কেন কূটনীতিকে দাবা খেলার সহিত তুলনা করা হয়, আমেরিকা চিন ও ভারতের টানাপড়েন তাহা চমত্কার বুঝাইয়া দিতেছে। অপ্রত্যাশিত চাল এবং সমান অপ্রত্যাশিত পাল্টা চাল অব্যাহত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দিল্লি সফরে দ্বিপাক্ষিক বিবৃতিতে পূর্ব এশিয়ায় ভারত-মার্কিন যৌথ ভূমিকার প্রসার ঘটাইবার এবং এই অঞ্চলে চিনের আগ্রাসী নীতিকে প্রতিহত করিবার প্রস্তাবে বেজিং বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানাইয়াছিল। সরল বুদ্ধিতে দেখিলে তাহা ছিল চিন-ভারত সম্পর্কে নূতন শৈত্যপ্রবাহের সংকেত। কিন্তু দাবা সরল বুদ্ধির খেলা নহে। সুতরাং ওবামা ভারত ছাড়িবার কয়েক দিনের মধ্যে সুষমা স্বরাজের বেজিং সফরে চিনা প্রেসিডেন্ট কেবল রীতি ভাঙিয়া ভারতের বিদেশমন্ত্রীর সহিত দেখা করিলেন না, নরেন্দ্র মোদীর মে মাসে চিন যাত্রা পাকা হইল ও বেজিং জানাইল, সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সংগঠনের (এপেক) মঞ্চে ভারতের ভূমিকা প্রসারিত হউক। তাহার অনতিকাল পরে শোনা গেল ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড বর্মার মন্তব্য: মোদী-ওবামা যুগ্ম বিবৃতি কখনওই চিনের প্রতিকূল নহে। পরের অঙ্কে চিনের ঘোষণা: রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদের জন্য ভারতের দাবিতে তাহার সমর্থন আছে। সরল বুদ্ধি বলিবে, শৈত্যপ্রবাহ নহে, নূতন উষ্ণতা। কিন্তু কূটনীতির চাল এখনও বাকি।
নরেন্দ্র মোদী বা তাঁহার উপদেষ্টারা হয়তো বলিবেন, ওবামার সফরের সুযোগে তাঁহারা যে আড়াই পা ফেলিয়াছেন, তাহাতেই বেজিং সতর্ক, চিন্তিতও, তাহারা এখন ভারতের আনুকূল্য চাহে। কথাটি ফেলিয়া দিবার নহে। অতীতেও দেখা গিয়াছে, চিনের নীতিকাররা শক্তের ভক্ত, দিল্লি ঈষত্ ফোঁস করিলে তাঁহারা মশলার কৌটা আগাইয়া দিয়াছেন। এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে চিন ও ভারতের সম্পর্ক মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতার। প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং শত্রুতা এক নহে, কিন্তু এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কেহই অন্যের আধিপত্য বিস্তার চাহিবে না। তবে চিন ভারত অপেক্ষা বহু যোজন অগ্রবর্তী এবং সেই অগ্রবর্তিতা রচিত হইয়াছে বিপুল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বাস্থ্যবান ভিত্তির উপর। এই সমৃদ্ধির সুবাদেই চিন ভারতের তুলনায় সামরিক শক্তিতে অনেক বেশি বলীয়ান। সুতরাং ভারতের পক্ষে চিনের সহিত সরাসরি সংঘাত না চাহিবার যথেষ্ট কারণ আছে।
কিন্তু অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে বলীয়ান হইলেও চিনের স্বার্থ ভারতের সহিত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানেরই অনুকূল। প্রথমত, চিনের আর্থিক অগ্রগতিতে, অবশেষে, ভাটার টান দেখা দিয়াছে। চিনা নেতারা দেশবাসীকে সাফ বলিয়াছেন, সম্মুখে কঠিন সময়। বেজিং ভারতের সহিত সংঘাত চাহে না, এমন অবস্থায় আরওই চাহিবে না। দ্বিতীয়ত, ওবামার বিদেশ নীতিতে এশিয়াকে বাড়তি গুরুত্ব দিবার পরিকল্পনা মূলত এই মহাদেশে চিনের আধিপত্য প্রতিহত করার লক্ষ্যেই। সেই ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় দিল্লি যদি ওয়াশিংটনের সহযোগী হয়, তাহা চিনের পক্ষে স্বস্তিদায়ক হইবে না। এই প্রেক্ষিতেই চিন ভারতের প্রতি আনুকূল্য দেখাইতেছে। কিন্তু চিনের সুভাষিতাবলিতে নরেন্দ্র মোদীর বিগলিত হইবার কোনও কারণ নাই। প্রবলতর প্রতিবেশীর স্বার্থপ্রণোদিত আনুকূল্যকে কাজে লাগাইয়া কী ভাবে ভারতের স্বার্থের প্রসার ঘটানো যায়, তাহাই দিল্লির পরীক্ষা। কূটনীতি প্রীতি-ফুটবল-ম্যাচ নহে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy