Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

দ্বীপময় মোদী

পূর্ব চিন সাগর ও দক্ষিণ চিন সাগরের সহিত ভারত মহাসাগরের পার্থক্য অনেক। তন্মধ্যে একটি হইল, চিন সাগরে দ্বীপের অধিকার, নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা ও সমুদ্রগর্ভস্থ খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের দখল লইয়া চিনের সহিত তাহার ক্ষুদ্র ও দুর্বল প্রতিবেশীদের সকলেরই তীব্র সংঘাত চলিতেছে, অথচ ভারতের সহিত ভারত মহাসাগরস্থ রাষ্ট্র ও দ্বীপগুলির কোনও কাজিয়া নাই।

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৭
Share: Save:

পূর্ব চিন সাগর ও দক্ষিণ চিন সাগরের সহিত ভারত মহাসাগরের পার্থক্য অনেক। তন্মধ্যে একটি হইল, চিন সাগরে দ্বীপের অধিকার, নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা ও সমুদ্রগর্ভস্থ খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের দখল লইয়া চিনের সহিত তাহার ক্ষুদ্র ও দুর্বল প্রতিবেশীদের সকলেরই তীব্র সংঘাত চলিতেছে, অথচ ভারতের সহিত ভারত মহাসাগরস্থ রাষ্ট্র ও দ্বীপগুলির কোনও কাজিয়া নাই। ভারত মহাসাগরের একেবারে ভৌগোলিক কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও এবং ঐতিহাসিক ভাবে মহাসাগরীয় দেশ ও দ্বীপগুলির সহিত নিবিড় বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও জনবিন্যাসগত সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এত কাল দিল্লির তরফে সেই সম্পর্কের সদ্ব্যবহার করিয়া তাহাকে আরও নিশ্ছিদ্র করিয়া তোলার সক্রিয় প্রচেষ্টা সে ভাবে লক্ষিত হয় নাই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ নীতিতে ভারত মহাসাগরীয় প্রতিবেশীদের সহিত সুসম্পর্ক স্থাপনের স্পষ্ট তৎপরতা লক্ষ করা যাইতেছে। সেশেল্স, মরিশাস ও শ্রীলঙ্কায় তাঁহার পাঁচ দিনের সফরে তাহা প্রমাণিত।

প্রথমোক্ত দুই দ্বীপরাষ্ট্র ভারতকে তাহাদের বন্দর ও আস্ত দ্বীপ ব্যবহার করিতে দিবার জন্য কার্যত অপেক্ষায় ছিল। বিনিময়ে ভারতের সহিত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়ানো, ভারতীয় সাহায্যে নিজেদের পরিকাঠামো উন্নত করা, বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে নিরাপত্তার রক্ষাকবচ আদায় করিতেও তাহারা উৎসুকই ছিল। নয়াদিল্লিই মহাসাগরে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করিতে উদাসীন থাকিয়াছে। নরেন্দ্র মোদী প্রথম সুযোগেই এই দ্বীপরাষ্ট্রগুলিকে ভারতের নিরাপত্তা-ছাতার তলায় আশ্রয় দিয়া আশ্বস্ত করিয়াছেন। শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক, পরিকাঠামোগত, এমনকী পরমাণু শক্তি উৎপাদনের প্রযুক্তিতেও সাহায্যের আশ্বাস দিয়াছেন। বিনিময়ে সিংহলি-গরিষ্ঠতার দ্বীপরাষ্ট্রকে সংখ্যালঘু তামিল প্রদেশকে যুক্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবিন্যাসে শামিল করার পরামর্শও দিয়াছেন। এ জন্য শ্রীলঙ্কারই সংবিধানের ত্রয়োদশ অনুচ্ছেদ রূপায়ণের আর্জি এবং জাফনায় তাঁহার সফর উল্লেখযোগ্য। পক প্রণালী হইতে রুজি সন্ধান করা দুই দেশের মৎস্যজীবীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আপসে মিটাইতে স্থায়ী সূত্র উদ্ভাবনে জোর দিয়া প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি কাঁটা উপড়াইয়া ফেলিতে চাহিয়াছেন। শ্রীলঙ্কাকে ঘিরিয়া সমুদ্রপথ ব্যবহার করার ও সেই পথের নিরাপত্তা বিধানে নয়াদিল্লির তাগিদটিও তিনি কলম্বোকে বুঝাইয়া দিয়াছেন।

নরেন্দ্র মোদী দুই বাহিরের বৃহৎ শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন উভয়কেই বার্তা দিয়াছেন: ভারত মহাসাগর কেবল তাহার নামাঙ্কনের জন্য নয়, ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক ভাবেও ভারতকে ঘিরিয়াই আবর্তিত হইবে। ভারতই এই মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধানতম অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি। সেশেল্স ও মরিশাস সেই প্রাধান্য স্বীকার করিয়া লইয়াছে। শ্রীলঙ্কাও ক্রমশ উপলব্ধি করিতেছে, কাছের বন্ধুকে ফেলিয়া দূরের বণিককে কাছে টানার বিপদ। বেজিংয়ের মতো নয়াদিল্লির যে কোনও সামরিক উচ্চাশা বা নয়া-ঔপনিবেশিক অভিপ্রায় নাই, তাহা স্পষ্ট। ভারতীয় বংশোদ্ভবদের লইয়া গঠিত মহাসাগরীয় রাষ্ট্রগুলি ভারতীয় সংস্কৃতি, ধর্ম ও জীবনাচারের সহিত ঐতিহাসিক ভাবেই এত সম্পৃক্ত যে, তাহাদের উপর ভারতের ছত্রছায়ার নিশ্চয়তা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। নরেন্দ্র মোদী সংশ্লিষ্ট সকলকে সেটাই স্মরণ করাইয়া দিলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

anadabazar editorial Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy