Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

বাঁচিতে হইলে

চিন কেন নিজের মুদ্রার দাম কমাইল, সে বিষয়ে কোনও ধাঁধা নাই। দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর ভেদ করিয়া চিনের অর্থনীতি সম্বন্ধে যে তথ্যগুলি বাহিরে আসিতেছে, তাহা বিশেষ উজ্জ্বল নহে। সম্প্রতি জানা গেল, জুলাই মাসে চিনের রফতানির পরিমাণ প্রায় সাড়ে আট শতাংশ কমিয়াছে। সে দেশের অর্থনৈতিক চাকচিক্যের প্রধানতম কারণই রফতানির রমরমা। তাহাতে ধাক্কা লাগিলে অর্থনীতির গায়ে বিলক্ষণ আঁচ লাগে।

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

চিন কেন নিজের মুদ্রার দাম কমাইল, সে বিষয়ে কোনও ধাঁধা নাই। দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর ভেদ করিয়া চিনের অর্থনীতি সম্বন্ধে যে তথ্যগুলি বাহিরে আসিতেছে, তাহা বিশেষ উজ্জ্বল নহে। সম্প্রতি জানা গেল, জুলাই মাসে চিনের রফতানির পরিমাণ প্রায় সাড়ে আট শতাংশ কমিয়াছে। সে দেশের অর্থনৈতিক চাকচিক্যের প্রধানতম কারণই রফতানির রমরমা। তাহাতে ধাক্কা লাগিলে অর্থনীতির গায়ে বিলক্ষণ আঁচ লাগে। রফতানিতে চিনের সাফল্যের প্রধান কারণ ছিল কম উৎপাদন ব্যয়। এখন নয়-নয় করিয়াও শ্রমিকদের মজুির বাড়িয়াছে, উৎপাদনের অন্যান্য ব্যয়ও বৃদ্ধি পাইয়াছে। কাজেই, স্বল্প উৎপাদন ব্যয়ের দৌলতে বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় আগাইয়া থাকা চিনের পক্ষে কঠিন হইতেছে। ইউয়ানের দাম কমাইয়া চিন রফতানির বাজারে নিজেদের হারাইতে বসা আসন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করিতেছে। তাহাদের সুবিধা হইল, ডলারের সহিত ইউয়ানের দাম জোড়া দেওয়া নহে। ফলে, বিশ্ববাজারের তোয়াক্কা না করিয়াই পিপলস ব্যাঙ্ক অব চায়না ইউয়ানের দাম কমাইতে পারে। তবে, কাজটি যে অনন্ত কাল করিয়া চলা যায় না, তাহাতে অন্য দেশগুলিও মুদ্রার মূল্য হ্রাসের পথে হাঁটিবে, কথাটি চিনও বিলক্ষণ জানে। পর পর তিন দিন অবমূল্যায়নের পর ব্যাঙ্ক থামিয়াছে।

বিশ্ব-অর্থনীতিতে অবশ্য যে দোলাচল পড়িবার, পড়িয়াছে। ভারতের গায়েও জোর ধাক্কা লাগিয়াছে। ধাক্কাটি ঘটনাক্রমে উভমুখী। এক দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার দাম কমিয়াছে, ফলে আশঙ্কা, আমদানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী হইবে। কিন্তু, ইউয়ানের দাম কমিবার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনের রফতানির দাম আরও কমিবে। ফলে, ভারতীয় রফতানির চাহিদা কমিবে। অন্য দিকে, চিনের জিনিসের দাম কমায় সে দেশের বিপুল উৎপাদনক্ষমতার জোরে ভারতের বাজারেও চিনের পণ্যের বান ডাকিতে পারে। ইতিমধ্যেই ইস্পাত শিল্পে সেই আশঙ্কা তীব্রতর হইয়াছে। এক দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা হ্রাস পাওয়া, আর অন্য দিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও চিনের প্রতাপ বৃদ্ধির দ্বিমুখী চাপ ভারতীয় শিল্পমহলকে বিলক্ষণ আশঙ্কায় রাখিয়াছে। চিন যদি অন্যায্য ভাবে পণ্যের দাম কমাইয়া ভারতের বাজার দখল করিতে চাহে— পরিভাষায় যাহাকে ডাম্পিং বলা হয়— তবে তাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও হইতেছে।

ডাম্পিং আটকাইবার ব্যবস্থা করায় ক্ষতি নাই, কিন্তু চিনের আগ্রাসন হইতে বাঁচিতে নেহরু-ইন্দিরা যুগের বন্ধ দরজার অর্থনীতিতে প্রত্যাবর্তনের কথা ভাবিলে মুশকিল। ঘরে-বাহিরে চিনের সহিত প্রতিযোগিতাই ভারতের বাস্তব। তাহাকে অস্বীকার করিবার কোনও উপায় নাই। এই বিশ্বায়নের যুগে দরজা-জানালা বন্ধ করিয়া থাকিবারও উপায় নাই। ফলে, ভারতীয় শিল্পকে যদি টিকিতে হয়, তবে লড়াই করিয়াই বাঁচিতে হইবে। তাহার জন্য প্রথম কর্তব্য উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি। আজ চিন ইউয়ানের দাম কমাইয়াছে বলিয়া নহে, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় ভারত চিরকালই চিনের তুলনায় পিছাইয়া থাকে। তাহার প্রধানতম কারণ, ভারতে উৎপাদনশীলতা অতি নিম্ন স্তরের। আরও উৎপাদনশীল, আরও কুশলী হইয়া উঠা ভিন্ন উপায় নাই। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র স্লোগানটিকে যদি অর্থবহ করিয়া তুলিতে হয়, তবে শিল্পক্ষেত্রের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম লক্ষ্য হওয়া বিধেয়। তাহার জন্য যাহা কর্তব্য, করিতে হইবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy