য বই হিসেবে পরিগণিত হয়। এ ছাড়াও অধ্যাপক কোসাম্বির আরও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের বই ‘মিথ অ্যান্ড রিয়েলিটি: স্টাডিজ় ইন দ্য ফরমেশন অব ইন্ডিয়ান কালচার’ (১৯৬২) ও ‘দ্য কালচার অ্যান্ড সিভিলাইজ়েশন অব অ্যানসিয়েন্ট ইন্ডিয়া ইন হিস্টোরিক্যাল আউটলাইন’(১৯৬৫)ভারত ও ভারতের বাইরে একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।” অধ্যাপক কোসাম্বি প্রাচীন ভারতের ইতিহাস অনুসন্ধান ও রচনার যে ধারা ‘অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য স্টাডি অব ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি’র মতো বইতে তৈরি করে দিয়েছিলেন, পরবর্তী কালে ইরফান হাবিব, রোমিলা থাপার রামশরণ শর্মার মতো ইতিহাসবিদরা তাকেই আরও প্রসারিত করেছেন। ভারত ইতিহাসচর্চায় অধ্যাপক ডি ডি কোসাম্বি অবদান প্রসঙ্গে ইরফান হাবিব বলেছেন, “ড্যানিয়েল থর্নার (১৯১৫-১৯৭৪) এবং ডি ডি কোসাম্বি... কৃষককে ভারতীয় ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বে অধিষ্ঠিত করেছেন।” ভারতীয় ডাক বিভাগ জুলাই ২০০৮-এ একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে, তাতে রয়েছে অধ্যাপক ডি ডি কোসাম্বির ছবির পাশাপাশি ভারতের মানচিত্র ও রাশিবিজ্ঞানের একটি সমীকরণ। অধ্যাপক ডি ডি কোসাম্বিকে শুধু গণিতবিদ আখ্যা দিলে, ইতিহাসবিদ হিসেবে তাঁর বড় পরিচয় আড়ালে থেকে যায়।
নন্দগোপাল পাত্র
সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
বিদ্যাধরী
জাতীয় এক সমীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গের যে দু’টি নদীকে সবচেয়ে দূষিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে বিদ্যাধরী একটি। কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার নিকাশিবাহিত দূষিত তরল বর্জ্য ময়লা খালের মাধ্যমে এসে পড়ে বিদ্যাধরীর জলে। সেই সঙ্গে আসে সন্নিহিত চর্মনগরীর এবং অন্যান্য কারখানার পরিত্যক্ত দূষিত বর্জ্য ও ক্ষতিকর ভারী ধাতু, যেমন— সিসা, দস্তা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম প্রভৃতি। ভীষণ দূষিত এই সব তরল বিদ্যাধরীর মাধ্যমে বাহিত হয়ে মিশে যাচ্ছে সুন্দরবনের নদীজালিকায়। ধ্বংস হচ্ছে জলজ জীববৈচিত্র। ক্ষতি হচ্ছে অতি সংবেদনশীল সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের। জীবিকা হারাচ্ছে নদীর উপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। পরিবেশ সংস্থাগুলির এই ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক ‘রামসার সাইট’-এর তকমাপ্রাপ্ত সুন্দরবনের জলাভূমি দূষণরোধে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির আশু পদক্ষেপ জরুরি।
সুভাষচন্দ্র আচার্য
কলকাতা-১৫০
সেতু বেহাল
হাওড়ার জগৎবল্লভপুর ব্লকের অন্তর্গত কানা দামোদর নদীর উপর কংক্রিটের সেতুটির দু’ধারের রেলিং ভেঙে পড়েছে কয়েক বছর আগেই। সেতুরও বেহাল দশা। পিলারের চাঙড় খসে পড়ছে। সেতুটির বয়স প্রায় ৪৮ বছর। ভারী গাড়ি গেলে সেতুটি কাঁপতে থাকে। এই সেতু ছাড়া জগৎবল্লভপুর ব্লকের হাফেজপুর ও নাইকুলি গ্রামের সংযোগ বিচ্ছিন্ন। সেতু দিয়ে প্রতি দিন সাত-আটটি গ্রামের বহু মানুষ সাইকেল, মোটর সাইকেল, যন্ত্রচালিত ভ্যান, ভ্যান রিকশা, অটো ও ম্যাজিক গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করেন। পাশেই প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় থাকায় বহু ছাত্রছাত্রীর যাতায়াতের ভরসা এই সেতু।
সৈয়দ আব্দুস সামি
হাওড়া
কিসের অধিকার?
সংবাদমাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ে লেখালিখি এ বার বন্ধ হোক। পুলিশ প্রশাসনের ছেলেভুলানো বিবৃতিগুলো বন্ধ করার জন্য একান্ত অনুরোধ জানাই। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নাম কা ওয়াস্তে বিজ্ঞাপনকে ব্যঙ্গ করেই চলেছে দুর্দম শব্দ-দৈত্যের অত্যাচার, কালীপুজো পেরিয়ে যাওয়ার দু’দিন পরেও। কোর্টের রায় নীরবে নিভৃতে মাথা কুটে মরছে। অসহায় শব্দবন্দি আমরা বুঝে গিয়েছি, এ সব শোরগোলের আয়োজন যাঁরা করে চলেছেন, তাঁরা কোনও সামান্য ব্যক্তি নন। ক্ষমতা, প্রতিপত্তিতে তাঁদের সঙ্গে এঁটে ওঠা সাধারণ মানুষের কর্ম নয়। বিভিন্ন ক্লাবের ব্যানারে ডাকসাইটে নেতাদের আয়োজিত পুজোগুলির উদ্বোধন মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধিরা তো করেনই, সঙ্গে থাকেন পুলিশ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও। তাই, যাঁরা শব্দদৈত্যের আবাহনকারী, তাঁদের কাছে আমজনতা নিতান্তই করুণার পাত্র। ‘নৈঃশব্দ্যের অধিকার’— সে আবার কেমনধারা জিনিস? কেমন শিরোনাম? এ সব ‘আঁতলেমি’ যত তাড়াতাড়ি ছাড়তে পারব, তত মঙ্গল— দেশ ও দশের। কারণ নেতারা তো তাঁদের মঙ্গলের জন্যই নিবেদিতপ্রাণ।
সত্যরঞ্জন দাস
পদুমবসান, তমলুক
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy