‘দিশাহারা কয়েক কোটি’ (৩০-৩) নিবন্ধে ত্রিদিবেশ বন্দ্যোপাধ্যায় যথার্থই বলেছেন, ‘‘নোটবন্দি' থেকে ‘ঘরবন্দি’— সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।’’ ঠিক নোটবন্দির কায়দায় প্রধানমন্ত্রী ২১ দিনের ঘরবন্দির আদেশ ঘোষণা করলেন।
২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে রাত আটটায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, রাত বারোটা থেকে হাজার এবং পাঁচশো টাকার নোটের বারোটা বাজার কথা। সে সময় এই স্বল্প সময়ের নোটিশের কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, এতে কালো টাকার মালিকদের বেকায়দায় ফেলে দেওয়া যাবে। এর ফলে কিন্তু অসুবিধে হয়েছিল সাধারণ মানুষেরই অনেক বেশি— যাঁরা পুরোপুরি নগদ টাকাতেই কেনাবেচা করেন। তবে সে অন্য প্রসঙ্গ।
এখানে প্রশ্ন, কী কারণে সাধারণ মানুষকে একই ভাবে কোনও সময় না দিয়ে ২১ দিনের লকডাউনের আদেশ ঘোষণা করতে হল। একটু আগে থেকে এই সিদ্ধান্তটা জানালে কী ক্ষতি হত? এ কথা আশা করি বলা হবে না যে, এ ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসদের বেকায়দায় ফেলতেই এমনটা করা হয়েছে, যাতে ব্যাটারা আগে থেকে টের না পায়!
এমন আচমকা সিদ্ধান্তের ফলে আসলে কিন্তু ‘সামাজিক দূরত্ব’ নীতিকে চুলোয় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিজের রাজ্যে ফিরতে চাওয়া ভিন্ রাজ্যে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিকের ভিড়ে দিল্লির বাস ডিপোগুলি জনসমুদ্র হয়ে উঠেছে। তাঁদের কারও সংক্রমণ হয়ে থাকলে, আজ এই সিদ্ধান্তের ফলেই, সহস্র মানুষ সংক্রমিত হয়ে পড়বেন! আগে থেকে কি বোঝা উচিত ছিল না, পূর্বাভাস ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে?
ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের এখন অবর্ণনীয় যন্ত্রণা। মালিকদের কাছ থেকে ছাঁটাই এবং বিতাড়নের আদেশ শিরোধার্য করে, কোনও গাড়ি না পেয়ে শতাধিক মাইল হেঁটে বাড়ির পথে পাড়ি জমালেন তাঁরা। ঘরবন্দির আদেশ সুচিন্তিত এবং পূর্বপরিকল্পিত হলে তাঁরা এতটা বেকায়দায় পড়তেন না।
সুজিত দে
কলকাতা-১১০
অঙ্ক মিলছে না
বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের করোনা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির দেওয়া হিসেব ছিল, এই রাজ্যে নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৩, মৃতের সংখ্যা ৭। কিন্তু তাঁরা এই হিসেব দেওয়ার পরেই রাজ্যের মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪, মৃতের সংখ্যা ৩।
হিসেবে এই ফারাক কেন? প্রথমে দেখা যাক, মুখ্যসচিব এ বিষয়ে কী ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
প্রথমত, মৃত্যুর সংখ্যা। মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, ৪ জনের মৃত্যু যে কোভিড-১৯’এর ফলেই হয়েছে, তার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাঁদের অন্য কোনও অসুস্থতা ছিল, এবং সেই কারণেই মৃত্যু হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, আক্রান্তের সংখ্যা। মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, ৫৩ জন আক্রান্তের মধ্যে ৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ৯ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৫৩ – (৩ + ৯ + ৭) = ৩৪ জন করোনা আক্রান্ত।
এই পুরো হিসেবটাই আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় (৩-৪) আছে।
এ বারে এই বক্তব্য নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
প্রথমে মৃত্যুর হিসেব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) সহ বহু সূত্র থেকে বার বার বলা হয়েছে, কো-মর্বিডিটি অর্থাৎ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই যদি কোনও গুরুতর অসুস্থতা (যেমন, ডায়াবিটিস, কিডনি বা লিভারের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসের অন্য কোনও রোগ) থাকে, তবে নোভেল করোনাভাইরাস প্রাণঘাতী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। নচেৎ, এই ভাইরাসের মারণক্ষমতা ইবোলা বা জ়িকার মতো ভাইরাসের তুলনায় কম।
মোটের ওপর বলা যায়, দুনিয়া জুড়ে করোনায় যাঁরা মারা যাচ্ছেন তাঁদের একটি বড় অংশ হলেন আগে থেকে অসুস্থ থাকা মানুষরা, এবং বৃদ্ধবৃদ্ধারা, যাঁদের আগে থেকে অসুস্থ থাকার সম্ভাবনা বেশি, এবং যাঁদের শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা কম।
যত দূর জানি, কোভিড-১৯’এ আক্রান্ত হয়ে এমন মানুষের মৃত্যু হলে— ভারতের সমস্ত রাজ্য সহ— গোটা দুনিয়াতেই তাকে কোভিড-১৯’এ মৃত্যু হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। অর্থাৎ, কো-মর্বিডিটির ফলে তাঁদের মৃত্যু ঘটলে সেটাও কোভিড-১৯’এ মৃত্যু— এটাই সাধারণ ভাবে স্বীকৃত সংজ্ঞা।
মুখ্যসচিবের যুক্তি কি দুনিয়া জুড়ে যে সংজ্ঞা মেনে চলা হচ্ছে, সেটাকে অস্বীকার করছে না? এবং এই যুক্তির প্রয়োগ প্রকৃত অবস্থা প্রকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করে বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে না কি?
প্রসঙ্গত বলা যায়, মুখ্যসচিবের যুক্তিধারা ব্যবহার করলে ইটালি, স্পেন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও কোভিড-১৯’এ মৃতের সংখ্যা অনেক কম দেখাবে।
দ্বিতীয় বিষয়টি হল আক্রান্তের সংখ্যা। এই ক্ষেত্রেও মুখ্যসচিব আন্তর্জাতিক ভাবে ব্যবহৃত সংজ্ঞা থেকে সরে এসেছেন। তিনি যে হিসেবটি দিয়েছেন, হিসাবশাস্ত্রের ভাষায় বললে, তা গ্রোস (সর্বমোট) নয়, নেট (ছেঁকে নেওয়া) হিসেব। অর্থাৎ মৃত, সুস্থ হয়ে ওঠা রোগী, এবং যাঁদের করোনা-সংক্রমণ এখনও নিশ্চিত ভাবে প্রমাণিত হয়নি— তাঁদের বাদ দিয়ে তিনি রোগীর সংখ্যা হিসেব করেছেন।
গোটা দুনিয়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে গ্রোস হিসেব। সেটা অকারণে নয়। রোগটা মোট কত জনের মধ্যে ছড়াল, মারি প্রতিরোধের জন্য সেই হিসেবটা জানা কিন্তু খুবই জরুরি।
যা মনে হচ্ছে, আক্রান্ত এবং মৃত, দুই সংখ্যার হিসেব কষার ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যবহৃত সংজ্ঞার বদলে নিজস্ব সংজ্ঞা ব্যবহার করছে। এর ফলে, সরকার যে হিসেব পেশ করছে, সেটা অন্য রাজ্য বা দেশের সঙ্গে আদৌ তুলনীয় থাকছে না। আপেলের সঙ্গে কমলালেবুর তুলনা করা যায় না।
পরিণামে, এই ‘সংশোধিত’ পরিসংখ্যান কার্যত অর্থহীন হয়ে পড়ছে না কি?
অনিল রায়
কলকাতা-১
এত বিরতি
উদরের ক্ষুধা নিবারণে যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনই মনের খোরাক জোগাতে (এই লকডাউনের সময়ে) টিভি চ্যানেলগুলির ভূমিকা যথেষ্ট। কিন্তু অন্যান্য সময়ের মতো এই সব চ্যানেলগুলি এখনও একই রকম বাণিজ্যিক বিরতি (‘কমার্শিয়াল ব্রেক’) চালাচ্ছে। যা, এই অতিমারির সময়কালে একেবারেই বেমানান ও চরমতম বিরক্তিকর। মন ভরে একটু অনুষ্ঠান (বা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে সংবাদ প্রতিবেদন) দেখা যেতে পারে, যদি সেটা বিজ্ঞাপনমুক্ত হয়। লকডাউনের সময়টায় তো অনেক কিছুই অনেকটা অন্য রকম হচ্ছে, প্রথা বা চলতি সংজ্ঞা অনুযায়ী চলছে না। সেই সূত্র ধরেই, এত বেশি মানুষ এত ক্ষণ ধরে টিভি দেখছেন ধরে নিয়ে, তাঁদের স্বস্তির কারণে, বিজ্ঞাপন বিরতিতে একটু ‘বিরাম’ টানা যায় না?
সাবির চাঁদ
রেজিনগর, মুর্শিদাবাদ
শব্দবন্ধ
গোটা পৃথিবী আজ গৃহবন্দি। মানুষের থেকে মানুষের দূরত্ব বাড়ানোই আপাতত চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের দাওয়াই, এই ভাইরাস প্রতিরোধে সঠিক ওষুধ খুঁজে না পাওয়ার আগে অবধি। এক মানুষ থেকে অন্য মানুষকে তফাতে রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে ইংরেজি শব্দবন্ধ ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’। হু-র (WHO) মতে, ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’-এর বদলে ‘ফিজ়িক্যাল ডিসট্যান্সিং’ ব্যবহারই যথাযথ। সত্যিই তো, ভবিষ্যতে করোনাভাইরাস-মুক্ত সমাজ পেতে গেলে, যে সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রয়োজন, তা ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’ করে কি সম্ভব?
সূর্যেন্দু বিকাশ পাত্র
প্রতাপদীঘি, পূর্ব মেদিনীপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy