গাজ়ার সব হাসপাতালই কার্যত কাজ করা বন্ধ করে দিল। —ফাইল চিত্র।
গাজ়া স্ট্রিপের সব হাসপাতালই আজ কার্যত কাজ করা বন্ধ করে দিল।
দু’দিন আগে গাজ়ার সব চেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় বিদ্যুতের অভাবে ইনকিউবেটরের ভিতরে মৃত্যু হয় একটি সদ্যোজাত শিশুর। নিওনেটাল কেয়ার
ইউনিটে প্রাণ হারায় আরও তিনটি শিশু। সেই আতঙ্ক কাটতে না কাটতে গাজ়ার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রক আজ ঘোষণা করল, গাজ়া স্ট্রিপের সব হাসপাতাল কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। সংস্থার প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘হাসপাতালও আর নিরাপদ নেই। মৃত্যুস্থল, ধ্বংসস্তূপ, হতাশার চিহ্ন হয়ে উঠেছে। গোটা বিশ্ব চুপচাপ এই দৃশ্য দেখে যেতে পারে না।’
গাজ়ার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা মেডিক্যাল কলেজ। গেব্রিয়েসাস লিখেছেন, ‘তিন দিন হয়ে গেল আল-শিফা হাসপাতালে বিদ্যুৎ নেই। জল নেই। ইন্টারনেট সংযোগ খুব খারাপ। জরুরি পরিষেবা দেওয়ার কোনও ব্যবস্থাই নেই। একটানা গুলি চলছে, গোলাবর্ষণ হচ্ছে এই অঞ্চলে। রোগীমৃত্যু ক্রমেই বাড়ছে। হাসপাতাল আর হাসপাতাল নেই...।’
বিদ্যুতের অভাবে এ পর্যন্ত আল-শিফায় অন্তত ছ’টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তা ছাড়া আরও ন’জন রোগী মারা গিয়েছেন। আল-কোয়াদ হাসপাতাল জেনারেটরের জ্বালানির অভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। অন্য হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা সামগ্রীও বাড়ন্ত। আল-শিফার এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, অপরিণত অবস্থায় জন্মানো শিশুগুলিকে বাঁচানোর জন্য ফয়েলে জড়িয়ে গরম জলের পাশে রাখা হচ্ছে। অক্সিজ়েন সিলিন্ডারও ফুরিয়ে গিয়েছে এই হাসপাতালে। চিকিৎসক মহম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, ‘‘মাঝেমাঝে
আমি ওদের সঙ্গে থাকছি। ইনকিউবেটরে রাখা যাচ্ছে না। তাই ফয়েলে জড়িয়ে গরম জলের পাশে রাখছি। তাতে কিছুটা উত্তাপ পাচ্ছে।’’
ইজ়রায়েলের দাবি, হাসপাতালগুলোকে ঘাঁটি করেছে হামাস। সাধারণ মানুষকে ‘মানব-বর্ম’ হিসেবে ব্যবহার করছে। তার জন্যই এই অবস্থা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আজ ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে হামাসকেই কাঠগড়ায় তুলেছে। তাদেরও দাবি, পরোক্ষে হামাসের জন্য গাজ়ায় এত লোক প্রাণ হারাচ্ছেন। হাসপাতাল ও সাধারণ মানুষকে ‘বর্ম’ করার জন্য হামাসের সমালোচনা করেছে তারা। তবে একই সঙ্গে ইজ়রায়েলের কাছে তাদের অনুরোধ, হতাহতের সংখ্যা যথাসম্ভব কমানোর চেষ্টা করতে হবে। ইইউ-এর বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের কমিশনার জ্যানেজ় লেনারসিস জানিয়েছেন, মানুষের মুখ চেয়ে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্যালেস্টাইনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনআরডব্লিউএ’ জানিয়েছে, জ্বালানির যা অবস্থা, তাতে আর বড়জোর দু’দিন তারা পরিষেবা দিতে পারবে গাজ়ায়। ইজ়রায়েলি বোমা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না তাদের কর্মীরাও। এ পর্যন্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের ১০১ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রাণ হারিয়েছেন। আজ জেনিভায় রাষ্ট্রপুঞ্জের দফতরে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এক মিনিট নীরবতা পালনও করা হয়।
ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের যুদ্ধবিমানের হামলায় হামাসের যে কম্যান্ডার নিহত হয়েছে, সেই আহমেদ সিয়াম ওদের ‘অপরাধের’ অন্যতম উদাহরণ। অভিযোগ, সে কমপক্ষে ১০০০ জন সাধারণ মানুষ ও রোগীকে বন্দি করে রেখেছিল। উত্তর গাজ়ায় উদ্ধারকাজেও বাধা দেয় সে। এক্স হ্যান্ডলে আইডিএফ লিখেছে, ‘হামাস কী ভাবে সাধারণ মানুষকে ঢাল করে গাজ়ায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে, তার অন্যতম উদাহরণ তাদের নাসের রাদওয়ান কম্পানির কম্যান্ডার সিয়াম।’