মেঘালয় হাইকোর্ট।
আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হইলেন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি দৈনিকের সম্পাদক ও প্রকাশক। শাস্তিস্বরূপ তাঁহাদের সারা দিন আদালতে বসিয়া থাকিতে নির্দেশ দেয় মেঘালয় হাইকোর্ট। মাথাপিছু দুই লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য করিয়া বলা হয়, জরিমানা দিতে না পারিলে তাঁহাদের ছয় মাসের কারাদণ্ড হইবে, এবং ‘তথাকথিত’ সংবাদপত্রটি নিষিদ্ধ হইবে। মেঘালয় হাইকোর্টের এই রায় ভারতের সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজকে ব্যথিত এবং উদ্বিগ্ন করিতেছে। আদালত এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন রাখিয়াও বলিতে হয়, সাংবাদিকদের আরও কিছু কর্তব্য রহিয়াছে। আদালতের বিচারপ্রক্রিয়া এবং ঘোষিত রায় সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ করা সাংবাদিকের দায়িত্ব। তাহাতে বিচিত্র মত থাকিবে, নানা প্রশ্ন উঠিবে, ইহাই প্রত্যাশিত। ‘দ্য শিলং টাইমস’ আদালতের যে রায়টি লইয়া সংবাদ প্রকাশ করিয়াছে, তাহাতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং তাঁহাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নানা সুযোগসুবিধা দিবার নির্দেশ দিয়াছিল মেঘালয় হাইকোর্ট। এই বিষয়ে ওই পত্রিকা দুইটি সংবাদ প্রকাশ করে। অতঃপর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া ওই কাগজের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা শুরু করে। সম্পাদক ও প্রকাশক নিঃশর্ত ক্ষমা চাহিলেও তাহা গৃহীত হয় নাই।
আদালতের সম্মান লঘু করিয়া দেখিবার বিষয় নহে। কিন্তু প্রশ্ন আদালতের সম্মান বিষয়ে নহে। বারংবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ভাবে সংবাদমাধ্যমের সম্মান ক্ষুণ্ণ হইতেছে, প্রশ্ন সেখানেই। একটি গণতান্ত্রিক দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার গুরুত্ব কিন্তু বিরাট। সাংবাদিকরা নির্ভয়ে, নির্দ্বিধায় বক্তব্য প্রকাশ করিতে না পারিলে তাহাতে দেশেরই ক্ষতি। কারণ জনপরিসরে আলোচিত হইবার মতো বহু প্রশ্ন তখন আড়ালে থাকিয়া যাইবে। ভারতের ইতিহাসে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করিতে বিচারব্যবস্থা বারংবার সদর্থক ভূমিকা লইয়াছে। শীর্ষ আদালতের বিভিন্ন রায় সংবাদমাধ্যমকে নির্বিঘ্নে কাজ করিবার সুযোগ দিয়াছে। কখনও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিক সীমা লঙ্ঘন করিয়াছেন মনে করিলে আদালত সম্পাদক বা সাংবাদিককে তিরস্কার করিয়া সতর্ক করিয়াছে, কিন্তু ক্ষমা প্রার্থনা করিলেও আদালত তাহা প্রত্যাখ্যান করিয়াছে, এমন নজির বিরল। আদালত অবমাননার দায়ে সংবাদপত্র নিষিদ্ধ হইবার সম্ভাবনা উদ্বেগজনক। বিপজ্জনকও।
ক্ষমতাসীন নেতা বা বিত্তবান শিল্পপতির সহিত সাংবাদিকের সংঘাত হওয়া অপ্রত্যাশিত নহে। তাঁহারা সংবাদ নিয়ন্ত্রণ করিবার চেষ্টা করিবেন, তাহা অবাঞ্ছিত হইলেও, বিস্ময়কর নহে। সরকারের সমালোচনা বন্ধ করিতে সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করা তাহার সহজ উপায়। এই দেশে তাহার নানা নিদর্শন বিভিন্ন আমলেই দেখা গিয়াছে। সম্প্রতি কাশ্মীরের বেশ কিছু সংবাদপত্র নিজেদের প্রথম পাতা শূন্য রাখিয়া ইহার প্রতিবাদ করিয়াছে। আজ ভারতে মানহানির মামলা লড়িতেছেন বহু সাংবাদিক, সম্পাদক ও প্রকাশক। রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে কারারুদ্ধের সংখ্যাও কম নহে। সর্বোপরি, দেশে সম্প্রতি পাঁচ জন সাংবাদিক নিহত হইয়াছেন। এই কঠিন সময়ে বাক্স্বাধীনতার সুরক্ষা ও প্রসারের জন্য আদালতের উপর নাগরিকের নির্ভরতা বাড়িবেই। এমন সময়ে মেঘালয় হাইকোর্টের রায়টি নাগরিক উদ্বেগ তীব্রতর করিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy