ধ নতন্ত্র না সমাজতন্ত্র, বিজ্ঞান গবেষণায় উন্নতির পক্ষে কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা স্বাস্থ্যকর, এক কালে সেই প্রশ্নে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়াছিল। রুশ-মার্কিন ঠান্ডা লড়াই শুরুর যুগে কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক মহাশূন্যে প্রেরণ করিয়া কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটি বিশ্ববাসীকে তাক লাগাইয়া দিয়াছিল। বিস্ময়জ্ঞাপনের মূলে শুধু রুশ বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘোষণাই নিহিত ছিল না। তৎসঙ্গে এই বার্তা দিবার বাসনাও প্রবল ছিল যে, গবেষণায় সোভিয়েত ইউনিয়ন আমেরিকাকে পিছনে ফেলিয়া দিয়াছে। অর্থাৎ, ধনতন্ত্র নহে, সমাজতন্ত্রই ওই পথে অগ্রগতির সহায়ক। স্পুটনিক-সংক্রান্ত রুশ ঘোষণাটিকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইসেনহাওয়ার বলিয়াছিলেন ‘শক অব দ্য সেঞ্চুরি’। সত্য বটে, রুশ সাফল্যটি আমেরিকার বুকে ব়ৃহৎ দাগা দিয়াছিল। প্রতিশোধে কিছু একটা করা চাই, তাই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জন ফিটজেরাল্ড কেনেডি ঘোষণা করেন ‘পাল্টা’ দিবেন। সেই ‘পাল্টা’ হইল ষাটের দশক শেষ হইবার পূর্বে আমেরিকার তরফে চন্দ্রে মানুষের পদার্পণ। কেনেডি-র প্রতিজ্ঞা অপূর্ণ থাকে নাই।
আমেরিকা আছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন নাই। ধনতন্ত্র বনাম সমাজতন্ত্রের লড়াইও অন্তর্হিত। তবে অন্য এক প্রসঙ্গে বিজ্ঞানে অগ্রগতির পক্ষে রাষ্ট্রব্যবস্থার গোত্রবিচার গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে। প্রশ্নটি এক্ষণে রুশ বনাম মার্কিন নহে, বরং ভারত বনাম চিন। এবং গণতন্ত্র বনাম দলতন্ত্র। তুলনাটি জরুরি এই কারণে যে, মহাকর্ষ তরঙ্গ নামক পদার্থবিদ্যার গূঢ় গবেষণায় ভারত এবং চিন দুই দেশই অবতীর্ণ। ওই বিষয়ে ভারতে গবেষণার সুযোগ আমেরিকায় লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল-ওয়েভ অবজারভেটরি বা ‘লাইগো’-র সূত্রে। অর্থাৎ, ভারত আমেরিকার সাহায্যকারী হিসাবে গবেষণা করিবে। চিন কিন্তু মহাকর্ষ তরঙ্গ অনুসন্ধান করিবে একক উদ্যোগে। সান ইয়াৎ সেন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানীরা মহাশূন্যে তিনটি উপগ্রহ প্রেরণ করিবেন। ওই তিনটি উপগ্রহ নির্দিষ্ট দূরত্বে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করিবে। উহাদের নিজেদের মধ্যে দূরত্বও থাকিবে নির্দিষ্ট। মহাকর্ষ তরঙ্গ যেহেতু দূরত্বকে ছোট-বড় করে, সেই হেতু উপগ্রহ তিনটির মধ্যে সময়-বিশেষে দূরত্বের হেরফের মাপিয়া মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত হইবে। আর একটি প্রকল্পেরও কাজ চলিতেছে। চিনা অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স-এর তরফে গবেষকরা সূর্য-প্রদক্ষিণকারী তিনটি উপগ্রহ মহাশূন্যে প্রেরণ করিয়া উপরোক্ত উপায়ে মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করিবেন। সংক্ষেপে, ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি মহাকর্ষ তরঙ্গ গবেষণায় ভীমবেগে নামিতেছে।
আর ভারত? প্রধানমন্ত্রী কিয়ৎকাল পূর্বে ‘লাইগো’ প্রকল্পে ভারতের যোগদান অনুমোদন করিয়াছেন। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা সেই অনুমোদনের অপেক্ষায় বসিয়া না থাকিয়া কয়েক বৎসর যাবৎ উদ্যোগী। মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্তকরণ যন্ত্র ভারতে কোথায় বসিবে, তাহার জন্য কয়েকটি স্থানও নির্বাচিত। কিন্তু উদ্যোগ উৎসাহ গবেষকদের ব্যাপার, প্রকল্প রূপায়ণ প্রশাসনিক দায়। ভারতে ‘লাইগো’-র যন্ত্র কবে বসিবে, কত দিনে ভারতীয় গবেষকরা ওই যন্ত্র হইতে তথ্য আহরণ করিবেন, তাহা দেখিবার। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রশাসন তো চিনের দলতন্ত্রের মতো দ্রুতগামী নহে। মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণায় নানা ক্ষেত্রে চিন ভারত অপেক্ষা অগ্রবর্তী। মহাকর্ষ তরঙ্গ গবেষণায় সাফল্য বা অসাফল্য আরও এক বার প্রমাণ করিবে প্রতিযোগিতায় কে অগ্রবর্তী, ভারত না চিন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy