চাহিদা বাড়ন্ত। তাই বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের ( সেজ ) তকমা থাকা সত্ত্বেও রাজারহাটে তাদের ৫০ একর জমির পুরোটায় সেই সুবিধা নিতে চাইছে না শাপুরজি পালোনজি। বরং সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ওই তথ্যপ্রযুক্তি সেজের জমির অন্তত কিছুটা আবাসন, শপিং মল বা হোটেল তৈরির মতো বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করতে আগ্রহী তারা।
টাটা গোষ্ঠীর প্রধান অংশীদার ও ১৩৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই সংস্থা এ রাজ্যে স্রেফ তথ্যপ্রযুক্তি সেজের তকমায় লগ্নির ভবিষ্যৎ আটকে রাখতে নারাজ। কারণ, বিনিয়োগের খরায় ধুঁকতে থাকা পশ্চিমবঙ্গে ৫০ একরের বিশাল পরিকাঠামোয় ক্রেতা পাওয়া যে সহজ নয়,তা বিলক্ষণ জানে তারা। তাই চাহিদা-জোগানের অঙ্ক মেলাতে ওই জমি নিয়ে তাদের নতুন করে এই ভাবনা।
রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে লগ্নির ছবিটা ফুটে উঠেছে অফিস তৈরির জায়গার চাহিদা সংক্রান্ত হিসেবেই। রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞ সংস্থা কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ডস-এর পরিসংখ্যান বলছে, এ ক্ষেত্রে কলকাতায় গত ২০০৭-’০৮ সালে যেখানে চাহিদা ছিল ২৮ লক্ষ বর্গ ফুট, সেখানে ২০১৪ সালে তা নেমেছে ১০ লক্ষ বর্গ ফুটে। অথচ বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ ও পুণের মতো শহরে চাহিদা তুলনায় ১০-১২ গুণ বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এই বাস্তব উপলব্ধি করেই এ বার ৫০ একর জমির কিছু অংশের সেজ তকমা ঝেড়ে ফেলার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানাতে পারে শাপুরজিরা। এমনকী সেজের দৌলতে করছাড়-সহ যে সব আর্থিক সুবিধা মিলেছে, সেগুলি ফিরিয়েই সেখানে জমির পরিমাণ কমাতে রাজি তারা। তথ্যপ্রযুক্তি সেজ-এর তকমার জন্য ন্যূনতম ১০ লক্ষ বর্গ ফুট অফিসের জায়গা তৈরি করে দিতে হয়। সংস্থার এক মুখপাত্রের অবশ্য দাবি, সেজের আংশিক জমিতে বাণিজ্যিক ব্যবহারের পরিকল্পনা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২০ হাজার ফ্ল্যাটের আবাসন প্রকল্প নিয়ে এ রাজ্যে প্রথম পা রেখেছিল টাটা সন্সের সবচেয়ে বেশি শেয়ার যার হাতে, সেই সংস্থা শাপুরজি পালোনজি। মূলত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য ওই প্রকল্প তৈরি করার শর্তে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে রাজারহাটে জমি পেয়েছিল তারা। ১৫০ একরের উপরে ওই আবাসন প্রকল্পে প্রায় আট হাজার ফ্ল্যাট ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। সরকারি সূত্রে খবর, ২,৭০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে বিনিয়োগের বদলেই ৫০ একর জমি সেজ হিসেবে পায় এই নির্মাণ সংস্থা।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, লাভের যে অঙ্ক কষে এ রাজ্যে লগ্নিতে ঝাঁপিয়েছিল মুম্বইয়ের ভিটি স্টেশন, তাজ হোটেল ও ওমানের সুলতানের প্রাসাদ নির্মাণকারী শাপুরজি পালোনজি, এখানকার শিল্প পরিস্থিতি তা বদলে দেয়। উৎপাদন-সহ বিভিন্ন ভারী শিল্পে লগ্নির খরা ছিলই। তার সঙ্গে যোগ হয় জমি অধিগ্রহণ, জমির ঊর্দ্ধসীমা ও সেজ নিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকারের বিরূপ মনোভাব। জাতীয় স্তরের এক বণিকসভার কর্তার দাবি, এই শিল্পবিরোধী অবস্থান প্রভাব ফেলেছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পেও। ফলে ৫০ একর জমির তথ্যপ্রযুক্তি সেজ তকমা থাকলেও, তার চাহিদা নিয়ে সংস্থার অন্দরে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে।
অন্য দিকে, সেজ নিয়ে শাসক দলের নীতির জটে আটকে গিয়েছে ইনফোসিসের লগ্নিও। ১,০০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ও প্রায় ২০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ রাজ্যের হাতছাড়া হতে বসেছে। সেজ তকমা না-পাওয়ায় তারা এ রাজ্যে ক্যাম্পাস তৈরির কাজ শুরু করেনি। সমস্যার অন্যতম রফাসূত্র হিসেবে রাজারহাটে শাপুরজি পালোনজি গোষ্ঠীর সেজ-এ ইনফোসিসের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার কথাও ভেবেছিল রাজ্য। কিন্তু দু’টি সংস্থার বাণিজ্যিক কৌশলে মিল না-হওয়ায় প্রস্তাব ভেস্তে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy