Donald Trump Volodymyr Zelenskyy Clash

কোন খনিজ চুক্তি ভেস্তে গেল জ়েলেনস্কির সঙ্গে? কী লাভ হত আমেরিকার, ইউক্রেনই বা কী পেত

আমেরিকা এবং ইউক্রেনের মধ্যে বিশেষ খনিজ চুক্তি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই কথাবার্তা চলছিল। চুক্তিতে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু শুক্রবারের বৈঠকে সেই চুক্তি ভেস্তে গিয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৫ ১৩:৩০
mineral deal and why was it important for Donald Trump and Volodymyr Zelenskyy

হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি।

খনিজ চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আমেরিকায় গিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। বরং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় তাঁর। শেষে জ়েলেনস্কি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। ইউক্রেনের প্রতিনিধিদেরও বেরিয়ে যেতে বলা হয়। আমেরিকা ছেড়ে শুক্রবারই ইউক্রেনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন জ়েলেনস্কি।

Advertisement

আমেরিকা এবং ইউক্রেনের মধ্যে বিশেষ খনিজ চুক্তি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই কথাবার্তা চলছিল। জ়েলেনস্কিই এই চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাতে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন ট্রাম্প। ইউক্রেনে কিছু বিরল খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। সেই খনির দিকে আমেরিকার নজর রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, বিনা বাধায় সেই খনি ব্যবহারের অনুমতি পাওয়ার কথা ছিল আমেরিকার। ট্রাম্প সেই কারণেই এই চুক্তিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। শুক্রবারই হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এই চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল জ়েলেনস্কির।

আমেরিকাকে বিরল খনিজ ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে তার বদলে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন জ়েলেনস্কি। জো বাইডেনের আমলে ইউক্রেনের দিকে আমেরিকা যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বার বারই নিজের নানা আচরণে ট্রাম্প একটা কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন— কোনও স্বেচ্ছাসেবায় তিনি আগ্রহী নন। আমেরিকা লাভবান হবে, এমন চুক্তি বা সমঝোতাতেই তিনি আগ্রহী। জ়েলেনস্কি সে কথা ভেবেই খনিজ চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু চুক্তির শর্তে দুই দেশ শেষ পর্যন্ত একমত হতে পারেনি। জ়েলেনস্কির অভিযোগ, ট্রাম্প কেবল খনিজেই আগ্রহী। ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও পরিকল্পনা নেই তাঁর। বরং তিনি রাশিয়ার সঙ্গে হাত মেলাতেও প্রস্তুত!

নিজের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ট্রাম্পও বিশেষ রাখঢাক করেননি। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ইউরোপের। আমেরিকার কিছু সেনাবাহিনী ওই দেশে রয়েছে। তার জন্য যতটা নিরাপত্তা প্রদান সম্ভব, ট্রাম্প তার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তার বেশি কিছু যে তিনি করতে চান না, তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। রাশিয়ার সঙ্গে বা ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়ে আপস না-করা নিয়ে অনড় জ়েলেনস্কি তাই ট্রাম্পের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। সেই কারণেই ভেস্তে গেল খনিজ চুক্তি।

কী কী বলা হয়েছিল খনিজ চুক্তির শর্তে?

  • খনিজ চুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেনের পুনর্গঠনের স্বার্থে একটি বিনিয়োগ তহবিল গড়ে তোলা হবে। কিভ এবং ওয়াশিংটন এই তহবিল সমান ভাবে পরিচালনা করবে।
  • ইউক্রেনের রাষ্ট্রায়ত্ত খনি থেকে যা উত্তোলন করা হবে, তার ৫০ শতাংশ এই তহবিলে জমা দেবেন জ়েলেনস্কি। ইউক্রেনের নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের স্বার্থে সেই তহবিলে বিনিয়োগ করা হবে।
  • ইউক্রেনের আর্থিক অগ্রগতি এবং স্থিতাবস্থার প্রতি আমেরিকা দায়বদ্ধ থাকবে। আমেরিকার এই অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হবে।
  • ইউক্রেনের খনি ব্যবহার করতে পারবে আমেরিকা। যুগ্ম তহবিলের অধিকাংশ আমেরিকার মালিকানাধীন থাকবে।

এই শর্তাবলির সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে পারেননি ট্রাম্প বা জ়েলেনস্কি। আমেরিকা ৫০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের খনিজ চেয়ে পাঠিয়েছিল ইউক্রেনের কাছে। জ়েলেনস্কি সেই আবেদন খারিজ করে দেন। মঙ্গলবার ট্রাম্প জানান, আমেরিকা ৩০ হাজার কোটি ডলার অর্থসাহায্য করেছে ইউক্রেনকে। এ বার খনিজ চুক্তির মাধ্যমে সেই টাকা তিনি ফেরত নিতে চান। বস্তুত, ইউক্রেনের সঙ্গে এই খনিজ চুক্তিকে ট্রাম্প অন্য ভাবে দেখছেন। তিনি প্রকাশ্যেই দাবি করেছেন, বছরের পর বছর ধরে আমেরিকার করদাতাদের টাকা ইউক্রেনে গিয়েছে। এ বার ইউক্রেনের দায়িত্ব ইউরোপের অন্য দেশগুলিকে নিতে হবে। ইউক্রেনের খনিজের মাধ্যমে আমেরিকা সেই টাকা ফেরত নেবে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না-হলে খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর করবেন না, সাফ জানিয়ে দেন জ়েলেনস্কি। সে ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধও বন্ধ হবে না। নিরাপত্তা এবং আমেরিকার সাহায্যের বিষয়ে পাকা কথা চেয়েছিলেন জ়েলেনস্কি। তা না-পাওয়ায় শুক্রবারের বৈঠক ভেস্তে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।

কী কী খনিজ আছে ইউক্রেনে

কিভের দাবি, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থগুলির পাঁচ শতাংশ ইউক্রেনে আছে। ১.৯০ কোটি টন গ্রাফাইটের মালিক ইউক্রেন, যা সারা বিশ্বের মোট সঞ্চয়ের ছয় শতাংশ। এই ধাতু বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যাটারি তৈরিতে অপরিহার্য। এ ছাড়াও ইউক্রেনে আছে প্রচুর পরিমাণ টাইটানিয়াম (বিশ্ব সঞ্চয়ের এক শতাংশ) এবং লিথিয়াম বিশ্ব সঞ্চয়ের এক থেকে দুই শতাংশ)। রয়েছে ইউরেনিয়াম (বিশ্ব সঞ্চয়ের দুই থেকে চার শতাংশ)। অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের (রেয়ার আর্থ মিনারেল) খনি জ়েলেনস্কির দেশ। তবে যুদ্ধের কারণে এই খনিগুলিতে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া এই খনিগুলির অনেকটা অংশ গায়ের জোরে দখল করে নিয়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন