ভা রত গত সপ্তাহে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) নামক দেশগোষ্ঠীর সদস্য হইবার ছাড়পত্র পাইয়াছে, ইহা বড় খবর নহে। বড় খবর ইহাই যে, ভারতের সহিত একই সময়ে এই স্বীকৃতি মিলিয়াছে আরও একটি দেশের, তাহার নাম পাকিস্তান। চিন, রাশিয়া, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, কাজাকস্তান এবং তাজিকিস্তান সংবলিত এই প্রতিষ্ঠানে ভারত ‘পর্যবেক্ষক’ হিসাবে স্বীকৃত হয় ২০০৫ সালে। পূর্ণ সদস্য পদে উত্তরণের জন্য দশ বছর অপেক্ষার কোনও স্বাভাবিক কারণ ছিল না। কিন্তু পাকিস্তানের দাবি ছিল, ভারতকে সদস্য করিতে হইলে তাহাকেও সদস্য করিতে হইবে। পাকিস্তানকে স্থান দেওয়ার বিষয়ে এসসিও-র নানা সদস্যের সংশয় ছিল, কারণ অনুমেয়। সে জন্য ভারতকে বাহিরে দাঁড় করাইয়া রাখিবার কোনও সংগত কারণ ছিল না। কিন্তু চিন এই বিষয়ে তাহার পরম মিত্র এবং— প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সাম্প্রতিক উচ্চারণ অনুসারে ‘প্রিয় ভাই’— পাকিস্তানের পাশে। এসসিও’য় চিনের ভূমিকা প্রথমাবধি নায়কের, প্রতিষ্ঠানটির সদর দফতরও সেই দেশেই, বস্তুত তাহার নামেও, চিনের গুরুত্বের স্বাক্ষর আছে। সুতরাং তাহার জোরই থাকিল। আন্তর্জাতিক, বিশেষত মার্কিন কূটনীতিতে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘকাল প্রচলিত হাইফেনটি ইদানীং অনেকাংশে সরিয়া গিয়াছে, কিন্তু এসসিও-র পরিসরে চিন হাইফেনটিকে ফিরাইয়া আনিল।
তাহার অর্থ এই নয় যে, এই দেশগোষ্ঠীতে ভারত এবং পাকিস্তান একই গুরুত্ব পাইবে। ভৌগোলিক কারণে পাকিস্তান ভারতের তুলনায় মধ্য এশিয়ার নিকটবর্তী। কিন্তু কূটনীতিতে ভূগোল গুরুত্বপূর্ণ হইলেও মুখ্য নিয়ামক নহে। এশিয়া তথা দুনিয়ার কূটনৈতিক মানচিত্রে দ্রুত যে পরিবর্তন ঘটিতেছে, তাহার প্রেক্ষিতে এসসিও-র ভূমিকায় একটি নূতন মাত্রা যুক্ত হইয়াছে। পশ্চিম এশিয়া এবং বৃহত্তর ‘মধ্য প্রাচ্য’য় সংঘাত প্রবল, ক্রমশ প্রবলতর। মধ্য এশিয়া তেল ও গ্যাসের ভাণ্ডার হিসাবে এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের নিকট বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করিয়াছে। অন্য দিকে, চিন এবং রাশিয়া, উভয়েই ওয়াশিংটনের প্রতিস্পর্ধী, এসসিও সেই প্রতিস্পর্ধার একটি প্রকরণ হইতে পারে। আবার, রাশিয়া ও চিনের নিজেদের মধ্যেও মধ্য এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার লইয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। এই জটিল ও বহুমাত্রিক পরিস্থিতিতেই এসসিও-র সম্প্রসারণ ঘটিল।
আপাতদৃষ্টিতে চিন এবং রাশিয়ার বিপুল অস্তিত্বের তুলনায় ভারতের ভূমিকা তুচ্ছ মনে হইতে পারে। কিন্তু তাহার অন্তর্ভুক্তি এসসিও-র অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যে তাত্পর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটাইতে পারে, স-ভারত রাশিয়া চিনের দাপট কিছুটা খর্ব করিতে পারে। কিন্তু ওয়াশিংটনের সহিত দিল্লির সম্পর্কও প্রতিকূল নহে, বস্তুত ওই বছরের গোড়ায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফরের সময় প্রকাশিত দ্বিপাক্ষিক বিবৃতিতে এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে সেই সম্পর্ককে এক নূতন স্তরে উন্নীত করিবার বার্তা ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহিত এই সম্পর্ক স্বভাবতই রাশিয়া ও চিন, উভয়ের ক্ষেত্রেই ভারতকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়াছে। সেই হিসাবে এসসিও-র সদস্যপদ দিল্লির সামনে একটি সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগাইয়া ভারতের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক স্বার্থের কতটা প্রসার নরেন্দ্র মোদী ঘটাইতে পারেন, তাহা অবশ্য বলা কঠিন। তাঁহার বাজনা যত, খাজনা তাহা অপেক্ষা কম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy